* নির্বাচিত সরকারকে জোর দিতে হবে বন্দর ব্যবস্থাপনা ও করনীতির ওপর
* ব্যবস্থা নিতে হবে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে
* সবকিছু মিলে আগামী ৬ মাসে নির্ধারণ হবে দেশের ভাগ্য
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনের পর ঠিক রাখতে হবে বাজারে ডলারের তারল্য। নির্বাচিত সরকারকে জোর দিতে হবে বন্দর ব্যবস্থাপনা ও করনীতির ওপর। ব্যবস্থা নিতে হবে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে। অর্থনীতিতে বিনিয়োগে স্থবিরতা, ঋণ প্রবাহে সংকোচন, আর উচ্চ সুদের চাপ। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে সতর্ক করেছে, এসব কারণ মিলেই অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে পড়ছে এবং সামনের দিনগুলোতে ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে। সবকিছু মিলে আগামী ৬ মাসে নির্ধারণ হবে দেশের ভাগ্য।
নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে শিল্প ও পেট্রোলিয়াম জাতীয় পণ্যের আমদানি বেড়েছে। তবে গত বছরের ৫ আগস্টের পর পরিবর্তীত পরিস্থিতির সময়টি বাদ দিয়ে স্বাভাবিক সময় ধরলে, ২০২৩ সালের এই সময়ের তুলনায় কম। দেশিয় বিনিয়োগকারীদের মতো বিদেশি বিনিয়োগকারীরা রয়েছেন নতুন সরকারের অপেক্ষায়। ফলে, আসছে ছয় মাসে ত্রিমুখী চাপে পড়তে যাচ্ছে আর্থিক খাত। এই ছয়মাসের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে কতটা ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।
নির্বাচনের তোড়জোড় যত বাড়ছে, ততই স্নায়ুচাপ বাড়ছে আর্থিক খাতে। রমজানের আগে নিত্যপণ্য আমদানিতে এলসির চাপ ও নির্বাচনের পর দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের পথ সহজ রাখতে বাজারে নিরবচ্ছিন্ন ডলার সরবরাহসহ নীতি সহায়তায় বড় ধরনের প্রস্তুতি জরুরি। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুধুমাত্র ডলার সরবরাহ বা সুদের হার কামিয়ে নয়, কর পরিকল্পনা ও আমদানি রফতানি সহজ করতে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ।
রমজানকে সামনে রেখে নিত্য পণ্য আমদানি বাড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই বাজার স্থিতিশীল রাখতে পেঁয়াজ, ডাল, চিনি, ছোলা, খেজুর ও ভোজ্য তেলসহ খাদ্যপণ্য আমদানিতে গুনতে হয় মোটা অংক। আন্তর্জাতিক বাজারদর আর পরিবহনের খরচের ওপর নির্ভর করে প্রতি বছরই আর্থিক আকার হয় প্রায় দ্বিগুণ।
নির্বাচনের পর শুধুমাত্র ঋণের সুদের হার কমানো বা বাজারে ডলারের তারল্য ঠিক রাখা নয়, নির্বাচিত সরকারের বন্দর ব্যবস্থাপনা ও করনীতির ওপর নির্ভর করবে বেসরকারি বিনিয়োগে কতটা জোয়ার আসবে।
সূত্র জানায়, জমা বাড়ছে, কিন্তু ঋণ দিচ্ছে না ব্যাংক। ব্যবসায় আস্থাহীনতা রয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি রেকর্ড পর্যায়ে নেমে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সরকারি খাতে ঋণ বেড়েছে ১৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ, ব্যাংকে নির্ভরতা বাড়ছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশে ছিল, যা সামান্য ঊর্ধ্বমুখী। চাল ও খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা কমলেও সামগ্রিক মূল্যচাপ অব্যাহত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৩১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। রফতানি আয় সেপ্টেম্বর মাসে কমে দাঁড়ায় ৩,৬২৭ মিলিয়ন ডলারে। রাজস্ব আদায় বেড়েছে ২১ শতাংশ, তবুও লক্ষ্য পূরণে ঘাটতি রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, যখন নির্বাচিত সরকার এলে ব্যবসা বাণিজ্যে একটা চাঙ্গা ভাব থাকবে। যখন বেসরকারি খাত বিনিয়োগ শুরু করবে, তখন স্বাভাবিকভাবেই আমদানি রফতানি বাড়বে। এতে একটা চাপ সৃষ্টি হবে। রিজার্ভের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা এখন রিজার্ভ নিয়ে যতটা স্বস্তিতে রয়েছি। যখন প্রচণ্ড চাপ তৈরি হবে, তখন আর সেই স্বস্তিতে থাকা যাবে না। সেইসঙ্গে ভোগ্যপণ্য আমদানি চাপ, আরেক দিকে শিপ্ল কাঁচামালের আমদানির চাপ তৈরি হবে। গত বছর আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছিল আমদানীরকের সংখ্যাও। ফলে এবার অর্থ পাচার রোধে সেদিকেও নজরদারি রাখা হবে বলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র।
অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ক্রমাগত উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, উচ্চ ঋণের বোঝা এবং ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্থনীতির তিন চ্যালেঞ্জ। মুদ্রাস্ফীতি নিম্ন আয়ের এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষকে কঠিন সময়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা তাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। বৈদেশিক ঋণের তুলনায় অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের ঋণ প্রায় দ্বিগুণ, যা বড় সমস্যার লক্ষণ। বৈদেশিক ঋণ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে চাপ সৃষ্টি করেছে। ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশ কখনো পিছিয়ে না পড়লেও জ্বালানি ও অন্যান্য খাতে প্রায় ৫০০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ হয়নি। এছাড়া জিডিপির ধীরগতির কারণে সরকারের ব্যয়ের জায়গা কমে যাচ্ছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
* নির্বাচনের পর ঠিক রাখতে হবে বাজারে ডলারের তারল্য
ত্রিমুখী চাপে দেশের অর্থনীতি
- আপলোড সময় : ০২-১১-২০২৫ ০৯:৪৬:০৭ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০২-১১-২০২৫ ০৯:৪৬:০৭ অপরাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
স্টাফ রিপোর্টার