ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫ , ৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
কক্সবাজারে ২ শিশু হত্যায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৪ জনের যাবজ্জীবন ত্রিভুজ প্রেমের বলি জবি ছাত্র জোবায়েদ : পুলিশ চট্টগ্রাম বন্দর অচল হওয়ার আশঙ্কা এনসিপির জন্য সব দলের নিবন্ধন আটকে রেখেছে ইসি বিমানবন্দরে আগুন ফ্যাসিস্ট হাসিনার নাশকতার অংশ-আমান শেখ হাসিনা আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক নয়-আইনজীবী আগ্রাসী রূপে ডেঙ্গু চালু হচ্ছে না শাহজালালের নতুন কার্গো ভিলেজ অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় যাওয়ার আহ্বান বিএনপির বিজয় নিয়ে ক্লাসে ফিরছেন শিক্ষকরা নতুন বছরে মাধ্যমিকের বই পাওয়া নিয়ে শঙ্কা আ’লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান ক্রমেই বাড়ছে বিদেশি ঋণের বোঝা মিথ্যা তথ্যের দ্রুত মোকাবিলা করতে ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে হবে: সিইসি আতঙ্ক অস্থিরতায় ব্যবসায়ীরা বিএনপির সঙ্গে আইআরআই প্রতিনিধি দলের বৈঠক মা মাছ ধরা বন্ধ করতে হবেÑপ্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা পাঠাও চালককে মারধর করে দেড় লাখ টাকা ছিনতাই নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুনের মামলার আপিল শুনানি ৪ সপ্তাহ মুলতবি ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের খুঁটি রেখেই ভবন নির্মাণ
রেকর্ড কিপার, খারিজ সহকারী ও কপিস্ট কাম বেঞ্চ সহকারী সাধারণ কেরানিক শ্রেণির কর্মচারীদের অবৈধ নিয়োগে কোটি কোটি টাকা বাণিজ্য

ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়া

  • আপলোড সময় : ২০-১০-২০২৫ ০৭:০০:৩৭ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২০-১০-২০২৫ ০৭:০০:৩৭ অপরাহ্ন
ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়া
ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের ‘উপসহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার’ পদে চলতি দায়িত্ব প্রদানে চরম অনিয়ম হওয়ায় অধিদফতরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত ১৫ অক্টোবর ভূমি মন্ত্রণালয়ের জরিপ অধিশাখা-১ এর উপসচিব এম এম জাহাঙ্গীর হোসেন স্বাক্ষরিত ৩১৬ নম্বর প্রজ্ঞাপনে ২৫২ জন সেটেলমেন্ট বিভাগের সার্ভেয়ার, ড্রাফটসম্যান কাম এরিয়া এস্টিমেটর কাম সিট কিপার ৭৩ জন এবং ননটেকনিক্যাল কারণিক পদের (যারা সাধারণ এসএসসি/এইচএসসি পাস যোগ্যতায় চাকরি নিয়ে) রেকর্ড কিপার, খারিজ সহকারী ও কপিস্ট কাম বেঞ্চ সহকারী পদ থেকে ১৩০ জনসহ মোট ৪৫৫ জনকে ‘উপসহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার’ পদে চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এরই সাথে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর ১৯৫৫ বিধিমালার ২৬,২৭ ও ২৮ বিধির ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে রেকর্ড কিপার, খারিজ সহকারী ও কপিস্ট কাম বেঞ্চ সহকারী সাধারণ কেরানিক শ্রেণির কর্মচারী যাদের সার্ভে বিষয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই তাদের ও ট্রাভার্স-কিস্তোয়ার-খানাপুরি-বুজারত-তসদিক (সত্যায়িত)-এর কাজের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ দেয়া হয়েছে। এমন ঘটনা বিরল হওয়ায় সাধারণ জনগণের নকশা ও রেকর্ড নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু করেছে অধিদফতরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও মন্ত্রণালয়ের জরিপ অধিশাখা-১ এর অসাধু কর্মকর্তারা।
জানা যায়, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের ১৯৮৫ সালের নিয়োগবিধিতে ফিডারপদ (পদোন্নতির যোগ্যপদ) সাবসার্ভেয়ার, কম্পিউটার, ড্রাফটসম্যান ও বাউন্ডারি আমিনরা অন্তর্ভুক্ত ছিল অথচ মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের উল্লেখিত কর্মকর্তারা সুকৌশলে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের ফিডারপদধারী ৪ বছর ডিপ্লোমা পাস করা সাবসার্ভেয়ার, কম্পিউটার, ড্রাফটসম্যান ও বাউন্ডারি আমিনদের গত ২০২৩ সালের নিয়োগবিধিতে ‘উপসহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার’ পদে পদোন্নতির বাইরে রেখে নিয়োগবিধি করতে গেলে উল্লেখিত ৪ পদের কর্মচারীরা মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট মামলা দায়ের করলে (মামলা নং-১৬৭৮৫/২০২৩) গত ২০২৪ সালের ৩১ জানুয়ারি হাইকোর্ট আবেদনকারী ৪ পদের ৩৩ জনের জন্য ৩৩টি পদ সংরক্ষণ/শূন্য রেখে বাকিদের পদোন্নতির আদেশ দেন। কিন্তু পদোন্নতিতে হাইকোর্টের আদেশ লঙ্ঘন করে গত ১৫ অক্টোবরের ৩১৬ নম্বর প্রজ্ঞাপনে ৪৫৫ জনের ‘উপসহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার’ পদে চলতি দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর থেকে জানা যায়, অধিদফতরের মোট ৬১৮টি উপসহকারী সেটেলমেন্ট অফিসারের পদ আছে যার মধ্যে ৫০% সরাসরি নিয়োগ বাকি ৫০% পদোন্নতি নিয়োগবিধি অনুসারে পাবেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনে গত ২০২৪ সালের ২৮ নভেম্বর ২৭৮ জনের সরাসরি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে নিয়োগ চলমান রয়েছে। কর্মরত ২০৬ জন পদোন্নতি পেয়ে এসেছেন, সে মতে ১০৩ জনকে পদোন্নতি দেয়া যায়, কিন্তু ৪৫৫ জনকে কিভাবে পদোন্নতি দেয়া হলো এ নিয়ে অধিদফতর তোলপাড় শুরু হয়। ‘চলতি দায়িত্ব’ নীতিমালা-২০২৩-এর প্রজ্ঞাপনের দ্বিতীয় লাইনে সুস্পষ্ট লেখা আছে ‘শূন্যপদে’ চলতি দায়িত্ব প্রদান করা কিন্তু ১০৩ পদের বিপরীতে ৪৫৫ জনের কত কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে তা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। এই নীতিমালার ধারা ৬(১) ও ধারা ৭ অনুযায়ী চলতি দায়িত্ব শুধুমাত্র পরবর্তী উচ্চতর পদে/ফিডার পদে এবং শূন্যপদের সংখ্যার অনধিক কর্মচারীকে প্রদান করতে হবে। ১০৩টি শূন্যপদের বিপরীতে ৪৫৫ জনকে চলতি দায়িত্ব দেয়া শূন্যপদের সংখ্যা অতিক্রম করার চরম অনিয়ম। যা সরকারের প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা অপচয় ছাড়া কিছু নয়। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (নিয়োগ) বিধিমালা-২০১৪ এর লঙ্ঘন-এ আইনের ধারা ৩০(২)-অনুযায়ী শূন্যপদে অস্থায়ী দায়িত্ব শুধুমাত্র একই ধরনের দায়িত্ব পালনে সক্ষম নিকটস্থ নিম্নতর পদস্থ কর্মচারীকে দেয়া যাবে। কিন্তু ভূমি মন্ত্রণালয় ১৪/১৫/১৬তম গ্রেড থেকে ১০ গ্রেডে সরাসরি চলতি দায়িত্ব ‘নিকটস্থ’-এর সংজ্ঞার স্পষ্ট লঙ্ঘন। আরও জানা যায়, এতে করে বাংলাদেশ সেটেলমেন্ট রেকর্ডস ম্যানুয়াল এবং ভূমি রাজস্ব বিধিমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে। উপসহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার পদটি একটি টেকনিক্যাল ও কোয়াসি-জুডিশিয়াল পদ। এই পদে স্থায়ীভাবে নিযুক্ত ব্যক্তিই কেবল: ২৬,২৭,২৮ বিধিতে শুনানি ও নিষ্পত্তির ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন ও রাজস্ব ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন এবং খতিয়ান প্রস্তুতকরণ ও জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন। কিন্তু ১৪,১৫,১৬তম গ্রেডের কমর্চারীরা রেভিনিউ ক্ষমতাপ্রাপ্তিতে বাংলাদেশ সেটেলমেন্ট রেকর্ডস ম্যানুয়াল এবং ভূমি রাজস্ব বিধিমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে। কেএম হাবিবুর রহমান বনাম বাংলাদেশ (২০১৬) এবং সেকেন্দার আলী বনাম বাংলাদেশ (২০১৮)।
চলতি দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদেরকে চূড়ান্ত ও বিচারিক ক্ষমতা প্রদান প্রাকৃতিক ন্যায়বিচারের নীতির সাথে সাংঘর্ষিক। রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর ২ এর ২৪ ধারায় আইন হচ্ছে ‘কর্মকর্তারা’ রেভিনিউ ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবেন কিন্তু ভূমি মন্ত্রণালয়ের গত ১৫ অক্টোবরের ৩১৬ নম্বর প্রজ্ঞাপনে ১৪,১৫,১৬ গ্রেডের কর্মচারীদের রেভিনিউ ক্ষমতা প্রদানে ‘রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০’ ভূলণ্ঠিত করা হয়েছে। ৪৫৫ জনের প্রজ্ঞাপনে হাইকোর্টে ১৬৭৮৫/২০২৩ নম্বর রিট মামলায় গত ২০২৪ সালের ৩১ জানুয়ারি এই আদেশকে সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেছে ভূমি রেকর্ড ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের জরিপ অধিশাখার-১ দুর্নীতিপরায়ণ অসাধু কর্মকর্তারা।
তেজগাঁওস্থ ভূমি ভবনের অধিদফতর থেকে আরো জানা যায়, ৪৫৫ জনের চলতি দায়িত্ব পদোন্নতির প্রস্তাব অধিদফতরের কর্মকর্তা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছেন এবং প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষরকারী ভূমি মন্ত্রণালয়ের জরিপ অধিশাখা-১-এর উপসচিব এম এম জাহাঙ্গীর হোসেন বাকি বাণিজ্য করেছেন। অনেক কমর্চারী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেছেন, কর্মকর্তাদের খুশি করার জন্য ৪৫৫ জনের প্রতি জনের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা করে তুলেছেন পদোন্নতিপ্রাপ্ত সমিতির নেতারা। বিগত ২০০৩ সাল থেকে শতাধিক মামলায় পরাজিত ১৬ গ্রেডের কারণিক শ্রেণির রেকর্ড কিপার, খারিজ সহকারী ও কপিস্ট কাম বেঞ্চ সহকারী যারা সেটেলমেন্টের ডিজিটাল জরিপের নকশা তৈরির কোনো অক্ষরজ্ঞানবিহীন কর্মচারীদের দিয়ে ডিজিটাল জরিপ পরিচালনা করা মানে অধিদফতরের ডিজি ও মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের গলায় ফাঁসির দড়ি দেয়ার সমান বলে জানান তারা।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স