 
                            
                        বেড়েই চলেছে মব সৃষ্টি করে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা
- আপলোড সময় : ২৯-১০-২০২৫ ০২:১৫:০১ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৯-১০-২০২৫ ০২:৪৬:৩১ অপরাহ্ন
 
                                  
                     
                             
                            
                            
                               দেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে মব সৃষ্টি করে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সারা দেশে পুলিশের ওপর হামলার ৩১টি ঘটনা ঘটলেও গত আগস্টে তা বেড়ে ৫১টি হয়েছে। অর্থাৎ একটি মাসেই পুলিশের ওপর হামলা বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। বিগত ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে চলতি বছরের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১৪ মাসে পুলিশের ওপর ১৯৫টি ঘটনা ঘটেছে। আর দিন দিন বেড়েই চলেছে হামলার ঘটনা। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, মাদক অভিযান, অবৈধ দখল উচ্ছেদ কিংবা চাঁদাবাজি-ছিনতাই রোধের অভিযানে গিয়ে পুলিশ উলটো হামলার মুখোমুখি হচ্ছে। পুলিশ বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বার বার মবের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা বললেও দেশজুড়ে বেড়েই চলেছে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সারা দেশে নানা রকম মব হামলার ঘটনা ঘটেছে। আর তাতে শুধু সাধারণ মানুষই নয়, অনেক ক্ষেত্রে হামলার শিকার হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও। অনেক মব হামলার ঘটনা পুলিশের সামনে ঘটেছে। এমনকি অনেক ঘটনায় পুলিশকেও পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। গত এক সপ্তাহে পুলিশের ওপর এমন হামলা ও মবের ঘটনায় কয়েক জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। সূত্র জানায়, পুলিশের ওপর হামলার সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। সারা দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ৪৪টি হামলায় ৩৯ জন আসামিকে ছিনিয়ে নিয়েছে। বিভিন্ন মাজারের হামলা ঠেকাতে গিয়েও পুলিশ হামলার শিকার হয়েছে। ওসব ঘটনায় গাজীপুর, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহে পুলিশ একাধিক বার আক্রান্ত হয়েছে। ওসব ক্ষেত্রে তৌহিদি জনতার ব্যানারে উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তিরা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর পুলিশ মাঠপর্যায়ে অপারেশনের ধরন পরিবর্তন করেছে। বর্তমানে ‘আক্রমণাত্মক’ পুলিশিংয়ের পরিবর্তে আত্মসমর্পণমূলক পুলিশিং করায় হামলাকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সূত্র জানায়, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পুলিশ বাহিনী এখনো পুরোপুরিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ফলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি হয়নি। বরং পুলিশের অভিযান চলার মধ্যেই একের পর এক ডাকাতি, প্রকাশ্যে অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাই, গণপিটুনি দিয়ে হত্যা, ধর্ষণ, তৌহিদি জনতার ব্যানারে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাধা, মব সৃষ্টি করে বাড়িঘরে হামলা-লুটপাট, এমনকি পুলিশের ওপর হামলার মতো ঘটনাও অব্যাহত রয়েছে এখনো। অতিসম্প্রতি নরসিংদীতে সড়কে যানবাহন থেকে চাঁদা তোলার সময় আটক ব্যক্তিদের ছিনিয়ে নিয়ে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় সেখানকার একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহত হন। তাছাড়া, সিলেটে পুলিশের ওপর হামলায় শাহপরান থানার ওসিসহ পাঁচ জন আহত হন। তাছাড়া বিভাগেরই কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় মব সৃষ্টি করে পুলিশের ওপর হামলায় পাঁচ জন আহত হয়। ফেনীর সোনাগাজী থানার এক সহকারী উপ-পরিদর্শক ওয়ারেন্টভুক্ত দুই আসামিকে গ্রেফতার করতে তাদের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করার সময় আসামি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে পুলিশের কাছ থেকে একটি ওয়াকিটকি ও একটি শটগান কেড়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। ওই ঘটনায় ৬ পুলিশ সদস্যকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তাছাড়া চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকায় অবৈধ অটোরিকশা আটকের জেরে পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে। ৫০ থেকে ৬০ জন লোক ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের ওপর হামলা করে আটক করা অটোরিকশাটি ছিনিয়ে নেয়। হামলায় এক ট্রাফিক কনস্টেবল আহত হন। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে চোরাই মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে গিয়ে চোর এবং তাদের পরিবারের লোকজনের হামলায় পুলিশের ৬ সদস্য আহত হয়েছে। এদিকে সমপ্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ও পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন। ওই দুই সংগঠনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানানো হয়। পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, একটি কুচক্রী মহল সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ পুলিশের মনোবল দুর্বল করার নিমিত্তে ইউনিফর্মধারী পুলিশকে পেশাগত কাজে বাধা দেয়া এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ওসব ঘটনা ঘটিয়েছে। ওসব বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ পুলিশ সদা তৎপর রয়েছে এবং তারা পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আদর্শ ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করে যাবে। আর পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের ওপর একাধিক দুঃখজনক হামলার ঘটনা বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের নজরে এসেছে। ওসব অনাকাক্সিক্ষত ও বেআইনি ঘটনা শুধু পুলিশ বাহিনীর জন্য নয়, রাষ্ট্রের সার্বিক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার জন্যও হুমকিস্বরূপ। পুলিশের বৈধ দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়া, হামলা বা লাঞ্ছনার ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক, নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে অপরাধ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক জানান, পুলিশের মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের সঙ্গে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক সমন্বয়হীনতা রয়েছে। আর তা কাটিয়ে উঠতে তো পারেইনি, বরং তা আরো বাড়ছে। এর প্রভাব পড়ছে শৃঙ্খলা রক্ষায়। অপরাধীরা এমন পরিস্থিতির সুযোগ নেয়। তারা যখন বুঝতে পারে পুলিশের ভেতরে সমন্বয়হীনতা আছে, তাদের ওপর আক্রমণ করলে কিছু হবে না, পুলিশ নিজেই ভিন্ন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যাবে। ওই কারণেই পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা বেড়েছে। এক বছরে পুলিশ নিজের অবস্থান পরিবর্তনে জোরালো কোনো ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত গ্রহণ করতে পারেনি বলেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
                           
                           
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
                            
                       
     কমেন্ট বক্স 
                            
 
                          
                       
                        
                                      সর্বশেষ সংবাদ
                                
                                 
  স্টাফ রিপোর্টার
 স্টাফ রিপোর্টার  
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                