ঢাকা , রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫ , ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
অবৈধ প্রক্রিয়ায় মেশিন কিনে কোটি টাকার বাণিজ্য ঝিনাইদহে সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতি নির্বাচনের পর ব্যবসা বাণিজ্যে গতি আসবে হালদার বালু উত্তোলনে বাধা দেওয়ায় হামলা গাজীপুরে ফ্ল্যাট থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাসে আগুন স্কয়ার কোম্পানির প্রাণী খাদ্যে ওষুধ প্রতারণা নড়াইল সদরের সাবেক পিআইও’র বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ ৬ হাজার মোটরসাইকেল নিয়ে জামায়াতের এমপি প্রার্থীর শোডাউন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি উদ্বোধন সাধারণ মানুষের বোধগম্য করে গণভোটের দাবি রিজভীর সৎ মানুষদের রাজনীতিতে ক্যারিয়ার গড়ার আহ্বান জ্বালানি উপদেষ্টার সরকারি এলপিজি গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি বিইআরসি দ্রুত বাড়ছে আমদানি ব্যয় এই সরকার দিয়ে কোনো অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়-ডা. তাহের লাখো মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে যারা ধর্মের নামে রাজনীতির ব্যবসা করে, তাদের হাতে নারীরা নির্যাতিত-সালাহউদ্দিন আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না-প্রধান উপদেষ্টা নারীদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়নের চিন্তা করলে ভুল হবে : সেনাপ্রধান নির্বাচনকালীন ডিসি নিয়োগ
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট

অবৈধ প্রক্রিয়ায় মেশিন কিনে কোটি টাকার বাণিজ্য

  • আপলোড সময় : ১৬-১১-২০২৫ ১০:৪৪:৩৪ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৬-১১-২০২৫ ১০:৪৪:৩৪ পূর্বাহ্ন
অবৈধ প্রক্রিয়ায় মেশিন কিনে কোটি টাকার বাণিজ্য
* ডা. একরামুল রেজার আপন ভাইয়ের কোম্পানির মেশিন ক্রয় * রিএজেন্ট বাণিজ্যে কোটি টাকার হাতিয়ে নেওয়ার টার্গেট * অবৈধ পক্রিয়ায় সায় আছে পরিচালকের, দিচ্ছেন শেল্টার * সম্মত নয় বিশেষজ্ঞ কমিটি এবং ৪ বিভাগীয় প্রধান দেশের হৃদরোগীদের জন্য টার্শিয়ারি লেভেলের একমাত্র সরকারি হাসপাতাল জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা জিম্মি গুটিকয়েক চিকিৎসকের হাতে। দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, দখলদারিত্ব ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে সমালোচনায় প্রতিষ্ঠানটির জুনিয়র কনসাল্টেন্ট ডা. একরামুল রেজা টিপু। জুনিয়র এই ডাক্তারকে আবাসিক চিকিৎসক (আরপি) দায়িত্ব দেওয়ার পর হয়ে উঠেছেন বেপরোয়া। দীর্ঘদিনের নিয়ম ভেঙ্গে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজ ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান থেকে রাতের আঁধারে নিয়েছেন ৮ টি মেশিন। এগুলোকে বৈধ করতে সক্রিয় পরিচালকসহ একটি স্বার্থান্বেষী সিন্ডিকেট। শুধু তাই নয়, প্রশাসনের প্রশ্রয়ে একরামুল রেজা নিয়মের তোয়াক্কা না করে রুম দখল, রোগী ভাগিয়ে নেওয়া,সহকর্মী চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের সঙ্গে তার দুর্ব্যবহার নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত করেছেন। অপ্রতিরোধ্য ডা. একরামুল রেজা টিপু ২০২৪ সালের অক্টোবরে জুনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে যোগ দেন। ৩১ ডিসেম্বর পরিচালকের স্বাক্ষরে আবাসিক চিকিৎসক (আরপি) হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পান তিনি। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই সহকর্মী চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে আসছেন। ২১ জুলাই এক ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগে তাকে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়। যোগদান না করেই পরিচালকের প্রভাবে মাত্র সাত দিন পরেই বদলির আদেশ বাতিল করাতে সক্ষম হন তিনি। হাসপাতালের বহির্বিভাগের ১০১ নম্বর কক্ষে তার অফিস থাকলেও রোগী দেখেন না। রোগীদের চিকিৎসা দেন অন্য মেডিকেল অফিসাররা। ডা. একরামুল রেজা ব্যস্ত থাকেন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেনদরবারে।এদিকে হাসপাতালের সামনেই একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তিনি নিয়মিত প্রাইভেট প্রাকটিস করেন। প্রতিদিন সকালে তার পিয়ন সবুজ ইনস্টিটিউট থেকে রোগী ‘ভাগিয়ে’ ওই চেম্বারে নেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি জানান, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে ডা. একরামুল রেজা নিয়মিত মোটা অঙ্কের টাকা নেন। এমনকি বিদেশ ভ্রমণের খরচও তাদের বহন করতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারি আদেশ ও প্রতিষ্ঠানের ছুটির তারিখ বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, চলতি বছরে ভুটান ও থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেছেন একরামুল রেজা। ১৭/০৬/২০২৫ থেকে ১৯/০৬/২০২৫ তারিখ তিনি ভুটান এবং ০৩/১০/২০২৫ থেকে ০৫/১০/২০২৫ তারিখে থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেন।এনাটমি বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আসাদ হোসেন সম্প্রতি অবসর নেওয়ার পর দক্ষিণ ব্লকের ২৪৫ নম্বর কক্ষটি জবর দখল করেছেন ডা. একরামুল রেজা। অথচ তার নামে বরাদ্দ রয়েছে বহির্বিভাগের ১০১ নম্বর কক্ষ। অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, “আমি এখানে আবাসিক চিকিৎসক, আমার কাজটাই করি। ডা. একরামুলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুল্লাহ আল মুয়ীদ খান। অভিযোগ রয়েছে, দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরও তিনি প্যাথলজি বিভাগের প্রধানের কক্ষ দখল করে আছেন। সহকর্মীদের অভিযোগ, একরামুল রেজার অনিয়মে তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছেন। *বিষয়টি জানতে চাইলে ডা. মুয়ীদ বলেন, “আমি আর ওই দায়িত্বে নেই, তাই এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। অন্যদিকে চলতি বছরের আগস্টে রাতের আধারে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের প্যাথলজি বিভাগে এবিসি করপোরেশন নামের প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আটটি মেশিন আসে। এগুলো পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট কমিটির অনুমোদন ছাড়াই নেওয়ায় তৎকালিন বিভাগীয় প্রধান ডা. আব্দুল্লাহ আল মুয়ীদ খানকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যান আরপি একরামুল রেজা। অভিযোগ রয়েছে, এই প্রক্রিয়ায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন ডা. একরামুল রেজা টিপু। এবিসি করপোরেশনের বিপণন কর্মকর্তা আহসানুল রেজা তার আপন ভাই। পারিবারিক সম্পর্কের সূত্রে তারা হাসপাতালের সরঞ্জাম ও রিএজেন্ট সরবরাহ ব্যবসায় প্রভাব বিস্তার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতাল প্রশাসন এই অননুমোদিত মেশিন নিয়ে এখন দ্বিধায়। গ্রহণ করলে নতুন অনিয়মের অভিযোগ, আর না নিলে ‘উচ্চমহলের’ অসন্তুষ্টি। সূত্র জানায়, হাসপাতাল প্রশাসন সব জানলেও কার্যত অন্যায়কে বৈধতাদানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। পরিচালক এসব মেশিন গ্রহণ হয়েছে কি হয়নি, উল্লেখ না করে বরং এমন কয়েকটি মেশিন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন বিভাগীয় প্রধানদের কছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী চার বিভাগের প্রধানকে একটি চিঠি দেন। এতে তিনি লেখেন, ‘বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অনুদানের জন্য নিম্নোক্ত মেশিনসমূহের প্রস্তাবনা রয়েছে— সিসম্যাক্স- এক্সএন-১০০০ (সেল সেন্টার), মাইন্ডরে-বিসি-৭৬০ (সেল কাউন্টার), মাইন্ডরে সি১-২৬০০আই (অটোইমিউনোকেমিস্ট্রি অ্যান্ড বায়েকেমিস্ট্রি অ্যানালাইজার), কোয়াট্রন এক্স (পিটি-আইএনআর/এপিটিটি অ্যানালাইজার), ওয়ানডফো-ফাইন কেয়ার থ্রি প্লাস -মডেল এসিসিআরই ৮ (এইচবিএ১সি+ডি-ডাইমার অ্যানালাইজার/সিএলআই অ্যানালাইজার), এসটি-১০০ (ইলেক্ট্রোলাইট অ্যানালাইজার), ম্যাগলুমি-স্নাইব ৮০০ (ফুলি অটোমেটেড কেমিলুমিনেসেন্স ইমিউনোঅ্যাসে অ্যানালাইজার) এবং মাইন্ডরে (ইউরিন আর/এম/ই অ্যানালাইজার)। আপনার বিভাগে উল্লেখিত মেশিনসমূহের প্রয়োজনীয়তা আছে কি না আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’বিভাগীয় প্রধানরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন চলমান কার্যপরিধি বিবেচনায় এসব মেশিনের প্রয়োজন নেই। তারপরও বিষয়টি বিবেচনা করতে কমিটিতে পাঠান পরিচালক। সংশ্লিষ্ট কমিটিও এসব মেশিন নেওয়ার প্রয়োজনীয় নেই উল্লেখ করে প্রতিবেদন দেয়। এরপরও অবৈধ মেশিনগুলো হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে পড়ে আছে। এগুলো বের করে দেওয়ার পরিবর্তে নেওয়ার ধান্ধায় সক্রিয় সিন্ডিকেট।সূত্র জানায়, মূলত রেজা সিন্ডিকেট এখন কার্যত হাসপাতালে “রাজত্ব” করছে। তাদের প্রভাবের কারণে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এখানে নিয়ম মেনে কাজ করতে গেলে অপমানিত হতে হয়।; অনিয়ম করলেই পুরস্কৃত হয়। দেশের হৃদরোগ চিকিৎসার কেন্দ্রবিন্দু এই প্রতিষ্ঠান এখন বিতর্কের ঘূর্ণিতে। যেখানে রোগীসেবা, গবেষণা ও জাতীয় স্বার্থ প্রাধান্য পাওয়ার কথা, সেখানে জায়গা নিচ্ছে ক্ষমতার দাপট, ব্যক্তিগত লাভ আর প্রশাসনিক উদাসীনতা।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স