আর্থিক চাপে দিশেহারা অবস্থায় সরকার। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরুতে কৃচ্ছ্রসাধনের ঘোষণা দিলেও সরকার বাস্তবে তা করতে পারছে না। বরং সরকারি ব্যয় খাতে লাগাম টানতে না পারায় সরকারের ওপর আর্থিক চাপ বেড়েছে। একদিকে বাড়ছে ভর্তুকির চাপ, অন্যদিকে সরকারি কর্মচারীদের দেয়া হচ্ছে মহার্ঘ ভাতা। এর সঙ্গে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির চাপও যুক্ত হয়েছে। তাছাড়া প্রায় দ্বিগুণ হতে চলেছে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপও। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পুননির্ধারণ করা হচ্ছে সরকারের ব্যয়ের অগ্রাধিকার খাত। কোন কোন খাতে সাশ্রয় করা সম্ভব তা চিহ্নিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি আরো ছোট করা হচ্ছে উন্নয়ন বাজেটের পরিধি। আর্থিক খাতের সংস্কার, অতিরিক্ত আর্থিক চাপ, নির্বাচন, অর্থের জোগানের চাপ, সম্ভাব্য সাশ্রয় উপযোগী খাত চিহ্নিতকরণ এবং কৃচ্ছ্রসাধন নীতি কঠোরভাবে পরিপালনের জন্য সংশোধন করা হচ্ছে আগাম বাজেট। অর্থ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সামনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করা হয়েছে। তাছাড়া কিনতে হচ্ছে নির্বাচনি সরঞ্জাম। বাড়াতে হয়েছে পুলিশের ঝুঁকি ভাতা। পাশাপাশি অতীত সরকারের নেয়া বিভিন্ন ঋণের সুদ আসল পরিশোধের চাপ তো আছেই। ফলে আর্থিক চাপে একরকম দিশাহারা হয়ে পড়েছে সরকার। যদিও চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রাজস্ব আদায়ে বেশ অগ্রগতি দেখা গেছে। কিন্তু তা আর্থিক চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়। সেজন্য আগামী বাজেট সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, খরচে লাগাম টানতে সরকারি ব্যয়ের লক্ষ্য কমানোর কৌশল নিলে বাস্তবে তা হচ্ছে না। বরং আরো বাড়াতে হচ্ছে ব্যয়ের লক্ষ্য। যদিও উন্নয়ন বাজেট উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা হয়েছে। বাধ্য হয়ে তার ওপর আরো ছুরি চালাতে যাচ্ছে অর্থ উপদেষ্টা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা। আগামাী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হলে তার জন্য প্রয়োজন হবে অতিরিক্ত অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকার। আবার সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন পে-স্কেল ঘোষণার কাজও চলমান। এমন পরিস্থিতিতে নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর মার্চের দিকে বাজেট সংশোধন করা হলেও এ বছর অন্তত তার তিন মাস আগেই ডিসেম্বরের মধ্যে বাজেট সংশোধন করা হবে। ইতিমধ্যে ওই কাজ মন্ত্রণালয়গুলো শুরুও করেছে। চলতি অর্থবছরে মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাবদ ৪৩ হাজার ৫৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আর ভাতায় ৪১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। মোট বেতন-ভাতা খাতে বরাদ্দ ৮৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। কিন্তু সরকারি চাকুদের কিছু বাড়তি আর্থিক সুবিধা দেয়ার কারণে বেতন-ভাতা খাতের বরাদ্দ আরো বাড়াতে হবে। গত জুলাই থেকে সরকারি কর্মচারীদের মূল বেতনের ওপর গ্রেড-১ থেকে ৯ পর্যন্ত ১০ শতাংশ এবং গ্রেড-১০ থেকে ২০ পর্যন্ত ১৫ শতাংশ হারে বিশেষ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। আর গত জুলাই থেকে পুলিশ সদস্যদের ঝুঁকি ভাতা ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। যা অতিরিক্ত ১০০ কোটি টাকার ব্যয় বাড়াবে। একই সময়ে ১ হাজার ৫১৯টি মাদরাসা এমপিওভুক্ত করা হয়েছে এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে। জাতীয়করণের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষকদের আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। তাছাড়া সরকারি কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ভাতাও সমপ্রতি দ্বিগুণ করা হয়েছে। বিদেশি মিশনে কর্মরতদের বৈদেশিক ভাতা ২০ থেকে ৩৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া বিদ্যুৎ খাতের বকেয়া ভর্তুকি হিসেবে ৬২ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। আর বকেয়া ঋণ পরিশোধের চাপ তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে সরকারের ওপর প্রতিনিয়তই বাড়ছে আর্থিক চাপ।
এদিকে এ প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ডিসেম্বরেই বাজেট সংশোধন জরুরি হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ খাতের বকেয়া ভর্তুকির ৬২ হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। অন্যান্য বকেয়াও পরিশোধ চলছে। তবে নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও সরকারি কর্মচারীদের সুবিধা বৃদ্ধির কারণে খরচ বেড়ে গেছে, যা সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তাছাড়া সামনেই নির্বাচন। সেজন্য ডিসেম্বরেই বাজেট সংশোধন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
আর্থিক চাপে দিশাহারা সরকার
- আপলোড সময় : ১৪-১১-২০২৫ ১২:১০:০৯ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৪-১১-২০২৫ ১২:১০:০৯ পূর্বাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
স্টাফ রিপোর্টার