নড়াইল সদরের সাবেক পিআইও’র বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ
নড়াইল থেকে ফিরে শেখ দিনু আহমেদ
নড়াইল সদরের সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নাসরিন সুলতানার বিরুদ্ধে প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে কোটি কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৪ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে তিনি এই হরিলুট করেন।
জানা গেছে, পিআইও নাসরিন সুলতানা ২০১৯ সালে নড়াইল সদরে যোগদানের পর থেকে নিজের আখের গোছাতে শুরু করেন। তিনি সাবেক এমপি মাশরাফি বিন মুর্তজার পিতা গোলাম মুর্তজা স্বপনের সাথে পরস্পর যোগসাজশে জাল পিআইসি ও ভুয়া মাস্টাররোল তৈরি করে নামমাত্র কাজ করে বিভিন্ন প্রকল্প থেকে কোটি কোটি টাকা লোপাট করেন। টিআর,কাবিখা, কাবিটা, জিআর, ইজিপিটিসহ বিভিন্ন গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের নামমাত্র কাজ করে তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লুটে নেন। লুটপাটের এই অর্থের একটি অংশ নিতেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক আনজুআরা বেগম। সরেজমিন অনুসন্ধানকালে ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিগত ৪ বছরে বাস্তবায়িত বেশির ভাগ প্রকল্পের হদিস পাওয়া যায়নি। জাল পিআইসি ও ভুয়া মাস্টাররোল তৈরি করে বিভিন্ন প্রকল্পের বড় অংকের টাকা আত্মসাৎ করা হয়। নড়াইল সদরের তুলারামপুরের জনৈক মিজান, চারিখাদা গ্রামের সাজ্জাদ ও আজবাহার, দক্ষিণ নড়াইলের জাহিদ ও নিলু খান, জেলা পরিষদের সদস্য খোকন সাহা, শাহাবাদের পান্না, হবখালির টিপু, আলাদাতপুরের রিক্তা, দুর্গাপুরের দলিল লেখক আনিস, ভওয়াখালীর কাহার আলম, আওড়িয়া গ্রামের পলাশ, চন্ডিবারপুরের আজিজ ভূইয়া,
ছাত্রলীগের সভাপতি মুকুল, সিংগাশোলপুরের তৎকালীন চেয়ারম্যান, সলুয়ার রফিকুল ও হুসাইন, তারাশীর আতাউর, রামেশ্বরপুরের জিহাদুল,বোড়ামারা গ্রামের মুকুল শরীফসহ অগণিত ব্যক্তির নামে জাল পিআইসি ও ভুয়া মাস্টাররোল তৈরি করে প্রকল্পের নামমাত্র কাজ করে সিংহভাগ অর্থ লোপাট করেন পিআইও নাসরিন সুলতানা। স্থানীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শুধু তাই নয়, আশ্রায়ন প্রকল্প ও ৪০ দিনের কর্মসূচি থেকেও দুর্নীতির মাধ্যমে বড় অংকের টাকা লোপাট করেন তিনি। নড়াইল সদরে ও কালিয়া উপজেলায় সরকারি ডিজাইন বহির্ভূত আশ্রায়ন প্রকল্পের অধীনে নিম্নমানের ঘর তৈরি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট করা হয়। নড়াইল সদরে ও একই সাথে কালিয়া উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকালেও অফিস সহকারি ওয়ালিয়ার রহমানের সহযোগিতায় একই কায়দায় হরিলুট করেন তিনি। সূত্র জানায়, নড়াইলের তৎকালীন প্রভাবশালী এমপি মাশরাফি বিন মুর্তজার চেষ্টায় তখন শত কোটি টাকা বরাদ্দ আসে সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে, যার সিংহভাগ অর্থ লোপাট করা হয়েছে। ফলে মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধান করে টিআর,কাবিখা, কাবিটা, জিআর, ইজিপিটিসহ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে স্বচ্ছতা পাওয়া যায়নি। এদিকে দুর্নীতির মাধ্যমে লোপাটকৃত এসব অর্থ দিয়ে পিআইও নাসরিন সুলতানা নামে- বেনামে বরিশাল ও ঢাকায় জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অঢেল সম্পদ গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় সূত্রগুলো দাবি করেছেন,দুদক সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করলে এসব দুর্নীতির সত্যতা মেলবে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত পিআইও নাসরিন সুলতানার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নড়াইল থাকাকালে এসব নিয়ে কিছু হলো না,আর এখন কেনো আপনারা এসব নিয়ে টানাহেঁচড়া করছেন ? পিআইও নাসরিন সুলতানা বর্তমানে যশোরের কেশবপুর উপজেলায় কর্মরত আছেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ