প্রশাসনের তৎপরতার অভাব
পাইকারিতে ভোগ্যপণ্যের দাম কমলেও খুচরা বাজারে নেই কোনো প্রভাব
- আপলোড সময় : ০৬-১১-২০২৫ ০৩:৫১:১৬ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৬-১১-২০২৫ ০৩:৫১:১৬ অপরাহ্ন
ভোগ্যপণ্যের দাম পাইকারিতে কমলেও খুচরা বাজারে অনড়। প্রায় সব ধরনের নিত্য ভোগ্যপণ্যের দাম এক মাসের ব্যবধানে ধারাবাহিকভাবে কমছে। কিন্তুখুচরা বাজারে এর প্রভাব নেই। মূলত বিশ্ববাজারে দরপতনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের পাইকারি বাজারে নিম্নমুখীঅধিকাংশ ভোগ্যপণ্যের দাম। কিন্তু সরকারিভাবে পণ্যবাজার মনিটরিং কার্যক্রমের অভাবে সাধারণ ভোক্তারাদরপতনের সুফল পাচ্ছে না। দেশে ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়েকয়েক মাস আগেও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। তখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাম সহনীয় রাখা, বাজার পরিদর্শন করা, দাম পুননির্ধারণের মতো উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তুসহসাই প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ওই উদ্যোগ জিমিয়ে পড়ায় ভোগ্যপণ্যের দাম পাইকারিতে দাম কমলেও খুচরায় কমেনি। বরং এক শ্রেণীর সাধারণ খুচরা ব্যবসায়ী পাইকারি বাজারে দাম বাড়তি এমন অজুহাতে ভোক্তাদের কাছে বেশি দামে নিত্য ভোগ্যপণ্য বিক্রি করছে। ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ সংগঠন ও বাজার সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ভোগ্যপণ্যের দাম পাইকারিতে কমলেও খুচরা বাজারে দাম সমন্বয় না হওয়ার বিষয়টি প্রশাসনের তৎপরতার ওপরনির্ভর করে। আর ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এক মুহূর্ত দেরি না করলেও পাইকারিতে কমে গেলে খুচরা দাম কমাতে গড়িমসি করে। আর রমজান, কোরবানির ঈদ ব্যতীত ভোক্তা অধিকার কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের বাজার মনিটরিং কার্যক্রম কার্যত বন্ধ থাকে। এ সুযোগ নিয়ে খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা পাইকারি বাজারে দাম কমে যাওয়ার বিষয়টি আড়াল করে নিত্য ভোগ্যপণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে বাড়তি মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে। একসময় খুচরা পর্যায়ে ব্যবসায়ীরা কেজিপ্রতি ৫ থেকে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ লাভ করতো। বর্তমানে পাইকারি দাম কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নামলেও অধিকাংশ খুচরা বিক্রেতা কেজিপ্রতি সামান্য কমিয়ে পণ্য বিক্রি করছে। তাতে ওসব প্রতিষ্ঠানের কেজিপ্রতি লাভের হার ১০-২০ শতাংশ। ক্ষেত্রবিশেষে তা আরো বেশি। আর তাতে সাধারণ ক্রেতারাঠকছেন।
সূত্র জানায়,পাইকারি পর্যায়ে বর্তমানে প্রতি কেজি মোটা মসুর ডাল ৮১-৮২ টাকায়বিক্রি হচ্ছে। কিছুদিন আগেও এর পাইকারি দাম ৮৮-৯০ টাকাছিল। কিন্তু এখনো খুচরায় প্রতি কেজি মসুর ডাল ১০৫-১১০ টাকা কেজি দরেবিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ ৮২ টাকা কেজিতে কিনে ১০৫ টাকায় বিক্রি করলে প্রতি কেজিতে লাভ হচ্ছে ২৩ টাকা বা ২৮ শতাংশ। তাছাড়া বর্তমানে পাইকারিতে ৯১-৯২ টাকা দরেপ্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে। ওই হিসাবে খুচরায় কেজিপ্রতি ১০০ টাকার মধ্যে চিনি বিক্রির কথা থাকলেও খুচরায় প্রতি কেজি চিনি সর্বনিম্ন ১০২ থেকে সর্বোচ্চ ১০৫ টাকায়বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে মুগ ডাল, ছোলা, খোলা সয়াবিন, পাম অয়েল, সুপার পাম অয়েল, আটা-ময়দার মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য পাইকারি বাজার থেকে বাড়তি দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে ভারত থেকে আমদানি হওয়া মসুর ডাল কেজিপ্রতি ৪-৫ টাকা কমে লেনদেন হচ্ছে ১৪৮ টাকায়, মুগ ডাল ১৫৫ থেকে কমে ১৪০ টাকায়, ছোলা ১০৫ থেকে কমে ৯০ টাকায়, ছোলার ডাল ১০০ থেকে কমে ৯২ টাকায়, খেসারি ডাল ৮৭ থেকে কমে ৭৫ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। আবার চিনির দাম কমতে কমতে কেজিপ্রতি ৯১-৯২ টাকায় নেমে এসেছে। ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির জন্য মিল মালিকদের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে কিছুদিন পণ্যটির দাম বেড়ে যায়। কিন্তু সামপ্রতিক সময়ে বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের টানা দরপতন শুরু হলে দেশের পাইকারি বাজারেও এর প্রভাব পড়ে। বর্তমানে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রিতে খুচরা বিক্রেতারা লিটারপ্রতি ৩-৪ টাকালাভ করে। বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি মণ সুপার পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ১০০ থেকে ৬ হাজার ১২০ টাকায়। মিলগেট থেকে সংগ্রহ করে খুচরা পর্যায়ে পৌঁছতে আরো ১৫০ টাকার মতো ব্যয় হয়। ওই হিসাবে প্রতি কেজি সুপার পাম অয়েলের খুচরা বিক্রেতাদের ক্রয়মূল্য হয় কেজিপ্রতি ১৬৮ টাকা। তবে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি সুপার পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়।
সূত্র আরো জানায়, দেশের প্রধান পাইকারি বাজারগুলোতে সর্বনিম্ন ৮৫ থেকে ১৪০ টাকায় মুগ ডাল লেনদেন হচ্ছে। সবচেয়ে ভালো মানের মুগ ডাল (দেশীয় চিকন) পাইকারি থেকে খুচরা বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছতে ৪০ টাকা লাভ করা হচ্ছে। একইভাবে প্রতি কেজি অ্যাংকর ডালের খুচরা দাম ৬০-৮০ টাকা। যদিও পাইকারি বাজারে এখন অ্যাংকর ডালের দাম কমে ৪৩-৪৫ টাকা কেজিতেনেমে এসেছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন খুচরা দোকান ও সুপারশপে দুগ্ধ, শিশুখাদ্য, কনফেকশনারি, মসলাসহ বিভিন্ন পণ্য মোড়কের দামের তুলনায় কিছুটা ছাড় দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। সুপারশপগুলোতে অফার মূল্যে বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে মোড়কের দাম কিংবা মোড়কের নির্ধারিত দামের ৫-১০ টাকা ছাড়ে বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। বিশ্ববাজারে পণ্যের দরপতনের পরিপ্রেক্ষিতে কনজিউমার পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন খরচ কমলেও মোড়কের দাম কমানো হয়নি। ফলে বড় রিটেইল শপগুলো বিপুল ছাড়ে পণ্য বিক্রি করলেও সাধারণ খুচরা দোকানদাররা ভোক্তাদের কাছে বাড়তি মুনাফায় পণ্য বিক্রি করে। তাতে ভোক্তারা বিশ্ববাজার ও পাইকারি বাজারে দাম কমে যাওয়ার সুফলবঞ্চিত হচ্ছে।
এদিকে ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকদের মতে, বিশ্ববাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম কমার পাশাপাশি দেশীয় ভোগও কমে গেছে। কয়েক বছর ধরে দেশীয় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিবর্তে বরং কমেছে। বৈশ্বিক বাজারে দাম কমে যাওয়ায় দেশের পাইকারি বাজারেও এর প্রভাব পড়ছে। কিন্তু পাইকারি বাজারে দাম কমলেও খুচরায় দ্রুত প্রভাব পড়ছে না।বিগত রমজান ও কোরবানির ঈদের আগে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, টিসিবি, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক মাসে ভোগ্যপণ্যের দামের উত্থান-পতনকে সামনে রেখে কোনো সংস্থাই কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে বেশ কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম পাইকারিতে কমলেও সাধারণ ভোক্তার কাছে ওসব তথ্য পৌঁছতে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। সেজন্য পাইকারি বাজারের পাশাপাশি খুচরা পর্যায়েও প্রশাসনের মনিটরিং কার্যক্রম নিয়মিত করা জরুরি।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন জানান, সরকার উৎসবের সময়ে দাম নিয়ন্ত্রণে নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করলেও সারা বছর উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ নেয় না। যার কারণে পাইকারি বাজারের পাশাপাশি খুচরা বাজারেও সাধারণ ভোক্তারা বেশি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য হয়। ভোক্তারা যাতে না ঠকে সে জন্য সারা বছরই নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারের কাজ করা প্রয়োজন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
স্টাফ রিপোর্টার