রাজনীতি ব্যক্তিগত নয়, এটি নাগরিক সেবা নরওয়ের রাষ্ট্রদূত
- আপলোড সময় : ০৫-১১-২০২৫ ০৭:০৩:২০ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৫-১১-২০২৫ ০৭:০৩:২০ অপরাহ্ন
ঢাকায় নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হিকন আরাল্ড গুলব্রান্ডসেন বলেছেন, নরওয়েতে নির্বাচনের সময় প্রতিযোগী প্রার্থীর প্রচারণার সময় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা হয়। কারণ রাজনীতি ব্যক্তিগত নয়, এটি নাগরিক সেবা। বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। ভালো রাজনৈতিক সংস্কৃতি সবসময় বাংলাদেশের সুযোগ বাড়িয়ে দেবে। ঢাকার নরওয়ে দূতাবাসের সহায়তায় ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সুরাজনৈতিক সংস্কৃতির অন্বেষণ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে সেমিনারটি শুরু হয়। এটি সঞ্চালনা করেন রিয়াজ আহমেদ। হিকন আরাল্ড গুলব্রান্ডসেন বলেন, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক উত্তরণের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যাপক সংস্কারের কাজ হাতে নিয়েছে। সরকার কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, যারা বেশ কিছু সংস্কার সুপারিশ করেছে। কিছু সংস্কার কাজ ইতোমধ্যে করা হয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সরকার আরও সংস্কার কাজ করবে। এসব সংস্কারের বাইরে আরেকটি বিষয়ে সংস্কারের কথা ভেবে দেখতে হবে, সেটা হচ্ছে রাজনৈতিক সংস্কৃতি। ভালো রাজনৈতিক সংস্কৃতি ছাড়া বিগত কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রবণতা, সাংঘর্ষিক রাজনীতি, রাজনৈতিক নিপীড়ন, দুর্নীতির পুনরাবৃত্তি ঘটবে। সেমিনারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সদস্য ও আইনজীবী শিশির মনির বলেন, দেশের রাজনৈতিক শক্তিগুলো বড় জায়গা দখল করে আছে, যা উন্নত রাজনৈতিক সংস্কৃতির পথে বাধা। তিনি মনে করেন, এর কোনো শর্টকাট সমাধান নেই এবং এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সাংবিধানিক শ্রেষ্ঠত্বের দেশ হলেও নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগ বারবার নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। জুলাই সনদে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতি হবেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি—যা আগে মানা হতো না। এটি বিচার বিভাগসহ অন্যান্য পদে প্রাতিষ্ঠানিক নিশ্চয়তা আনার চেষ্টা করছে। ঢাকায় নরওয়ে দূতাবাসের সহায়তায় আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংস্কৃতি রাতারাতি বদলায় না। এটি একটি দীর্ঘ যাত্রা, যেখানে আইনের শাসন বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মীরা পদ ধরে রাখতে মরিয়া, কারণ তা তাদের আর্থিক নিরাপত্তা দেয়। ফলে রাজনীতি ও জীবিকা একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে অনেক গোষ্ঠী রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে দেখে। শাসন পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতার ভারসাম্যও বদলায়, যা তৃণমূল পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। রাজনৈতিক পদে থাকা ব্যক্তিরা সুযোগ-সুবিধা পান, যা অনেক সময় আইনের পরিপন্থী হয়। শিশির মনির মনে করেন, এই সংস্কৃতি ভাঙতে হলে আর্থিক সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। মানুষ রাজনৈতিক ক্ষমতা হারাতে চায় না, কারণ তা হারালে আর্থিক নিরাপত্তাও হারায়। তিনি বলেন, জুলাই সনদে দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীকে আলাদা রাখার প্রস্তাব ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের একটি পদক্ষেপ। এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য নিয়ম তৈরি করতে পারে। সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ও রাষ্ট্র বিজ্ঞানী ড. রওনক জাহান, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মির্জা এম হাসান, ঢাকা ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালেটিকসের (দায়রা) গবেষণা পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের সাংবাদিক জাইমা ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ এম শাহান, নাগরিক কোয়ালিশনের সদস্য ফাহিম মাশরুর।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
স্টাফ রিপোর্টার