ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫ , ৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
কক্সবাজারে ২ শিশু হত্যায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৪ জনের যাবজ্জীবন ত্রিভুজ প্রেমের বলি জবি ছাত্র জোবায়েদ : পুলিশ চট্টগ্রাম বন্দর অচল হওয়ার আশঙ্কা এনসিপির জন্য সব দলের নিবন্ধন আটকে রেখেছে ইসি বিমানবন্দরে আগুন ফ্যাসিস্ট হাসিনার নাশকতার অংশ-আমান শেখ হাসিনা আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক নয়-আইনজীবী আগ্রাসী রূপে ডেঙ্গু চালু হচ্ছে না শাহজালালের নতুন কার্গো ভিলেজ অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় যাওয়ার আহ্বান বিএনপির বিজয় নিয়ে ক্লাসে ফিরছেন শিক্ষকরা নতুন বছরে মাধ্যমিকের বই পাওয়া নিয়ে শঙ্কা আ’লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান ক্রমেই বাড়ছে বিদেশি ঋণের বোঝা মিথ্যা তথ্যের দ্রুত মোকাবিলা করতে ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে হবে: সিইসি আতঙ্ক অস্থিরতায় ব্যবসায়ীরা বিএনপির সঙ্গে আইআরআই প্রতিনিধি দলের বৈঠক মা মাছ ধরা বন্ধ করতে হবেÑপ্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা পাঠাও চালককে মারধর করে দেড় লাখ টাকা ছিনতাই নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুনের মামলার আপিল শুনানি ৪ সপ্তাহ মুলতবি ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের খুঁটি রেখেই ভবন নির্মাণ

ক্রমেই বাড়ছে বিদেশি ঋণের বোঝা

  • আপলোড সময় : ২২-১০-২০২৫ ০৪:৪১:২৩ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২২-১০-২০২৫ ০৪:৪১:২৩ অপরাহ্ন
ক্রমেই বাড়ছে বিদেশি ঋণের বোঝা
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিদেশি ঋণের চাপ ক্রমেই বাড়ছে। গত এক দশকে ধারাবাহিকভাবে ঋণ গ্রহণ বেড়েছে, বিশেষ করে অবকাঠামো ও জ্বালানি খাতে বড় প্রকল্প হাতে নেওয়ার কারণে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে যেখানে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২০ বিলিয়ন ডলারের মতো, সেখানে বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১২ বিলিয়ন ডলারে। এই ঋণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঋণ পরিশোধের দায়ও বহুগুণে বেড়ে গেছে। চলতি অর্থবছরে ঋণ পরিশোধের জন্য প্রায় সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হবে, যা পাঁচ বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ঋণ নেওয়া নিজেই সমস্যা নয়, বরং সমস্যা তৈরি হয় যখন ঋণ থেকে প্রত্যাশিত আয় আসে না বা ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বাড়ে না। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, মেগা প্রকল্পগুলো থেকে প্রত্যাশিত আয় আসতে সময় লাগছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কিংবা কর্ণফুলী টানেল- সবগুলো প্রকল্পেই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এসব প্রকল্পের অর্থনৈতিক সুফল পুরোপুরি আসতে আরও কয়েক বছর সময় লাগবে। ফলে ঋণ পরিশোধের চাপ এখনই বাড়ছে, অথচ আয় বাড়ছে না। তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান বৈদেশিক ঋণের মধ্যে প্রায় ৮১ বিলিয়ন ডলারই বেড়েছে গত সাড়ে ১৫ বছরে। এ সময়ে সরকার আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, এআইআইবি-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ব্যাপক হারে ঋণ নিয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তারাও বিদেশি উৎস থেকে কম সুদের ঋণে ঝুঁকেছেন। বৈদেশিক এ ঋণের মধ্যে সরকারি খাতে রয়েছে প্রায় ৮২ শতাংশ, আর বেসরকারি খাতে রয়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত মার্চ মাসে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ১০৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৪৮০ কোটি ডলার। সেই হিসেবে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ঋণের স্থিতি বেড়েছে ৭৩৬ কোটি ডলার। ছয় মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৮৪৩ কোটি ডলার; গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ ছিল ১০ হাজার ৩৭৩ কোটি ডলার। গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিভিন্ন প্রকল্পের নামে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হয়। ২০২৪ সাল থেকে এ ঋণগুলোর বিপুল পরিমাণ পরিশোধ শুরু হয়, যা সরকারের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে। এ সময় দেশি-বিদেশি ঋণ ও সরকারের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আবারও বিদেশি ঋণ নেওয়া হয়। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়ায় দেশে ডলারের সংকট তৈরি হয়। বিদায়ী সরকারের সময়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ, বিদেশি ঋণ বৃদ্ধি ও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও রিজার্ভের পতন ঠেকানো সম্ভব হয়নি। বর্তমানে রিজার্ভ নেমে এসেছে ২৪ বিলিয়ন ডলারে। এদিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সমপ্রতি বাংলাদেশের জন্য ঋণ গ্রহণে সীমা বেঁধে দিয়েছে। তাদের শর্ত অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ৮.৪৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ নিতে পারবে। এর মধ্যে প্রথম তিন মাসে সর্বোচ্চ ১.৯১ বিলিয়ন, ছয় মাস শেষে ৩.৩৪ বিলিয়ন এবং পুরো অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৮.৪৪ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ঋণ নেওয়া যাবে। আইএমএফের সর্বশেষ ঋণ স্থায়িত্ব বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাংলাদেশের ঋণ-রপ্তানি অনুপাত দাঁড়িয়েছে ১৬২ শতাংশের বেশি, যা প্রাক্কলিত মাত্রার তুলনায় অনেক বেশি। একইভাবে ঋণ-রাজস্ব অনুপাতও বেড়ে গেছে। অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মনে করেন, আগে বাংলাদেশের ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে আশাবাদী থাকা যেত, কিন্তু এখন বাস্তবতা বদলেছে। বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি এবং রপ্তানি আয়ের সীমাবদ্ধতা ঋণ পরিশোধকে কঠিন করে তুলছে। সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হানও সতর্ক করেছেন, বিদেশি ঋণ ও ঋণ পরিশোধের বোঝা অনেক বেড়েছে। যেহেতু এই ঋণ বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধ করতে হয়, তাই রাজস্ব ও রপ্তানির সক্ষমতা না বাড়ালে ভবিষ্যতে বড় সংকট তৈরি হতে পারে। বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের বড় অংশ এসেছে অবকাঠামো খাতে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে নেওয়া ঋণই এককভাবে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার। মেট্রোরেল প্রকল্পে জাপানের ঋণ প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার। কর্ণফুলী টানেল, পদ্মা রেল সংযোগ, এলএনজি টার্মিনালসহ আরও অনেক প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এসব প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নে দেরি ঋণের বোঝা আরও বাড়িয়ে তুলছে। আন্তর্জাতিক তুলনায় বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ এখনো জিডিপির প্রায় ২২ শতাংশের মতো, যা আপাতদৃষ্টিতে ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তবে ঋণ-রপ্তানি অনুপাত এবং ঋণ-রাজস্ব অনুপাত দ্রুত বাড়ছে। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ঘানার মতো দেশগুলোও একইভাবে ঋণ সংকটে পড়েছিল। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, বাংলাদেশ যদি এখনই সতর্ক না হয়, তবে একই ধরনের সংকটে পড়তে পারে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজস্ব আয় বাড়ানো এবং করজাল সমপ্রসারণ জরুরি। রপ্তানি বাজার বৈচিত্র্য না করলে সামান্য বৈশ্বিক সংকটেই বড় ধাক্কা খাওয়ার ঝুঁকি থাকবে। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে ঋণ নির্ভরতা কমাতে হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করতে হবে। একই সঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে ঋণ ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ানো জরুরি। সব মিলিয়ে, বিদেশি ঋণের বোঝা এখন বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আয় বাড়লেও ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা না বাড়ালে ভবিষ্যতে ঋণ সংকট আরও তীব্র হতে পারে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স