গোয়েন্দা প্রতিবেদন
২৮ হাজার ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ আসতে পারে অবৈধ অস্ত্র
- আপলোড সময় : ১১-১১-২০২৫ ০২:৪৭:১০ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১১-১১-২০২৫ ০২:৪৭:১০ অপরাহ্ন
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যেখানে সারা দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা হবে ৪২ হাজার ৭৬১টি। তবে এসব ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৮ হাজার ২২৬ টি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এবং ২০ হাজার ৪৩৭টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে গোয়েন্দা সংস্থা এসবি (স্পেশাল ব্রাঞ্চ)। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ইসির অনুষ্ঠিত বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এই তথ্য জানা যায়। পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো চিহ্নিত করে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান, দেশের ৬৪ জেলায় ৩০০ আসনে মোট ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৭ এবং নারীদের জন্য ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০২ কক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ মোট কক্ষের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯। এছাড়া অস্থায়ী ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা প্রাথমিকভাবে ১৪টি। ইসি সচিব জানান, প্রতিটি কেন্দ্রে গড়ে ৬০০ পুরুষ ভোটারের জন্য একটি এবং ৫০০ মহিলা ভোটারের জন্য একটি করে ভোটকক্ষ নির্ধারণ করা হয়। পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) জানিয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৮ হাজার ২২৬ টি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ, ২০ হাজার ৪৩৭টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্থাৎ মোট ভোটকেন্দ্রের ৬৭ শতাংশই এক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ। গোয়েন্দা সংস্থাটি ভোটকেন্দ্রের ভৌত অবকাঠামো, থানা থেকে দূরত্ব, কেন্দ্রের নিকটবর্তী প্রভাবশালীদের বাসস্থান ইত্যাদি বিবেচনায় কেন্দ্রের ধরণ নির্ধারণ করেছে। এছাড়া, সীমান্তবর্তী ভোটকেন্দ্র, সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অধ্যুষিত ভোটকেন্দ্রের তালিকাও শনাক্ত করেছে। এসবি বলেছে, মাঠ কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনে বাহিনীর আন্তঃকমান্ড নির্বাচন কমিশন হতে নির্ধারণ করা যেতে পারে। নির্বাচনকালীন সময়ে অবৈধ অস্ত্রের যোগান আসতে পারে। তাই অবৈধ অর্থের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে সিআইডিকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসবি’র দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই তারা ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় ফোর্স মোতায়েন করে থাকেন। তারা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ শব্দটির পরিবর্তে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। আগের নির্বাচনগুলোর মতো এবারো এসবি’র প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই বিভিন্ন বাহিনীর কতজন সদস্য ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত থাকবে তা নির্ধারণ করা হবে। উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাড়ে ১০ হাজারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। এতে তিন জনের মতো অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছিল। এবার সেভাবেই বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। এই বৈঠকে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন বাহিনীগুলোর প্রধান উপস্থিত ছিলেন। সেই সভায় আলোচনা শেষে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই চেক পয়েন্ট বসিয়ে প্রয়োজনে বর্ডার ও সি-রুট সিল করা, দেশকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন-তিন জোনে ভাগ করে নিরাপত্তার পরিকল্পনা সাজানোসহ ২২টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। বৈঠকে নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়ে মতামত, সুপারিশ ও প্রস্তাবসমূহ লিখিতভাবে কমিশনকে অবহিত করতে হয়। জুলাই সনদ অনুযায়ী গণভোট হলে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিতে পরিবর্তন আসতে পারে। গোয়েন্দা তথ্যসহ নিয়মিত সংগ্রহ করে তথ্য বিনিময়, কমিশনকে অবগত করতে হবে। নির্বাচনের আগেও অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। এ জন্য বাহিনীগুলোকে আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যেকোনো অপতৎপরতার রোধে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে যে বাহিনী ঘটনাস্থলের আশেপাশে থাকবে, সেই বাহিনীকেই সর্বপ্রথম রেসপন্স করতে হবে, সব বাহিনীকে সমন্বিত উদ্যোগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার রোধে রাখতে হবে আগাম প্রস্তুতি। এছাড়া নারীদের প্রতি সাইবার বুলিং প্রতিরোধ, সংখ্যালঘু ও জঙ্গি ইস্যু মোকাবেলা, ভয়েস ক্লোন করে চরিত্র হনন মোকাবেলা, খারাপ তথ্য প্রতিরোধে নিয়মিত ও দ্রুততার সঙ্গে ভালো তথ্য সরবরাহ, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার, বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়ার মতো ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন নাশকতা প্রতিরোধ, তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিদেশী নাগরিকদের তালিকা করে তাদের নিরাপত্তা দেওয়া, কালো টাকার ব্যবহার রোধে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার, রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে আগত ও সংরক্ষিত পোস্টাল ভোটের নিরাপত্তা নিশ্চিত, বাহিনীর সদস্যদের দীর্ঘদিন একই স্থানে পদায়নে আছেন, তাদের বদলি, অধিক ঝুঁকিপূর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ ও সাধারণ ভোটকেন্দ্রের তালিকা যথাসময়ে কমিশনে দাখিল এবং নির্বাচন অফিসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে ইসি। বিভিন্ন বাহিনীর দেওয়ার সুপারিশের ভিত্তিতে ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ-সচিব মোহাম্মদ মনির হোসেনের তৈরি করা ইসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিজিবি জানিয়েছে সীমান্তে বর্ডার আউটপোস্টগুলো (বিওপি) কমপক্ষে ২০ জন সদস্য মোতায়েন রাখা হবে। তবে কক্সবাজারের প্রতি বিওপিতে থাকবে ২৫ জন সদস্য। নির্বাচনে ৪৯২টি উপজেলায় এ বাহিনীর ১১ হাজার ৬০ প্লাটুন সদস্য মোতায়েন করা সম্ভব হবে। তবে সীমান্তের দুই কিলোমিটারের মধ্যে সেনাবাহিনী মোতায়েন না করাই ভালো হবে বলে মতামত দিয়েছে তারা। ভোটে ৬০টি উপজেলায় বিজিবি ও র?্যাব এবং ৩৭৭টি উপজেলায় বিজিবি ও সেনাবাহিনী একসাথে মোতায়েন নিরাপত্তা দিতে পারবে। ইসির ওই সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, র?্যাব ভোটে ভ্রাম্যমাণ টিম হিসেবে কাজ করবে। নির্বাচনে তাদের ড্রোন, হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হবে। ভোটের দায়িত্বে সাড়ে পাঁচ হাজারের মতো এই বাহিনী মোতায়েন থাকবে। এছাড়া গুজব প্রতিরোধে সাইবার ইউনিটও কাজ করবে। ৯০ হাজার থেকে এক লাখ সেনা সদস্য ভোটে মোতায়েনের প্রস্তুতি রয়েছে সেনাবাহিনীর। দেশে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, মহাসড়কের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচনি কাজে জরুরি প্রয়োজনে আর্মি এভিয়েশনও প্রস্তুত থাকবে। অঞ্চলভেদে নিয়োজিত থাকবে কমান্ডো বাহিনীও। নৌবাহিনীর নিয়োজিত থাকতে পারে তিন হাজার সদস্য। বিমানবাহিনীও পরিবহন বিমান, সরঞ্জাম ও জনবল প্রস্তুত রাখবে। ভোটকেন্দ্র প্রতি পুলিশের অন্তত একটি করে বডিওর্ন ক্যামেরা থাকবে। নয়টি জেলার ১৭ টি উপজেলায় কোস্টগার্ডের তিন হাজার সদস্য মোতায়েন রাখা সম্ভব হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
স্টাফ রিপোর্টার