ঢাকা , শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫ , ১৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ডেঙ্গুতে ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯২৮ মাদক থেকে পরিত্রাণের মাধ্যম হতে পারে খেলাধুলা- বাণিজ্য উপদেষ্টা নারীর স্বাস্থ্য ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিতেই টেকসই উন্নয়ন সম্ভবÑ পরিবেশ উপদেষ্টা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদ্রাসায় শিশুসহ ৭ জন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট সাতক্ষীরা তালায় অগ্নিকাণ্ডে ৮ দোকান পুড়ে ছাই চট্টগ্রামে স্টেডিয়ামে ‘জয় বাংলা’ সেøাগান ঘিরে হাতাহাতি, আটক ৬ রাজধানীতে শিশু অপহরণের হোতাসহ গ্রেফতার ৩ ববি হাজ্জাজে ছন্দপতন বিএনপিতে মোবারকে ফুরফুরে জামায়াত সুন্দরগঞ্জে শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়ায় সেই যুবকের মৃত্যু ফেনীতে অপহরণের ৬ বছর পর মিললো কাস্টমস কর্মকর্তার লাশ চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচন স্থগিত স্বেচ্ছায় জুলাই গেজেট থেকে নাম প্রত্যাহার আবেদন জুলাইযোদ্ধার ৩ ব্যাংক হিসাব ও কম্পিউটার জব্দ এনসিটি ইজারাদানের বিরুদ্ধে বাড়ছে তীব্রআন্দোলনের শঙ্কা মাউশি ডিজি নিয়োগে সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত আ’লীগ জামায়াতপন্থী আট প্রার্থী ইসির প্রতীক তালিকায় ‘শাপলা কলি’, প্রত্যাখ্যান এনসিপির ইসির প্রতীকের তালিকায় যুক্ত ‘শাপলা কলি’ রাজধানীতে সেনা অভিযানে কিশোর গ্যাং পাটালি গ্রুপের ১০ সদস্য আটক নভেম্বরে গণভোট, সংশোধিত আরপিও বহাল চায় জামায়তসহ ৮ দল গণভোট ঘিরে সামাজিকমাধ্যমে ‘হ্যাঁ-না’ ক্যাম্পেইন

মাউশি ডিজি নিয়োগে সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত আ’লীগ জামায়াতপন্থী আট প্রার্থী

  • আপলোড সময় : ৩১-১০-২০২৫ ০২:৪৭:১৯ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ৩১-১০-২০২৫ ০২:৪৭:১৯ অপরাহ্ন
মাউশি ডিজি নিয়োগে সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত আ’লীগ জামায়াতপন্থী আট প্রার্থী
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক পদে পদায়নের ক্ষেত্রে এবার বিএনপি ঠেকাও কর্মসূচি হাতে নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কতিপয় কর্মকর্তার এক সিন্ডিকেট। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের পুরোদমে আয়োজন চলছে। মূলত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রভাবশালী তিন আমলার একটি সিন্ডিকেট পুরো শিক্ষাকে জিম্মি করে রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এই আটজনের মধ্য থেকে কাকে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি শিক্ষা উপদেষ্টা।
সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতপন্থী অথবা আওয়ামীপন্থী ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে এই পদে পদায়ন দিতে সর্বোচ্চ তদবির চালাচ্ছে সেই সিন্ডিকেট। মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে আয়োজন চলছে তাকে ‘বিএনপি ঠেকাও কর্মসূচি’ বলাটাই যুক্তিযুক্ত। তবে এই পদায়নের উদ্দেশ্য আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা। কেননা ভোট কেন্দ্র (শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) থেকে শুরু করে ভোটের দায়িত্বে থাকে শিক্ষার অধিনস্ত শিক্ষক-কর্মচারী ও কর্মকর্তারা। বিএনপি ঠেকিয়ে আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তাদের পুনর্বাসনে ব্যর্থ হলে জামায়াতপন্থী কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে এই পদে নিয়োগ (পদায়ন) দিতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী এই তিন আমলার সিন্ডিকেট। আর এই তালিকায় সর্বোচ্চ আলোচনায় আছে প্রভাবশালী এই সিন্ডিকেটের একজনের আপন খালাতো বোন। মন্ত্রণালয়ের এই সিন্ডিকেট প্রভাব বিস্তার করে আট জনের একটি তালিকা চূড়ান্ত করেছে এবং এই আটজনের মধ্যে থেকেই একজনকে ১৯ হাজার শিক্ষা ক্যাডারদের প্রধান পদ মাউশি ডিজির চেয়ারে বসাতে মরিয়া তারা। তবে এই আটজনের থেকেই যে ডিজি হবে তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়নি শিক্ষা উপদেষ্টা। যদিও গত ৬ অক্টোবর ডিজি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে, ‘আগ্রহী প্রার্থীকে সৎ, দায়িত্বপরায়ণ এবং প্রশাসনিক কাজে দক্ষ হতে হবে এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর থাকা আবশ্যক’ ইত্যাদি কথা বলা হয়েছে। তবে  এই সিন্ডিকেট যে আটজনের তালিকা চূড়ান্ত করেছেন তাদের অধিকাংশই বিতর্কিত এবং ফ্যাসিবাদী আওয়ামী আমলের সুবিধাভোগী। তিন আমলা সিন্ডিকেটের করা তালিকায় প্রথমেই রয়েছেন জয়পুরহাট সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. মো. মাহবুব সরফরাজ। জুলাই গণভ্যুত্থানের আগে তিনি পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ পদে আসীন ছিলেন। এই কলেজটি সরকারি কলেজগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান কলেজ। আওয়ামী সরকারের আমলে ডিএনএ টেস্ট করার মতো আওয়ামী লীগ করে কি না তা যাচাই বাছাই করে অধ্যক্ষ পদে পদায়ন দেওয়া হতো। এছাড়াও তিনি আওয়ামী আমলে একাধিক কলেজে অধ্যক্ষ এবং প্রধান প্রধান কলেজে পদায়ন ছিলেন।
গত ৬ অক্টোবর প্রকাশিত ডিজি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, আগ্রহী প্রার্থীকে সৎ, দায়িত্বপরায়ণ এবং প্রশাসনিক কাজে দক্ষ হতে হবে এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণে কৃতিত্বের স্বাক্ষর থাকতে হবে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, সিন্ডিকেটের করা এই তালিকার অধিকাংশ কর্মকর্তাই অতীতে নানা বিতর্কে জড়িত ছিলেন এবং অনেকেই বিগত সরকার আমলে বিশেষ সুবিধা পেয়েছিলেন।
অভিযোগ অনুযায়ী, অতিরিক্ত সচিব বদরুন নাহার ও তার ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়। জয়পুরহাট সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুব সরফরাজ তালিকার প্রথমে রয়েছেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আগে তিনি পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। আওয়ামী সরকারের সময় একাধিক কলেজে অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ৫ আগস্টের পর ছাত্র-আন্দোলনের সময় তাকে ওএসডি করা হয়, পরে জয়পুরহাট কলেজে বদলি করা হয়। নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোসতাক আহমেদ ভূঁইয়া প্রাক্তন মন্ত্রীপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেনের ছোট ভাই। দীর্ঘদিন ধরে তিনি একই পদে বহাল আছেন। গত ৫ আগস্টের পরও প্রভাবশালী বলয়ের কারণে পদে বহাল থাকেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি বিভিন্ন সময় শিক্ষা দফতরের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়েছেন। বরিশালের আবুল কালাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শামীম আহসান খানের বিরুদ্ধে ২০২১ সালে সাত কোটি টাকার আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা হয়। যদিও পরবর্তীতে তিনি প্রভাব খাটিয়ে মামলায় খালাস পান। বর্তমানে জামায়াতপন্থী একটি গ্রুপের তদবিরে ডিজি পদের দৌড়ে আছেন বলে অভিযোগ। কবি নজরুল সরকারি কলেজের ভূগোল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সাদী মোহাম্মদ একসময় ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরবর্তীতে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের নেতৃত্বে থেকে বিগত সরকার আমলে নানা সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, বর্তমানে জামায়াতঘনিষ্ঠ চক্রের সহযোগিতায় তিনি ডিজি পদের জন্য লবিং করছেন। সরকারি তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ ড. ছদরুদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অসদাচরণের প্রমাণ পাওয়ায় একাধিকবার বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে নারী সম্পর্কিত অসদাচরণ, কলেজ ফান্ড তসরুপ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। এসব সত্ত্বেও প্রভাবশালী মহলের তদবিরে তিনি বর্তমান পদে বহাল আছেন এবং ডিজি পদের মৌখিক পরীক্ষাও দিয়েছেন। বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মেহেরুন নেছার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি আওয়ামী সরকারের সময় বিভিন্ন বিদেশি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, কিন্তু সেসব বিষয়ে দেশে কখনো পাঠদান করেননি। পারিবারিকভাবে জামায়াত ঘনিষ্ঠ এই কর্মকর্তা ও তার স্বামী দুজনেই শিক্ষা ও কৃষি ক্যাডারে কর্মরত। তিনিও বর্তমানে ডিজি পদের প্রতিযোগিতায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। ঢাবি ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী এবং শিক্ষা অধিদফতরের প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক রায়হানা তসলিমা তালিকায় রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং তার স্বামীও শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক পদে থেকে প্রভাব বিস্তার করতেন। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তবে শিক্ষা ক্যাডারের ১৪ ও ১৬ ব্যাচের একাধিক কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিজ্ঞপ্তিতে সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তিদের কথা বলা হলেও তালিকায় এসেছে সবচেয়ে বিতর্কিত নামগুলো। শিক্ষা প্রশাসনকে আবারও অস্থির করার ষড়যন্ত্র চলছে। তারা বলেন, যদি এই তালিকার বিতর্কিতদের মধ্য থেকে কাউকে ডিজি করা হয়, তবে প্রশাসনে নতুন করে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করারশর্তে মন্তব্য করেন, ৫ আগস্টের পর নতুন প্রশাসনিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এখন সেই জায়গায় ফ্যাসিবাদী আমলের বিতর্কিতদের ফিরিয়ে আনা হলে তা হবে শিক্ষাক্ষেত্রে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এ প্রসঙ্গে বক্তব্য নিতে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরারকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিলেও তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ