ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫ , ৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
কক্সবাজারে ২ শিশু হত্যায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৪ জনের যাবজ্জীবন ত্রিভুজ প্রেমের বলি জবি ছাত্র জোবায়েদ : পুলিশ চট্টগ্রাম বন্দর অচল হওয়ার আশঙ্কা এনসিপির জন্য সব দলের নিবন্ধন আটকে রেখেছে ইসি বিমানবন্দরে আগুন ফ্যাসিস্ট হাসিনার নাশকতার অংশ-আমান শেখ হাসিনা আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক নয়-আইনজীবী আগ্রাসী রূপে ডেঙ্গু চালু হচ্ছে না শাহজালালের নতুন কার্গো ভিলেজ অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় যাওয়ার আহ্বান বিএনপির বিজয় নিয়ে ক্লাসে ফিরছেন শিক্ষকরা নতুন বছরে মাধ্যমিকের বই পাওয়া নিয়ে শঙ্কা আ’লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান ক্রমেই বাড়ছে বিদেশি ঋণের বোঝা মিথ্যা তথ্যের দ্রুত মোকাবিলা করতে ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে হবে: সিইসি আতঙ্ক অস্থিরতায় ব্যবসায়ীরা বিএনপির সঙ্গে আইআরআই প্রতিনিধি দলের বৈঠক মা মাছ ধরা বন্ধ করতে হবেÑপ্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা পাঠাও চালককে মারধর করে দেড় লাখ টাকা ছিনতাই নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুনের মামলার আপিল শুনানি ৪ সপ্তাহ মুলতবি ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের খুঁটি রেখেই ভবন নির্মাণ
বর্ধিত ট্যারিফ নিয়ে সংকট

চট্টগ্রাম বন্দর অচল হওয়ার আশঙ্কা

  • আপলোড সময় : ২২-১০-২০২৫ ০৫:০৯:২৩ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২২-১০-২০২৫ ০৫:০৯:২৩ অপরাহ্ন
চট্টগ্রাম বন্দর অচল হওয়ার আশঙ্কা
* ব্যবসায়ীদের এক সপ্তাহের আলটিমেটাম * প্রতিবাদের মুখে ট্যারিফে গেট পাস ফির বর্ধিত অংশ স্থগিত দেশের আমদানি-রফতানির ৯২ শতাংশ পরিবাহিত হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। দেশের অর্থনীতির হৃদপিণ্ড খ্যাত এ বন্দর বিগত বছরগুলোতে ধারাবাহিক লাভ করে আসছে। সম্প্রতি বন্দরের বিভিন্ন সেবায় গড়ে ৪১ শতাংশ ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ আমদানি-রফতানিকারকরা। কোনো কারণে বন্দর অচল হলে দায় সরকারকে নিতে হবে জানিয়েছেন তারা। এদিকে যানবাহন মালিক শ্রমিকদের প্রতিবাদের মুখে গত ১৯ অক্টোবর বর্ধিত ট্যারিফের মধ্যে বন্দরে প্রবেশের বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের গেট পাস (প্রবেশ অনুমতি) ফি স্থগিত করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি সিঅ্যান্ডএফ কর্মচারীদের গেট পাস ফির বর্ধিত অংশ স্থগিত করা হয়। এর একদিন আগে ১৮ অক্টোবর বন্দর ব্যবহারকারীদের এক সভায় বর্ধিত ট্যারিফ নিয়ে সাতদিনের মধ্যে সমাধান না হলে বন্দর বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন ব্যবসায়ী নেতারা। এর মধ্যে সেই আলটিমেটামের চারদিন চললেও এখনো বর্ধিত ট্যারিফ নিয়ে ব্যবসায়ীদের দাবির বিষয়টি সুরাহা হয়নি। ফলে বন্দরের সামনের কর্মযজ্ঞ নিয়ে নতুন সংকটের আভাস মিলছে। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক ও ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব। তিনি তৈরি পোশাক রফতানিকারী প্রতিষ্ঠান ইন্ডিপেন্ডেন্ট অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বলেন, বন্দরের বর্ধিত ট্যারিফ নিয়ে আমরা ব্যবসায়ীদের নিয়ে সভা করেছি। বন্দর কর্তৃপক্ষ দাবি করছে-তারা ট্যারিফ ৪১ শতাংশ বাড়িয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে ৪শ শতাংশ পর্যন্তও ট্যারিফ বেড়েছে। তিনি বলেন, আমরা ব্যবসায়ী। রাস্তায় নেমে হয়তো আন্দোলন করতে পারবো না। কিন্তু ব্যবসায়ীরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করছে। বন্দরের উচিত দ্রুততম সময়ে বিষয়টি বিবেচনা করে বর্ধিত ট্যারিফ স্থগিত করা। চট্টগ্রামের শীর্ষ শিল্প গ্রুপ সিকম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন, ব্যবসায়ীদের স্বার্থ আদায়ে কথা বলার কোনো প্ল্যাটফর্ম না থাকার সুযোগে বন্দর কর্তৃপক্ষ ট্যারিফ বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্ধিত ট্যারিফ চাপিয়ে দেওয়া হলে ব্যবসায়ীরা মেনে নেবে না। ট্যারিফ বাড়িয়ে বিদেশি অপারেটর নিয়োগের পরিকল্পনা হতে পারে না। আমরাও ট্যারিফ বাড়ানোর পক্ষে, তবে তা আলোচনার মাধ্যমে হতে হবে। তিনি বলেন, ‘৩৯ বছর পর বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। এটি সঠিক তথ্য নয়। বন্দরের ট্যারিফ নির্ধারিত হয় ডলারে। ১৯৮৬ সালে যখন বন্দর কর্তৃপক্ষ ট্যারিফ নির্ধারণ করে তখন আমাদের টাকার বিপরীতে ডলারের দাম ছিল ৩০-৩১ টাকা। ৩৯ বছর পর এখন ডলারের দাম ১২২ টাকা হিসাব করলেও বন্দরের বিদ্যমান ট্যারিফ ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চারগুণ হয়েছে। বন্দর বর্তমানে যেভাবে ট্যারিফ বাড়িয়েছে, তাতে রফতানি খাতসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ বর্ধিত ট্যারিফ নিয়ে ১৮ অক্টোবর পোর্ট ইউজার্স ফোরামের সেই সভায় তিনি বলেন, ‘যদি কোনো কারণে বন্দর অচল হয়, তবে এর দায় সরকারের। ব্যবসায়ীদের ওপর দায় চাপানো যাবে না।’ বর্ধিত ট্যারিফ প্ল্যান অনুযায়ী, ৫৬টি সেবার বিপরীতে গড়ে প্রায় ৪১ শতাংশ মাশুল বাড়ছে। কিছু কিছু সেবায় মাশুল দ্বিগুণ থেকে চার গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। পণ্যভর্তি প্রতি টিইইউস (২০ ফুট একক) কনটেইনারে বর্তমানে গড়ে মাশুল নির্ধারিত হয়েছে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকা, যা আগে গড়ে কনটেইনারপ্রতি ছিল ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা। নতুন ট্যারিফ রেট অনুযায়ী, কনটেইনার ওঠানো-নামানোতে আগের ৪৩ দশমিক ৪০ ডলার চার্জ বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬৮ ডলার। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘বন্দর বলছে প্রত্যেক সেবায় গড়ে ৪১ শতাংশ মাশুল বাড়িয়েছে। সেখানে শিপিংয়ের সেবাগুলোতে হিসাব করলে গড়ে ৭০ শতাংশের ওপর বাড়ানো হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে মাশুল বেড়ে ৫শ গুণ হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর। এখানে জাহাজ বন্দরে প্রবেশে টাগ ব্যবহার করতে হয়। বর্ধিত মাশুলের কারণে আগে একটি জাহাজ বন্দরের জেটিতে প্রবেশ করানোর জন্য টাগের ভাড়া যেখানে ২৬শ ডলার ছিল, সেটি বেড়ে ১৬ হাজার ডলারের ওপরে হয়েছে।’ এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘অনেক মেইন লাইনের সঙ্গে শিপিং এজেন্টগুলোর ছয় মাস-এক বছরের চুক্তি রয়েছে। তারা সারচার্জ হিসেবে ব্যয় সমন্বয় করছে। চুক্তি শেষ হলে তারা সরাসরি চার্জ বাড়িয়ে দেবে। এতে জাহাজের ভাড়াও বাড়বে। যেটি প্রত্যক্ষভাবে দেখা যাবে না। জাহাজের ভাড়া আমদানিকারকদের সঙ্গে সমন্বয় করবে। তখন আমদানিকারকরা তাদের আমদানি করা পণ্যের সঙ্গে খরচ সমন্বয় করবে। তাতে বাজারে বাড়বে পণ্যের দাম। যার প্রত্যক্ষ প্রভাবে ভোক্তা হিসেবে সাধারণ মানুষ বর্ধিত ট্যারিফের চাপ বহন করবে।’ চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীদের আলটিমেটামের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বর্ধিত ট্যারিফ নিয়ে বন্দর সংকটে পড়তে যাচ্ছে। কদিন আগে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি মালিক শ্রমিকরা তাদের গাড়ি না চালানোর কর্মসূচির কারণে বন্দরের অপারেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বন্দর কর্তৃপক্ষ বর্ধিত গেট পাস ফি স্থগিত করেছে। এখন পোর্ট ইউজার্স ফোরামের সভায় এক সপ্তাহের আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। বন্দরের উচিত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা।’ তিনি বলেন, ‘বন্দর কোনো শিল্প বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয়। সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম বন্দর ধারাবাহিক লাভবান প্রতিষ্ঠান। সেখানে কেন তাদের ট্যারিফ বাড়াতে হবে? সেবার চার্জ বাড়িয়ে কেন তাদের অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করতে হবে? অথচ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষ যখন আলোচনা করে, তখন সব ব্যবসায়ীই প্রয়োজনে ১০-১২ শতাংশ ট্যারিফ বাড়ানোর পরামর্শ দেন। তাও একবারে নয়, ধাপে ধাপে বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বন্দর ব্যবসায়ীদের কোনো কথাই কর্ণপাত করেনি।’ সৃষ্ট সংকট মোকাবিলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ সংকট বন্দরের একার সংকট নয়। এটি দেশের সাধারণ মানুষের সংকট, দেশের অর্থনীতির সংকট। সরকারের উচিত এ সংকট মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।’

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স