 
                            
                        ‘ডেঙ্গু’ বাড়ছে মৃত্যু কাঁপছে গোটা দেশ
- আপলোড সময় : ২৮-১০-২০২৫ ০৫:৩১:১১ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৮-১০-২০২৫ ০৫:৩১:১১ অপরাহ্ন
 
                                  
                     
                             
                            
                            
                               * ডেঙ্গু কেড়ে নিল আরও ৬ প্রাণ, হাসপাতালে ভর্তি ৯৮৩
* শুধু ডেঙ্গু রোগী নয়, ভোগান্তি পুরো পরিবারের
* হাসপাতালেই ডেঙ্গুর প্রজনন কেন্দ্র, রোগীদের অসন্তোষ
* হাসপাতালের ভেতরে মশার প্রজননক্ষেত্র গড়ে উঠলে সংকটে রূপ নিবে জনস্বাস্থ্য : স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা
ডেঙ্গু জ্বরে কাঁপছে দেশ। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সারাদেশে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা। ইতোমধ্যে দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। গত জুলাই-আগস্টের পর গোটা দেশজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশের স্বাস্থ্যসেবাকে চাপে ফেলেছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এবং হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ অনেক বেশি, যেখানে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা হিমশিম খাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছে। এরপরও বর্তমানে দেশের প্রায় সব জেলাতেই ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীদের উপচে পড়া ভিড়, যেমন ঢাকার বাইরে থেকেও রোগী আসছে, যার ফলে অনেক হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য বিশেষ ইউনিট চালু করা হয়েছে। ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিদিনের রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন এবং তাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে। তবে সর্বশেষ ডেঙ্গু কেড়ে নিল আরও ৬ প্রাণ, হাসপাতালে ভর্তি ৯৮৩। চিকিৎসা খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীর বাইরে টানা ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু রোগী ব্যবস্থাপনা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, বিশেষায়িত চিকিৎসা সরঞ্জাম পর্যাপ্ত নেই। ফলে রাজধানীর বাইরে ডেঙ্গু আরও প্রাণঘাতী হয়ে ওঠতে পারে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান জানান, ডেঙ্গু এখন সিজনাল নেই, সারা বছরই হচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হলে এটা বাড়ছে। গত বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ জুন মাস থেকে শুরু হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছর মে মাস থেকেই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিরোধক ওষুধ ব্যবহারের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সব জায়গায় প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। একই সঙ্গে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। তাহলে হয়তো রক্ষা পাব, না হলে ডেঙ্গু এবার মহামারি আকার ধারণ করতে পারে।
ডেঙ্গু কেড়ে নিল আরও ৬ প্রাণ, হাসপাতালে ভর্তি ৯৮৩: মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে একদিনে আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৯৮৩ জন। সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। চলতি বছর এখন পর্যন্ত মশাবাহিত জ্বরটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬৯ জনে। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১১১ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৭১ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২২৭ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১৩৩ জন, খুলনা বিভাগে বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬২ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪১ জন রয়েছেন।           গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৭০ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছরে এ যাবত হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন মোট ৬৩ হাজার ৪১৪ জন ডেঙ্গুরোগী।
হাসপাতালেই ডেঙ্গুর প্রজনন কেন্দ্র, রোগীদের অসন্তোষ: সাড়ে চার মাসের শিশু আদিবা নূর। ঠান্ডাজনিত সমস্যায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয় আদিবার পরিবার। চিকিৎসক হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। পরে আদিবার ঠাঁই হয় মাতুয়াইল শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে হাসপাতাল তাকে ভর্তি নেয়। আট দিন পর কিছুটা সুস্থ হলে এবার বাসায় যাওয়ার পালা। কিন্তু না, এখানে ঘটল আরেক বিপত্তি। হাসপাতালের মশার কামড়ে এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হলো শিশু আদিবা। শুধু আদিবা নয়, একই অবস্থা হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা শত শত রোগীদের।
হাসপাতাল পরিদর্শনে দেখা গেছে, ভবনের পেছনের অংশে জমে থাকা পানি, করিডোরে রাখা বর্জ্য ও খোলা ময়লার স্তূপে ভনভন করছে মশা। রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ চিকিৎসা নিতে এসে এখন মশার কামড়েই বেশি ভুগতে হচ্ছে। রোগীদের অনেকে বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি, কিন্তু এখানেও মশার কামড়ে শান্তি নেই। মনে হচ্ছে হাসপাতাল নয়, মশার অভয়ারণ্য। চিকিৎসক ও কর্মচারীরাও মশার উপদ্রবে ভোগান্তির কথা স্বীকার করেছেন। তারা জানান, নিয়মিত ফগিং বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রম না থাকায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাসপাতালেই যদি এমন নোংরা পরিবেশ থাকে, তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ আরও কঠিন হয়ে পড়বে। তারা দ্রুত পরিচ্ছন্নতা ও ফগিং কার্যক্রম জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে ভবনের পেছনের দিকে ড্রেনের মুখগুলো খোলা। জমে আছে পানি। হাসপাতালটির পশ্চিম পাশে ময়লার স্তূপ। তার পাশে বড় একটি ঝিল। উত্তর পাশে খোলা ঢাকনা, কোথাও কোথাও পানি জমে থাকে। এছাড়া হাসপাতালে বহিরাংশের উত্তর পাশের দেওয়াল ঘেষে পানি জমে আছে। আছে ময়লার স্তূপও। ফলে মশা বেড়েছে। পরিবেশও দূষণ হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় প্লাস্টিকের বোতল, খাবারের প্যাকেট ও পুরনো সামগ্রী পড়ে আছে, যেগুলোতে জমে থাকা পানি মশার ডিম ফোটার আদর্শ স্থান তৈরি করেছে। খোলা ডাস্টবিন থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতাল প্রশাসনের অবহেলায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা করা হয় না, ফগিং কার্যক্রমও নেই বললেই চলে। ফলে সন্ধ্যা নামলেই ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মশার ঝাঁক দেখা যায়। একজন রোগীর স্বজন বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি, কিন্তু এখানে এসে দেখি মশার ভয়ে ঘুমাতে পারি না। রোগ সারানোর জায়গায় যদি এমন অবস্থা হয়, তাহলে বাইরে মানুষ কোথায় যাবে? হাসপাতালের এক নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রতিদিনই রোগীদের অভিযোগ শুনতে হয়। আমরাও মশার কামড়ে বিরক্ত। কর্তৃপক্ষকে বহুবার জানিয়েছি, কিন্তু স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। চিকিৎসকদের মতে, হাসপাতাল এমন একটি স্থান যেখানে সর্বাধিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা উচিত। সেখানে মশার এমন আধিপত্য শুধু ডেঙ্গু রোগীদের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে না, বরং নতুন সংক্রমণের আশঙ্কাও তৈরি করছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশনের যৌথ উদ্যোগে হাসপাতালগুলোতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান জোরদার করার দাবি উঠেছে। অন্যথায় ডেঙ্গু মোকাবিলায় অর্জিত সাফল্য আবারও ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। মাতুয়াইল শিশু ও মাতৃ-স্বাস্থ্য হাসপাতালের বর্তমান চিত্র যেন এক ভয়াবহ বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি যেখানে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে এসে রোগীরাই নতুন করে মশাবাহিত রোগের শিকার হওয়ার শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন।
এ বিষয়ে মাতুয়াইল শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, দেখুন, শনির আখড়া, জুরাইন, মাতুয়াইল এলাকা ডেঙ্গুর ডেঞ্জার জোন। এটা সরকারও জানে, আমি আপনি সবাই জানি। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে মশক নিধনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। সিটি করপোরেশনকে বারবার চিঠি দিয়েছি। তারা কাজ করছে, তবে তা আশানুরূপ নয়। তিনি বলেন, আমরা ড্রেনেজ লাইন সংস্কারে কাজ করেছি। সেখান থেকে প্রায় ৮০ বস্তা বর্জ্য উত্তোলন করা হয়। মশক নিধনে আমরা সিটি করপোরেশনকে অনুরোধ করেছি। ভিডিওকলেও তাদের আমি বিষয়টি দেখিয়েছি। তারা যতটুকু করেন তা খুবই সামান্য। ধরুন, আমরা ২০০০ মশা মারতে পারি, কিন্তু মশা উৎপাদন হয় দুই লাখ। তিনি আরও বলেন, আমরা বর্জ্য অপসারণের কাজ করছি, তাই না খোলা। কাজ শেষ হলে শিগগির তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। 
ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল ডা. তানভীর আহমেদ বলেন, দেশের ডেঙ্গু রোগীদের অন্যতম ঠিকানা এই হাসপাতাল। সারাদেশে যা ভর্তি হয়, তার বড় একটা অংশ এই হাসপাতালে আসে এবং তারা সিরিয়াস রোগী। সেই তুলনায় এই হাসপাতালের বেড সংখ্যা কম। তবু সীমাবদ্ধতার মধ্যে ভালো সেবা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এই চিকিৎসক বলেন, বর্তমানে ২৮৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে। এরমধ্যে শিশু ওয়ার্ড রয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন আউটডোরে ৭০০-১০০০ জন রোগী সেবা নিচ্ছেন। সেইসঙ্গে রোগীরা নামমাত্র ফি দিয়ে বিনামূল্যে কয়েকটি সেবা নিতে পারছেন।
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয় ২০০০ সাল থেকে। এরপর গত ২৫ বছরে আমরা ঢাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। আরও যে কত বছর লাগবে সেটাও জানা নেই। ঢাকার বাইরে পাঁচ গুণ মানুষ বসবাস করেন। সুতরাং মশা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে রোগটি আগামী ৩০ বছর থাকবে, এটা খুব সহজে অনুমান করা যায়। তবে এ বিষয়ে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোমেন মজুমদার বলেন, আগে ডেঙ্গু হলে জ্বর হতো, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা হতো। তবে এবারে ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো অন্যরকম। যেমন কেউ তীব্র পেটব্যথা নিয়ে আসছেন, কারও হার্টের সমস্যা বেড়েছে। কারও ব্রেনে ইফেক্ট ফেলেছে। অন্যান্য বছরের চাইতে এবারে এই জটিলতাগুলো অনেক বেশি।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি বরিশাল ও ঢাকা বিভাগে। এরপরে রয়েছে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী। ঢাকায় বেশি মানুষের বসবাস, সে কারণেই হয়তো ঢাকায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি। তিনি বলেন, মশা নিধনের কাজ স্বাস্থ্য অধিদফতরের নয়, এটা সিটি করপোরেশনের কাজ। এ কাজের সমন্বয় অতি জরুরি, কিন্তু তা করা হচ্ছে না। জনসচেতনতা বাড়াতে হবে, মশারি লাগিয়ে ঘুমাতে হবে, এছাড়া জ্বর হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা যত ব্যবস্থাই নিই না কেন, জনগণ সচেতন না হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা দুষ্কর। ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে এই মৌসুমে। গত বছরের এই সময়টাতে ডেঙ্গু বেড়েছিল। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর এই সময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি।
                           
                           
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
                            
                       
     কমেন্ট বক্স 
                            
 
                          
                       
                        
                                      সর্বশেষ সংবাদ
                                
                                 
  সফিকুল ইসলাম
 সফিকুল ইসলাম  
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                