* বিমানবন্দর থেকে অস্ত্র চুরির বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
বিমানবন্দরের ভল্টের তালা ভেঙে অস্ত্র চুরি
- আপলোড সময় : ০৫-১১-২০২৫ ০৬:৪৯:৪২ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৫-১১-২০২৫ ০৬:৪৯:৪২ অপরাহ্ন
* তদন্তাধীন বিষয়ে অফিসিয়ালি কিছু বলতে পারছে না বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পুড়ে যাওয়া কার্গো কমপ্লেক্সের স্ট্রংরুম থেকে ৭টি অস্ত্র চুরির অভিযোগ উঠেছে। ভল্ট ভেঙে অস্ত্র চুরির ঘটনায় বিমান বাংলাদেশের তরফে গত ২৮ অক্টোবর বিমানবন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। কার্গো হলসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, র্যাবের জন্য আনা ভল্টে ২১টি আগ্নেয়াস্ত্র ছিল, যার মধ্যে ১৪টি পাওয়া গেছে। সাতটি নিখোঁজ। যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অ্যাসল্ট রাইফেল ‘এম ফোর কার্বাইন’ ও ব্রাজিলের তৈরি টরাস পিস্তল। এ অস্ত্রগুলো কোনো র্যাবের জন্য আনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় জিডি করেন শাহজালাল বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্বে থাকা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সহকারী ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) জামাল হোসেন। তিনি জিডিতে জানান, গত ২৪ অক্টোবর বিকেল সোয়া ৩টার দিকে কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার নেয়ামুল, বিমানের জিএম (কার্গো) নজমুল হুদা, এনএসআইয়ের অতিরিক্ত পরিচালক ফিরোজ রব্বানী, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালক ইফতেখার প্রমুখের উপস্থিতিতে মালামালের তালিকা করা হয়। পরে এসব মালামাল ভল্টে রেখে সবার উপস্থিতিতে শিকল দিয়ে তালা লাগিয়ে সিলগালা করা হয়। জামাল হোসেন আরও জানান, তিনিসহ কর্তব্যরত ডিএমপির পুলিশ ও আনসার সদস্যরা গিয়ে সর্বশেষ ২৭ অক্টোবর রাত পৌনে ১০টার দিকে সিল-তালা দেখে এসেছিলেন। তবে পরদিন সকাল ৭টার দিকে বিমানের নিরাপত্তা শাখার ডিউটি অফিসার জাহাঙ্গীর আলম খানের মাধ্যমে তিনি জানতে পারি যে ওই স্ট্রংরুমের ভল্টের তালা লাগানো নেই। পরে তিনি বিষয়টি বিমানের ডিজিএমকে (সিকিউরিটি) জানিয়ে বিমানবন্দরে আসেন। সেখানে গিয়ে ভল্টের দরজায় কোনো তালা লাগানো দেখা যায়নি।
কার্গো সংশ্লিষ্টরা জানান, ২৪ অক্টোবর ভল্ট্রের ইনভেন্ট্রিতে ১৮টি ইনট্যাক রিভলভার ও তিনটি ক্ষতিগ্রস্ত রিভলভার ছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবর যখন ওই ভল্টের তালা ভাঙা দেখতে পাওয়া যায়, তখন বিমানসহ অন্যান্য সংস্থার লোকজন সেখানে জানান। সেখানে আগের ইনভেন্ট্রিতে ১৮টি ইনট্যাক পিস্তলের মধ্যে চারটি পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ ১৪টি রয়েছে। আর নষ্ট হওয়া তিনটি ঠিকই ছিল। বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা জানান, কার্গো আমদানি কমপ্লেক্সের স্ট্রং রুমের ভল্টে সাধারণত মূল্যবান জিনিসপত্র এবং জরুরি কাগজপত্র রাখা হয়। আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় নথি, শুল্কসংক্রান্ত কাগজপত্র ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক দলিলপত্র রাখা হয়। এছাড়া বেশি মূল্যবান কিছু আমদানি করা পণ্য সাময়িকভাবে ভল্টে রাখা হয়। সাধারণত স্বর্ণ, হীরা ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ উচ্চমূল্যের ও সহজে বহনযোগ্য পণ্য নিরাপত্তার জন্য রাখা হয়ে থাকে। সেখান থেকে পণ্য বের করতে হলে কয়েকজনের স্বাক্ষর লাগে। কয়েক স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকে বলেই স্ট্রং রুম বলা হয়।
এদিকে জিডির তদন্ত করছেন বিমানবন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এসএম মাইনুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা ঘটনার তদন্ত করছি। কার্গো হাউসের আশপাশের সিসি ক্যামেরা পুড়ে গেছে। ফলে সিসি ক্যামেরা থেকে তেমন কোনো তথ্য পাইনি। আমরা সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তদন্তের পর ঘটনার বিস্তারিত জানা যাবে।
বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ১৮ অক্টোবর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর বিমানবন্দরের কার্গো হাউস কড়া নিরাপত্তায় রয়েছে। স্পর্শকাতর স্থানে সাধারণ মানুষের চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমন নিরাপত্তার মধ্যেই সুরক্ষিত স্ট্রং ভল্টের তালা কেটে লুটপাট করা হয়েছে। সুপরিকল্পিতভাবে একটি শক্তিশালী চক্র এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ওই কর্মকর্তারা মন্তব্য করেন।
বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাসলিমা আক্তার বলেন, কার্গো হাউসের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের। আমরা শুধু গেটের দায়িত্ব পালন করি। মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি করেছে। আমরাও তদন্ত করছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) কার্গো নাজমুল হুদা সোমবার বলেন, আমি ওখানে ছিলাম না। আমি বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগার সময় সেখান থেকে আসলেই অস্ত্র চুরি হয়েছে কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সিনিয়র সচিব ওই কমিটির প্রধান। তিনি বেশ কয়েকটি দেশে চিঠি দিয়েছেন। দুই-একটা দেশ থেকে এক্সপার্টরা ইতোমধ্যেই এসেছেন। তবে আসলেই সেখান থেকে অস্ত্র চুরি হয়েছে কিনা তা তদন্তের পর জানা যাবে। এ বিষয়ে সিনিয়র সচিব নিজেও অনুসন্ধান করছেন। চুরি যদি হয় তাহলে কার মাধ্যমে হয়েছে এবং কে দায়ী তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। এখন পর্যন্ত কয়টি অস্ত্র চুরি হয়েছে বা আদৌ চুরি হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
স্টাফ রিপোর্টার