ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫ , ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
পরিবর্তন আসছে সরকারি কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনায় সবাইকে ছাতার নিচে আনতে ভিত গড়ছে ঐকমত্য কমিশন জুনে ৩২৪টি রাজনৈতিক মিথ্যা তথ্য শনাক্ত : সিজিএস অন্তর্বর্তী সরকারের বিদায়ের সময় এসেছে-দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য গাজীপুরে আসন বাড়ছে কমছে বাগেরহাটে : ইসি ৩৯টি সংসদীয় আসনে আসছে পরিবর্তন : ইসি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণে ১৫ সদস্যের কমিটি শান্তি মিশনে মানের দিক থেকে শীর্ষস্থানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী-মার্কিন রাষ্ট্রদূত রাশিয়ায় ভূমিকম্পের পর আঘাত হেনেছে সুনামি কুড়িগ্রামের উলিপুরে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার সিলেটে স্কুলছাত্র সুমেল হত্যায় ৮ আসামির মৃত্যুদণ্ড জুলাইয়ের আহত-নিহতদের তালিকায় অসঙ্গতি পাওয়া গেছে-মুক্তিযোদ্ধা উপদেষ্টা সবুজায়ন স্বপ্নে খরা ডেঙ্গুতে আরও ২ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৩৮৬ সড়কে আলু ফেলে নওগাঁর কৃষকদের মানববন্ধন রাজধানীতে মাসে ২০টিরও বেশি হত্যা ও ৫টি ডাকাতি হচ্ছে রিয়াদের বাসা থেকে আড়াই কোটির চেক-এফডিআর নথি উদ্ধার এনসিপির সমাবেশে হামলায় আরেক মামলা আসামি সাড়ে ৫ হাজার তাবলীগ জামাতের দুই পক্ষের বিবাদ মেটাতে হচ্ছে কমিটি : ধর্ম উপদেষ্টা ভয়াবহতার মূলে এডিস মশার অস্বাভাবিক প্রজনন
জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় পরিবেশ রক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে

  • আপলোড সময় : ০৫-০৬-২০২৪ ০৮:২৭:৫০ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৬-০৬-২০২৪ ০১:৫৪:২৯ পূর্বাহ্ন
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় পরিবেশ রক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বুধবার ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা-২০২৪ এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০২৪ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস-বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে আমরা দেশকে রক্ষা করতে চাই। আর সেদিকে লক্ষ্য রেখেই যেকোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা নেয়ার সময় পরিবেশ রক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। গতকাল বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা-২০২৪’ এবং ‘জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০২৪’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর আমাদের দুই বোনকে দেশে আসতে দেয়নি তখনকার সরকার। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসি অনেক ঝড়ঝাপটা মাথায় নিয়ে। আমার অবর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আমাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করে। আমি দেশে ফিরে আসি। দেশে ফিরে আসি একটা প্রত্যয় নিয়ে, যে জাতির জন্য আমার বাবা সরাটাজীবন সংগ্রাম করেছেন, নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন; সেই জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে। স্বাধীনতার সুফল বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছাতে হবে। বাংলাদেশকে ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশের যে স্বপ্ন তিনি দেখেছেন, সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ শুরু করেছি। কোনো কারণে গাছ কাটতে হলে তিনগুণ বেশি গাছ লাগাতে হবে, বললেন প্রধানমন্ত্রী
বিশ্ব পরিবেশ দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমরা ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছি। আরও বেশি করে বনায়নের উদ্যোগ আমাদের নিতে হবে। এরইমধ্যে ২৫ ভাগের মতো করতে পেরেছি। এদেশের মানুষকে রক্ষা করাই আমাদের দায়িত্ব। যেকোনো উন্নয়ন পরিকল্পনায় পরিবেশ রক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। কোনো কারণে গাছ কাটতে হলে তিনগুণ বেশি গাছ লাগাতে হবে, সে শর্তও জুড়ে দেয়া হয়। এসময় বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের উৎখাত আন্দোলনের নামে তারা যেমন মানুষকে হত্যা করেছে, তেমনি লাখো লাখো বৃক্ষ নিধন করেছে। আমরা যেখানে গাছ লাগাই, সেগুলো তারা ধ্বংস করেছে। এটাই দুর্ভাগ্যজনক। ধ্বংসযজ্ঞগুলো দেশের জন্য ক্ষতিকর।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশকে রক্ষায় বেশি করে গাছ লাগান:  জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে দেশকে রক্ষায় সবাইকে অন্তত একটি করে হলেও গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে দেশ ও মানুষকে রক্ষা করাই আমাদের লক্ষ্য। সাথে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যে যেখানে পারেন সেখানে অন্তত একটি করে গাছ লাগান। পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষা করা দেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সবসময়ই দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগে থাকে। সেটি থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করাই আমাদের লক্ষ্য। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে: সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ে মানুষের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে এবারের মতো এতো দীর্ঘসময় ধরে জলোচ্ছ্বাস এর আগে হয়নি। উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় টেকসই ঘর তৈরি করা হচ্ছে। উপকূলের মানুষদের ঝড় জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে রক্ষা করতে বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে সরকার আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করেছে বলে জানান তিনি। যে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনায় পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুন্দরবন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে। তাই সুন্দরবনকে আরো সুরক্ষিত করা হয়েছে। আর কে কী দেবে সে আশায় না থেকে নিজেদের অর্থেই জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড তৈরি করা হয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে সুরক্ষিত করা এবং পরিবেশ রক্ষা করাই লক্ষ্য। তিনি আরও বলেন, ব্যক্তি পর্যায়ে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিকল্প হিসেবে পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগ আনা হচ্ছে। যা একবার ব্যবহারের পর মাটির সাথে মিশে যায়।
বিএনপি-জামায়াত গাছ ধ্বংস করে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পরিবেশ রক্ষায় আওয়ামী লীগ সারাদেশে গাছ লাগায়, আর বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনের নামে হাজার হাজার বৃক্ষ ধ্বংস করে। তিনি বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট এবং তার পরবর্তী দুই বছর এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়নি। ২০১৩ সালে সরকার উৎখাতের আন্দোলনের নামে মানুষকে যেমন হত্যা করে...তাছাড়া বাস, ট্রাক, গাড়ি, রেল, লঞ্চ, সেগুলো আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া আর বৃক্ষ নিধন করা হয়। লক্ষ লক্ষ বৃক্ষ কেটে ফেলে দেয় জামায়াত-বিএনপি। আমরা যেখানে গাছ লাগিয়েছে সেগুলো তারা ধ্বংস করেছে। এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্যের বিষয়, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু বৃক্ষরোপণে মানুষকে ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করেন: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বৃক্ষরোপণের জন্য মানুষকে ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তিনি বলেন, কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকতে যে ঝাউবন, সেটি জাতির পিতার উদ্যোগে রোপণ করা হয়। তাছাড়া আমাদের দ্বীপ অঞ্চল, বিশেষ করে চরাঞ্চলগুলোতে ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ করা এবং সেখানে প্রত্যেক প্রজাতির পশুপাখি জোড়ায় জোড়ায় ছেড়ে দেয়া হয়। সেটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন। তিনি বলেন, এ দেশের মানুষকে রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। জলবায়ু পরিবর্তনের যে বিরূপ প্রভাব, তা থেকে দেশকে আমরা মুক্ত করতে চাই। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি। যে পদক্ষেপগুলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা ১৯৭২ সালে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে একটা সবুজ আচ্ছন্ন পরিবেশ তৈরির পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালের ১৬ জুলাই তিনি সেখানে বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ উদযাপন করেন।
পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থায় ইট উৎপাদন করতে হবে: শেখ হাসিনা বলেন, ইট আমাদের উৎপাদন করতে হবে, তবে সেটা যাতে পরিবেশবান্ধব হয়। বিকল্প ব্যবস্থায়ও জোর দিচ্ছি। প্লাস্টিকের ব্যবহার হচ্ছে এখনো। তবে সুখবর হলো, পাটের থেকে এমন কিছু পণ্য তৈরি করা যায়, যা মাটির সঙ্গে মিশেও যায়। এটার জন্য আমরা নানা ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি বলেন, সামাজিক বনায়নে মাত্র ৩০ ভাগ লভ্যাংশ পেতো, এখন এটা ৭০ ভাগ করে দিয়েছি। যার কারণে সবাই সামাজিক বনায়ন আন্তরিকতার সঙ্গে করে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে ২২টি এলাকা সংরক্ষণ করেছি। সরকার জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে মুজিব অ্যাকশন প্ল্যান করেছে। তিনি বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ১১টি আইন, নীতি, বিধিমালা ও প্রবিধানমালা প্রণয়ন করি। আমাদের ১০টি বিশেষ উদ্যোগের একটি পরিবেশ রক্ষা করা। বৃক্ষরোপণ, বন সংরক্ষণ ও বনায়ন বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা ২৫ ভাগ বনায়ন করতে পেরেছি। এরইমধ্যে ছাদ বাগান করার উপরও জোর দিয়েছি। এতে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি নিজের খাদ্য যোগানও দেয়া যায়। এ সময় চলতি বছর ৮ কোটি ৩৮ লাখ চারা রোপণ করা হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স