 
                            
                        * আগামী নির্বাচনে ভোটে অংশ নেবে ৪ কোটি তরুণ
ত্রয়োদশ নির্বাচনে তরুণদের প্রাধান্য দিচ্ছে জামায়াত
- আপলোড সময় : ৩১-১০-২০২৫ ০২:৩৯:০১ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ৩১-১০-২০২৫ ০২:৩৯:০১ অপরাহ্ন
 
                                  
                     
                             
                            
                            * ডাকসু-জাকসুতে শিবিরের জয়ে জামায়াতের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে
‘আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে’ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের এমন বক্তব্যে রাজনীতির মাঠে শুরু হয়েছে ভোটের হিসাব-নিকাশ। মাঠে-ঘাটে ও হাট-বাজারে প্রচার-প্রচারণায় উৎবের আমেজ তৈরি করেছে জামায়াতের প্রার্থীরা। ত্রয়োদশ নির্বাচনে তরুণ ও মেধাবী প্রার্থীদের প্রাধান্য দিচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এরই মধ্যে ৩০০ আসনে প্রাথমিক প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী। যাদের বেশিরভাগই তরুণ, রয়েছে ছাত্রশিবিরের দুই ডজনেরও বেশি সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি। জুলাই পরবর্তী সময়ে তরুণদের এমন গুরুত্ব জামায়াতের কৌশল কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, উদার রাজনৈতিক চিন্তা এবং ইনক্লুসিভ আইডিয়া থেকেই তরুণদের বেছে নিচ্ছে দলটি। জানা গেছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নানান চড়াই- উতরাই পেরিয়ে ইতিহাসের সেরা সময় পার করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বিগত ১৬ বছরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দলের শীর্ষ ১১ নেতার মৃত্যুদণ্ডসহ নানা দমন পীড়নের পথ পেরিয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর, নতুন উদ্যোমেই এগিয়ে যাচ্ছে দলটি। ৫ দফা দাবিতে রাজপথে সরব থাকলেও ইতোমধ্যে ভোটের মাঠেও পিছিয়ে নেই কোনোভাবে। এরই মধ্যে, ৩০০ আসনে প্রার্থীও চূড়ান্ত করেছে দলটি। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আগামী নির্বাচনের ফল নির্ধারণে তরুণ ভোটাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এমন সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে, তরুণ ভোটারদের নিজেদের দিকে টানতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো।
দেশের রাজনীতি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলই তরুণদের আকৃষ্ট করতে চাইবে। তবে সাম্প্রতিক ছাত্ররাজনীতির নির্বাচনে সাফল্য পাওয়ায় জামায়াত-শিবির অন্যদের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন বলেন, আমি মনে করি, স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতি আর জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতি এক নয়। ছোট ক্যাম্পাসের রাজনীতি একভাবে চলে, আবার গ্রামে-গঞ্জে আত্মীয়তা, পারিবারিক সম্পর্ক বা স্থানীয় প্রভাব বড় ভূমিকা রাখে। এসব ক্ষেত্রে নানান ধরনের প্রেক্ষাপট থাকে, যা সরাসরি জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলে প্রতিফলিত হয় না। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটের ধরনও আলাদা। এখানে অনেকেই বিভিন্ন কারণে ভোট দেয়-বন্ধুর পরামর্শে, কোনো সহায়তা পাওয়ার কারণে কিংবা নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে। সুতরাং আমি মনে করি না যে এসব স্থানীয় বা ক্যাম্পাসভিত্তিক প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে খুব বেশি কাজে দেয়। আমরা স্থানীয় নির্বাচনে দেখেছি, অনেকে জিতেছে, কিন্তু সেই ফলাফল জাতীয় নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়নি। তাই আমার কাছে মনে হয়, জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলার বিষয়গুলো অনেক গভীর এবং ভিন্ন প্রেক্ষাপটে নির্ভরশীল। একইসুরে কথা বলেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এসএম আলী রেজা। তিনি বলেন, যেহেতু সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলোতে জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ভালো করছে, এটা একটা হাইপ। জাতীয় নির্বাচনে তারা কীভাবে এই ভোট ধরে রাখবে, সে কৌশল জামায়াত করছে।
এদিকে তরুণ ভোটারদের নিয়ে অন্যদের চেয়ে একটু বেশিই আশাবাদী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে দলটির ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল নিরঙ্কুশ জয়লাভ করায় জামায়াত নেতাদের আত্মবিশ্বাস অনেকটা বেড়েছে। তারা আশা করছেন, ডাকসু-জাকসুর মতো আগামী জাতীয় নির্বাচনেও তরুণ ভোটাররা ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। দলটির নেতাদের ধারণা, সামনের জাতীয় নির্বাচনে প্রায় দুই কোটি নতুন তরুণ ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। এর বড় অংশই শিক্ষার্থী, যারা ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে নিজেদের প্রভাব দেখিয়েছে। জামায়াত নেতারা মনে করেন, তরুণ ভোটাররা শুধু নিজেরাই নয়, বরং তাদের পরিবারকেও প্রভাবিত করবে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে। এ কারণে তরুণ ভোটব্যাংককে কেন্দ্র করে জাতীয় রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছে নতুন প্রায় চার কোটি ভোটার, যা মোট ভোটারের প্রায় ৩০ শতাংশ। তরুণ এসব ভোটারের রায়ের ওপরই অনেকটা নির্ভর করবে আগামীতে দেশ পরিচালনার গুরুভার কোন দলের ওপর বর্তাবে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশে সব মিলিয়ে ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব নাগরিকের সংখ্যা ১২ কোটি ৪৪ লাখের বেশি। তাদের মধ্যে চার কোটি ভোটারের বয়স ১৮-৩৩ বছরের মধ্যে। বর্তমানে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী ভোটারের সংখ্যা ৩ কোটি ৪ লাখ ৭ হাজার ৯৮৬। শুধু তাই নয়, ১৮-২১ বছর বয়সী ভোটার ৭৬ লাখ ৮৫ হাজার, ২২-২৫ বছর বয়সী ১ কোটি ১২ লাখ ৫৫ হাজার ও ২৬-২৯ বছর বয়সী ভোটার ১ কোটি ১৪ লাখ ৬৭ হাজার।
এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর মহিলা বিভাগের মজলিশে শুরার এক অধিবেশনে দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আল্লাহর খাস রহমতে ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির বিজয় লাভ করেছে। এ বিজয়ে অনেকেই অভিভূত হয়েছেন। এ নির্বাচনের প্রভাব আগামী জাতীয় নির্বাচনেও পড়বে ইনশাআল্লাহ। যারা আমাদের পছন্দ করেন, ভালোবাসেন এবং আমরা যাদের পছন্দ করি, ভালোবাসী তাদের নিয়েই আমরা আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে নির্বাচন করার আশা করি।
এ বিষয়ে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি আতিকুর রহমান বলেন, যুবকদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ এবার প্রথমবার ভোট দেবেন। যারা আগে ভোটার হলেও নির্বাচন সেভাবে না হওয়ায় তারা ভোট দেয়ার সুযোগ পান নাই। আমরা মনে করি জামায়াত ইসলামী এবার যুব সমাজকে আকৃষ্ট করার জন্য যেসব যুবক পার্লামেন্টে গিয়ে কথা বলতে পারে সেদিকটা অগ্রাধিকার দিয়েছে। তবে তরুণদের অনেকেই মনে করছেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী অবস্থান থেকেই তরুণদের গুরুত্ব দিচ্ছে জামায়াত। এছাড়া, সবশেষ উপজেলা নির্বাচনে সফলতাকেও প্রার্থী হিসেবে তরুণ প্রার্থীদের বাছাইয়ে ভূমিকা রাখছে। তারা মনে করছে, ধমকের রাজনীতির বদলে নতুন কিছুকেই স্বাগত জানাবেন ভোটাররা।
ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর আমরা যে ভারতীয় আধিপত্যবাদের মধ্যে ছিলাম, বাংলাদেশে আর কখনোই আমাদের পাশের কোনো দেশ যেন আমাদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে না পারে। তরুণদের হাত ধরেই আগামী দিনের কাক্সিক্ষত পরিবর্তন আসবে ইনশাআল্লাহ।
ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, যে পুরাতন রাজনীতিকে সবাই না বলে দিচ্ছে। আমি জানি না আমাদের রাজনীতিবিদরা এটা বুঝতে পারছেন কি না। আপনি যেনতেন একটি ন্যারেটিভ তৈরি করলেই কিন্তু মেনে নিচ্ছে না। তবে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক এড়াতে তরুণ নেতৃত্বকে সামনে আনা জামায়াতের কোশল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম বলেন, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে উদার রাজনৈতিক চিন্তাকেই গুরুত্ব দিচ্ছে দল। বলেন, তরুণরা নির্বাচিত হলে রাষ্ট্র পরিচালনার ভার সামলাতে বেগ পেতে হবে না। তিনি বলেন, আসনগুলোতে এ পর্যন্ত প্রার্থী বাছাই যা করেছি তার মধ্যে আমাদের তরুণ প্রার্থী উল্লেখযোগ্য। সাবেক সব ছাত্রনেতারা রয়েছেন। এটা অনেকটা ইনক্লুসিভ আইডিয়া জামায়াতকে খানিকটা উদার রাজনৈতিক চিন্তা থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার এ দায় কাঁধে আসলে আমরা কিভাবে সক্ষম এবং দক্ষ নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রটাকে নতুন বাংলাদেশ পরিচালনায় যোগ্য বানাবো সে ধরনের লিডারশিপ কিন্তু আমরা এখনই বাছাই করছি। প্রার্থীদের দক্ষতা-যোগ্যতার পাশাপাশি ইনক্লুসিভ ধারণা থেকে তরুণদের গুরুত্ব দেয়ার কথা জানান জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল।
 কমেন্ট বক্স 
                            
 
                          
                       
                        
                                      সর্বশেষ সংবাদ
                                
                                 
  সফিকুল ইসলাম
 সফিকুল ইসলাম  
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                     
                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                