দেশে আশঙ্কাজনক হারে আত্মহত্যার ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা বাড়ছে। নানা দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা, পানিতে পড়ে বা অজ্ঞাত হিসেবে কারো লাশ উদ্ধার হওয়ার পর থানাগুলোতে অপমৃত্যুর মামলা হয়। ওসব মামলার মধ্যে কিছু মামলা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে হত্যা মামলায়ও রূপান্তরিত হচ্ছে। বর্তমানে রাজধানীসহ সারা দেশের থানাগুলোতে দৈনিক গড়ে ৮৩টি অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ড হচ্ছে। তার বাইরেও প্রতিদিন থানাগুলোতে হত্যা মামলা ও সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার মামলা হচ্ছে। অপমৃত্যুর সংখ্যা কমাতে ট্র্যাডিশনাল পুলিশিং ব্যবস্থা, জনসচেতনতাসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। পুলিশ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সারা দেশের থানাগুলোতে প্রতি মাসে প্রায় আড়াই হাজার অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ড হয়। গত জুলাইয়ে ২ হাজার ৪৬০টি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। জুনে ওই সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি ছিল। অথচ গত বছরের জুনে ২ হাজার ৫৩টি, জুলাইয়ে ২ হাজার ৪১১ ও সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ২০২টি অপমৃত্যু মামলা হয়। আর আত্মহত্যার ঘটনায় অপমৃত্যুর বেশি মামলা হয়। আত্মহত্যা করা ব্যক্তির মধ্যে ৫২ শতাংশ পুরুষ ও ৪৮ শতাংশ নারী। তাদের প্রায় ৬০ শতাংশ গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন। আর ২৫ শতাংশের বেশি বিষপানে আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যা করা ব্যক্তির ২৫ শতাংশেরই বয়স থাকে ১৮ বছরের নিচে। তাছাড়া ১৯ থেকে ৩০ বছর বয়সী প্রায় ৩৮ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪৫ বছর বয়সী প্রায় ২২ শতাংশ এবং ১০ শতাংশের বয়স ৪৬ থেকে ৬০ বছর। ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক ৫ শতাংশ।
সূত্র জানায়, কোনো ব্যক্তি প্রাকৃতিক নিয়মের বাইরে মারা গেলে তাকেই অপমৃত্যু বা অস্বাভাবিক মৃত্যু বলে। ওই মৃত্যুর কারণে যে মামলা রেকর্ড করা হয়, তাকেই অপমৃত্যু বা ইউডি কেস বলে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৪ ধারা, পিআরবি ২৯৯ বিধি অনুযায়ী ওই মামলা রেকর্ড ও তদন্ত হয়। যেসব মৃত্যুতে অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ড হয়ে থাকে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে গলায় ফাঁসজনিত, বিষপানে মৃত্যুসহ আত্মহত্যা, সাপ বা হিংস্র পশু ও প্রাণীর আক্রমণে মৃত্যু, পাহাড় বা মাটিচাপায় মৃত্যু, নৌযানচালিত যানবাহন ডুবে মৃত্যু, পানিতে ডুবে মৃত্যু, বজ্রপাতে মৃত্যু, বিদ্যুতায়িত হয়ে মৃত্যু, গাছ বা ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু, আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া, আগ্নেয়াস্ত্রের কারণে মৃত্যু ও যন্ত্রপাতি চালাতে গিয়ে মৃত্যু। অপমৃত্যুজনিত কোনো ব্যক্তির মৃতদেহ দাফনের পরও যদি ওই ব্যক্তির মৃত্যু সম্পর্কে সন্দেহ দেখা দেয়, তবে পুলিশ অফিসারের লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ম্যাজিস্ট্রেটকে অবগত করে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মৃতদেহটি তুলে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো যায়।
সূত্র আরো জানায়, কারোর অস্বাভাবিক বা অপমৃত্যুর সংবাদ পেলে এবং ওই মৃত্যুর বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট অভিযোগ পাওয়া না গেলে থানার পুলিশ কর্মকর্তা অপমৃত্যুর বিষয়টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে আদালতকে অবহিত করে এবং ঘটনার তদন্ত করে। ওই ধরনের অস্বাভাবিক ও অভিযোগবিহীন মৃত্যুর মামলাই ইউটি কেস বা অপমৃত্যুর মামলা। ইউডি কেসের ঘটনা তদন্তের পর ঘটনার সঙ্গে কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া না গেলে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা পিআরবির ২৭৫ প্রবিধান অনুসারে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় ইউডি মামলা সেখানেই নিষ্পত্তি করেন। অপমৃত্যুর পর পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদন করে। তবে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সন্দেহ থাকলে অথবা অন্য কোনো কারণে এ সম্পর্কে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত নিয়মসাপেক্ষে পুলিশ অফিসার ময়নাতদন্তের জন্য পাঠাতে পারেন। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় চিহ্ন, লক্ষণ দেখে অপমৃত্যু মামলা হত্যা মামলায় পরিণত হতে পারে। যেমন আঘাত বা জখমের চিহ্ন, ধস্তাধস্তির চিহ্ন, গলায় কোনো কিছুর দাগ, শরীরের কোনো অংশ ফুলে যাওয়া, হাত-পায়ে রশি দিয়ে বাঁধার দাগ, গলায় রশির দাগ গোলাকার হওয়া, জিহ্বা বের হওয়া, মুখ দিয়ে লালা বের হওয়া, রক্তক্ষরণের চিহ্ন থাকা, চোখ ফুলে যাওয়া, মুখমণ্ডলে অস্বাভাবিক ভাব থাকা ইত্যাদি লক্ষণ দেখে ধারণা করা হয় যে হত্যা করার পর আত্মহত্যা হিসেবে সাজানো হয়েছে কি না। সেক্ষেত্রে মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয় করতে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। ময়না তদন্ত প্রতিবেদনকারী চিকিৎসকের মতামতের ভিত্তিতে অপমৃত্যুর মামলা হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।
এদিকে পুলিশ বিভাগ সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে আত্মহত্যার ঘটনা বৃদ্ধি অপমৃত্যুর মামলা বৃদ্ধির বড় কারণ। সবাই এখন দিনে দিনে অনলাইন ও মোবাইল ফোন ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। সবারই অনলাইনকেন্দ্রিক লাইফস্টাইল গড়ে উঠেছে। প্রযুক্তির কারণে তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীরা সহজেই একে অপরের সান্নিধ্যে চলে আসছে। আবেগ, হাসি, কান্না, সুখ, দুঃখগুলো সহজেই প্রযুক্তির মাধ্যমে অন্যের কাছে প্রকাশ করছে। ওসব কারণে আবেগতাড়িত হয়ে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায়। অনেক গেমস আত্মহত্যার প্রবণতাকে উদ্বুদ্ধ করে। প্রযুক্তি বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারও আত্মহত্যা প্রবণতা বাড়ানোর জন্য দায়ী। এখন কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু আপলোড করলে কেউ হয়তো না জেনেই আপত্তিকর কমেন্টস ও শেয়ার করে দিচ্ছে। তাও আত্মহত্যার প্রবণতা উসকে দেয়। গবেষণার মাধ্যমে আত্মহত্যার যথাযথ কারণগুলো চিহ্নিত করে প্রতিকারে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
অন্যদিকে পুলিশ সদর দপ্তর আত্মহত্যার প্রবণতা প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে এলাকাভিত্তিক কর্মশালা করার নির্দেশনা দিয়েছে। পাশাপাশি প্রত্যেক জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (ক্রাইম) নেতৃত্বে অপমৃত্যুর মামলাগুলো পর্যালোচনা করে কারণ নির্ণয় ও প্রতিকারের উদ্যোগ নিতে বলেছে।
                           
                           
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
                            
                       
     
                            
                        আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে আত্মহত্যার ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা
- আপলোড সময় : ২৯-১০-২০২৫ ১১:২৫:৫৬ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৯-১০-২০২৫ ১১:২৫:৫৬ অপরাহ্ন
 
                                  
                     
                             
                            
                             কমেন্ট বক্স 
                            
 
                          
                       
                        
                                      সর্বশেষ সংবাদ
                                
                                 
  স্টাফ রিপোর্টার
 স্টাফ রিপোর্টার  
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                