ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ) থেকে মো. আ. জব্বার
প্রাচীন স্থাপত্যকলার এক অনন্য নিদর্শন ৫শ’ বছরের পুরনো এক গম্বুজবিশিষ্ট জামে মসজিদটি প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে যেমন নষ্ট হচ্ছে প্রাচীণ স্থাপত্য কলার আদলে নির্মিত কারুকাজ তেমনি হারিয়ে যেতে বসেছে প্রাচীণ আমলে নির্মিত মসজিদটির ইতিহাস-ঐতিহ্য। তাই ঐতিহাসিক এ মসজিদটির সংস্কার প্রয়োজন।
ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ৭নং বাক্তা ইউনিয়নের অন্তর্গত নিশ্চিন্তপুর গ্রামের সরকারপাড়ায় অবস্থিত প্রাচীন আমলে নির্মিত এক গম্বুজবিশিষ্ট জামে মসজিদটি। এই অঞ্চলের ঐতিহ্য বহনকারী এ মসজিদটির সুনির্দিষ্ট কোন নাম না থাকলেও বর্তমানে এলাকার নামানুসারে স্থানীয়দের কাছে নিশ্চিন্তপুর সরকারপাড়া জামে মসজিদ বা এক গম্বুজ মসজিদ হিসেবেই পরিচিত।
এক গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদটি নিয়ে লোকমুখে ছড়িয়ে আছে নানা রহস্য ও কল্প-কাহিনী। বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকেই ঐতিহাসিক পুরোনো এ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি দেখতে আসেন। এ মসজিদটির নির্মাণশৈলী অত্যন্ত চমৎকার। শুরু থেকে ইট, বালু, চুন-সুরকি দ্বারা এটি নির্মিত। পরে স্থানীয়দের উদ্যোগে একাধিকবার এর সংস্করণ করা হয়েছে।
শুরুতে মসজিদটির সামনের দিকে একটি প্রবেশদ্বার (দরজা) ছিল। পরবর্তীতে প্রয়োজনের তাগিদে স্থানীয়রা উত্তর ও দক্ষিণ দিকে আরও দুটি দরজা বের করেন। মসজিদটির ভিতরে প্রথম দিকে ৩টি কাতারে ২১ জনের বেশি মুসল্লির জায়গা না হওয়ার কারণে মসজিদটি ভেঙে মসজিদের তিন দিকে বারান্দা নির্মাণ করা হয়েছে।
জনশ্রুতি, ৫০০ বছর আগে এই গ্রামের উসকা সরকার নামের এক লোক নিজ উদ্যোগে স্থানীয়দের নিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেন এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নিশ্চিন্তপুর সরকারপাড়া জামে মসজিদটি। তৎকালীন সময়ে অত্র উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর, শ্রীপুর, পুটিজানা, বড়খিলা, বাক্তা, নাওগাঁও, এবং কালাদহসহ প্রায় ৮/৯টি গ্রামের লোকজন এই মসজিদে জুমআর নামাজ আদায় করতেন।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি আব্দুস ছামাদ সরকার বলেন, যুগের চাহিদা ও কালের বিবর্তনে ৫০০ বছর পার হলেও প্রাচীন এই মসজিদের উন্নয়নে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তিনি আরও জানান, মসজিদের নামে ওয়াকফকৃত ৪৮ শতাংশ জমি রয়েছে। ২২ শতাংশ জমিতে রয়েছে মসজিদ ও কবরস্থান। ২৬ শতাংশ জমিতে যে ফসল উৎপাদিত তা দিয়ে খতিব সাহেবকে বছরে ৪ মণ ধান দেয়া হয়।
স্থানীয় আ. মোতালেব সরকার বলেন, প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজে স্থান সংকুলান হয় না। তাই মসজিদটি সম্প্রসারণ করা একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু অর্থাভাবে মসজিদের সংস্কার বা সম্প্রসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমান সরকার মসজিদ ও মাদরাসাসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক উন্নয়ন করে যাচ্ছেন। সেই ধারাবাহিকতায় এই মসজিদটির উন্নয়নে বর্তমান সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন এলাকার জনগণ।
স্থানীয় নূরুল ইসলাম বলেন, নামমাত্র বেতনে একজন খতিব থাকলেও বেতনভুক্ত কোনো মুয়াজ্জিন নেই। প্রাচীন এই মসজিদটি সংস্কার ও সম্প্রসারণে সরকারের কাছে দাবি জানান এলাকাবাসী। পাশাপাশি রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সমাজসেবক, দানশীল ব্যক্তি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান তারা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata