কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ব্যবসার প্রলোভন দেখিয়ে নিলুফা জাহান লিপি নামে এক নারীর কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে স্কুলের সিনিয়র শিক্ষিকা ফারজানা আহমেদ সুমনার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষিকার শাস্তি ও প্রাপ্য টাকা ফেরত পেতে গত বুধবাররাতে শহরের কমলপুর হাজী হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী। এসময় তার স্বামী মাসুম সরকার সঙ্গে ছিলেন। ভুক্তভোগী নিলুফা জাহান লিপির দাবি, শিক্ষিকা ফারজানা আহমেদ সুমনা একজন ভদ্রবেশী প্রতারক। ভৈরবের বহু নারী-পুরুষ তার প্রতারণার শিকার হয়ে লাখ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মিষ্টভাষী শিক্ষিকা একই ব্যবসায় পার্টনারের কথা বলে ও সুদের বিনিময়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে মানুষকে সর্বস্বান্ত করেছেন। লিখিত বক্তব্যে নিলুফা জাহান লিপি জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে কাপড়ের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। একই ভবনে বসবাস করার সুবাদে ফারজানা আহমেদ সুমনার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরিচয়ের একপর্যায়ে ওই শিক্ষিকা লিপিকে এক কবিরাজের কাছে নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের ঝাড়ফুঁক করান। পরবর্তীতে তাকে ধর্ম মেয়ে বানিয়ে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেন। তার প্রতি গভীর বিশ্বাসের সুযোগ তৈরি করে প্রথমে ‘উৎসব গ্যালারি’ ব্যবসার কথা বলে আড়াই লাখ টাকার কাপড় নেন। পরবর্তীতে স্বপ্ন আউটলেট নামে একটি নতুন ব্যবসা শুরু করার কথা বলেন ও সেই ব্যবসায় ৩০ শতাংশ পার্টনাশিপের প্রলোভন দেখান। এই প্রলোভনে তার কথায় বিশ্বাস করে প্রবাসী স্বামীর পাঠানো পোস্ট অফিসের এফডিআর ভেঙে ১০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার বিক্রি করে আরও ২০ লাখ টাকাসহ ওই শিক্ষিকার হাতে তুলে দেন। ৩০ লাখ টাকার একটি ব্যবসায়িক চুক্তি হয় তাদের মধ্যে। তিনি আরও জানান, এর কিছুদিন পর ওই শিক্ষিকা ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে কয়েক মাসের জন্য আরও ৭০-৮০ লাখ টাকা লাগবে জানান। ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা লোন পেলে সব টাকা ফেরত দেবেন বলে আশ্বস্ত করেন। পরে ওই লিপি বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে সুদের বিনিময়ে আরও ৭০ লাখ টাকা এনে দেন শিক্ষিকা ফারজানাকে। কিছুদিন পর তিনি জানতে পারেন ফারজানা আহামেদ ও তার স্বামী শামীম আহমেদ ভূঁইয়া ভৈরবের বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে একইভাবে প্রতারণা করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ওই টাকা ফেরত চাইলে তারা উল্টো মিথ্যা মামলা ও হুমকি দিয়ে ভয় দেখাতো বলে অভিযোগ করেন। ভুক্তভোগী লিপি বলেন, পাওনা টাকা ফেরত চাইলে বারবার তারিখ দিয়ে গড়িমসি করে সময় পার করছেন ওই শিক্ষিকা। সর্বশেষ তিন মাসের সময় নিয়ে ২০২৪ সালের ১৮ এপ্রিল শিক্ষিকার নামের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ৭০ লাখ টাকার একটি চেক দেন লিপিকে। কিন্তু ২১ এপ্রিল ব্যাংকে চেক নিয়ে গেলে জানতে পারেন তার অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। ফলে চেকটি ডিজঅনার হয়। পরবর্তীতে ওই শিক্ষিকাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয় ও কিশোরগঞ্জ আদালতে ৭০ লাখ টাকার চেক ডিজঅনারের মামলা করা হয়। ভুক্তভোগী জানান, ফারজানা আহমেদ ও তার স্বামী তাদের পাওনা টাকা ফেরত না দিয়ে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও মিথ্যা মামলার হুমকি দিচ্ছেন। বর্তমানে তিনি পরিবার নিয়ে ভয় ও আতঙ্কে রয়েছেন। তিনি প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। একই সঙ্গে প্রতারণায় অভিযুক্ত শিক্ষিকা ফারজানা আহমেদ ও তার স্বামী শামীম আহমেদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। অভিযুক্ত শিক্ষিকা ফারজানা আহমেদ সুমনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আদালতের মাধ্যমে সবকিছুর ফয়সালা হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata