সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা পরিবর্তন করে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষাবিষয়ক শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ বাতিল করার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে উদীচীর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাবিবুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। বিবৃতিতে তারা বলেছেন, ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের হুমকির মুখে সরকার এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার মধ্য দিয়ে মূলত একটি বিশেষ গোষ্ঠীর কাছে সরকারের নতজানু চরিত্রের প্রকাশ পেয়েছে। বিবৃতিতে নেতারা বলেন, সুকুমারবৃত্তি বিকাশের মধ্য দিয়ে কোমলমতি শিশুদের মধ্যে দেশপ্রেম, মানবপ্রেম, মানবিক মূল্যবোধ তৈরি করা এবং ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক ঐশ্বর্য্যের সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়ে দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও কর্তব্য। বাংলাদেশের জন্মের পর থেকেই এ দেশের সংস্কৃতিকর্মীরা পাঠ্যক্রমে শিল্পকলার নানা বিষয় সংযুক্তির দাবি জানিয়ে আসছে। কারণ, অসাম্প্রদায়িক, দরদি ও দায়িত্বশীল প্রজন্ম গড়ে তোলা এবং শিশু-কিশোরদের উন্নত অভিরুচি গঠনের ক্ষেত্রে সঙ্গীত-শিল্প-সাহিত্যের কোনো বিকল্প নেই। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালায় সংগীত ও শারীরিক শিক্ষাবিষয়ক শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির বিষয়টি ছিল সরকারের যুগান্তকারী উদ্যোগ এবং এ দেশের সংস্কৃতিকর্মীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফল। কিন্তু কয়েকটি ধর্মাশ্রয়ী দলের বিরোধিতার মুখে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষাবিষয়ক শিক্ষকের পদ বাতিলের ঘটনা দেশে একটি ন্যাক্কারজনক নজির স্থাপন করলো। বিবৃতিতে উদীচী নেতারা বলেন, হেফাজতে ইসলামের দাবির মুখে আওয়ামী লীগ সরকার পাঠপুস্তক থেকে দেশেপ্রেম ও অসাম্প্রদায়িকতার বার্তাবাহী বিপুল লেখা বাদ দিয়েছিল, শুধুমাত্র লেখকরা ‘হিন্দু’ ও ‘মুক্তিচিন্তার’ হওয়ার কারণে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ শুধু একটি স্বাধীন রাষ্ট্রই কায়েম করেনি, তারা সাম্প্রদায়িক, পশ্চাৎপদ ও ধর্মাশ্রয়ী উগ্রবাদী ভাবাদর্শের বিরুদ্ধেও বিজয় লাভ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের পরম্পরা হিসেবেই সংঘটিত হয়েছে ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থান। যেকোনো ধরনের ফ্যাসিবাদী নীতির বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থান অবিনাশী প্রেরণা হয়ে থাকবে। জুলাই অভ্যুত্থানপরবর্তী বাংলাদেশে নতুন করে ফ্যাসিবাদ কায়েম হচ্ছে ধর্মের নামে। উগ্রবাদী কয়েকটি ধর্মাশ্রয়ী দল এ ফ্যাসিবাদের পত্তন করছে। মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত ভাবাদর্শ আজ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পাঁজরে প্রবিষ্ট হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ঘাড়ে চেপে বসেছে বিভক্তিবাদী, ঘৃণাবাদী, সাম্প্রদায়িক উগ্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী, যারা সংগীত-শিল্পকলা-সাহিত্যের মতো সাংস্কৃতিক অনুসঙ্গের বিরুদ্ধে কুঠারহস্ত হচ্ছে। উদীচী নেতারা এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, যে ভাবাদর্শ মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পরাজিত হয়েছিল, কোনোভাবেই তা এ দেশের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নীতির অংশ হতে পারে না। ধর্মের নামে এ দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কোনো ধরনের নীতি চাপিয়ে দিলে তা জনগণ মেনে নেবে না। এ দেশ মুক্তিযুদ্ধের দেশ। গণতান্ত্রিক, সর্বজনবাদী, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যই এদেশের শক্তি ও সৌন্দর্য। একে রক্ষায় এ দেশের সাধারণ মানুষ ও সংস্কৃতিকর্মীরা প্রাণপণ করবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষাবিষয়ক শিক্ষক পদ বাতিলের সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে অবিলম্বে সরে আসার আহ্বান জানান উদীচী নেতারা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
সংগীত ও শারীরিক শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের প্রতিবাদে উদীচীর বিবৃতি
- আপলোড সময় : ০৫-১১-২০২৫ ০৭:০২:২২ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৫-১১-২০২৫ ০৭:০২:২২ অপরাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
স্টাফ রিপোর্টার