গাইবান্ধা থেকে মিলন খন্দকার
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর গাইবান্ধায় ঘুষ কারবার ও পিসি বাণিজ্য এখনও রমরমা চলছে। ঠিকাদারদের সাথে মৌখিক চুক্তিতে তিন দফায় ঘুষ নেওয়া, মোটা অংকের টাকা নিয়ে ওভার ইস্টিমেট ও উচ্চ দরদাতাকে ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে দফতরটির নির্বাহী প্রকৌশলীসহ গোটা অফিস সিডিকেটের বিরুদ্ধে। সব মিলে শতকরা টেন পার্সেন্ট টাকা ওখানেই দিতে হয় বলে অভিযোগ ঠিকাদারদের। এতে অপচয় হচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা।
সম্প্রতি তিনটি টেন্ডার নোটিশের একটি প্যাকেজে ২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফার্নিচার সামগ্রী সরবরাহে দুর্নীতির অভিযোগে ঠিকাদারদের বিডি রিলিজ করে ই-টেন্ডার করতে নির্দেশ দেন প্রধান প্রকৌশলী। অনুসন্ধানে অনলাইন টেন্ডার ডকুমেন্ট পর্যালোচনায় ঠিকাদারদের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে গাইবান্ধা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর জেলার ছয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসবাবপত্র সরবরাহে ঠিকাদার নিয়োগে গত ১৪ জুলাই অনলাইনে দরপত্র আহ্বান করে। ছয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো, ফুলছড়ি উপজেলার উদাখালী আদর্শ গালর্স হাইস্কুল, টেন্ডার আইডি নম্বর (১১২৩৩৮৭), গোবিন্দগঞ্জের কামদিয়া আদর্শ গার্লস হাইস্কুল (১১২৩৩৮৯), সাদুল্লাপুরের খোদ্দকোমরপুর বিএল গার্লস হাইস্কুল (১১২৩৩৯১), গোবিন্দগঞ্জ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (১১২৩৩৯২), সদর উপজেলার পশ্চিম কুপতলা হাইস্কুল (১১২৩৩৯৩) ও সদরের চাপাদহ গালর্স হাইস্কুল টেন্ডার আইডি নম্বর (১১২৩৩৯৪)। গত ২৮ জুলাই এসব দরপত্র ওপেন হয়। সেখানে এনিলেস হিসেবে ওই আইডিতে মেসার্স আর কে ভ্যারাইটিজ স্টোরকে ফাস্ট লোয়েস্ট হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।
মেসার্স আর কে ভ্যারাইটিজ স্টোরের প্রোপ্রাইটর এম এ রশিদ খুশি অভিযোগ করেন, গত ২৮ জুলাই দরপত্র ওপেনিং হলে দেখতে পাই ওই আইডিতে আমার প্রতিষ্ঠানের নাম ফাস্ট লোয়েস্ট হিসেবে তালিকাভুক্তু হয়েছে। কিন্তু দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী সকল কাগজপত্র সঠিক থাকলেও গত ১২ আগস্ট আমাকে বাদ দিয়ে আমার চেয়ে উচ্চদরদাতা ফোর লোয়েস্ট মেসার্স এসএম কন্সট্রাকশনের কাছে চাহিদামতো ঘুষ নিয়ে তাকে কোয়ালিফাইড করে কাজ দেওয়ার তালিকা প্রকাশ করা হয়। এছাড়া বাকি পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্য ১১২৩৩৯১, ১১২৩৩৯২, ১১২৩৩৯৩ ও ১১২৩৩৯৪ নম্বর টেন্ডার আইডিতে ফাস্ট লোয়েস্ট হিসেবে মেসার্স আশরাফুল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসকে নির্বাচিত করা হলেও এখানেও ঘটেছে একই ঘটনা।
মেসার্স আশরাফুল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসের স্বত্বাধিকারী আশরাফুল আলম অভিযোগ করে বলেন, যখন দরপত্রগুলো ওপেন করা হয়, তখন ওই সব আইডিতে আমার প্রতিষ্ঠানের নাম ফাস্ট লোয়েস্ট হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। পরে গত ১২ আগস্ট আমার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম বাদ দিয়ে থার্ড লোয়েস্ট উচ্চদরদাতা খাদেমুল ইসলাম জুয়েলকে ১১২৩৩৯১ নম্বর আইডিতে, ১১২৩৩৯২ নম্বর আইডিতে ৬ নম্বরে থাকা সিরিয়ালের উচ্চদরদাতা জাহিদুল ইসলাম মজনুকে ১১২৩৩৯৩ নম্বর টেন্ডার আইডিতে ফোর লোয়েস্ট মেসার্স এস.এ.কে এন্টাপ্রাইজকে এবং ৬ নম্বরের সিরিয়ালে থাকা উচ্চদরদাতা খাদেমুল ইসলাম জুয়েলকে ১১২৩৩৯৪ নম্বর আইডিতে কোয়ালিফাইড করে কাজ দেওয়ার তালিকা প্রকাশ করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ঠিকাদার অভিযোগ করেন, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী বেলাল আহমেদের একান্ত আস্থাভাজন, প্রভাবশালী ঠিকাদার, ফ্রেন্ডস ইটভাটা মালিক খাদেমুল ইসলাম জুয়েলকে পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রেটকোড গোপনে জানিয়ে দেওয়ার কারণে তিনি একাই ওই পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসবাবপত্র সরবরাহের ঠিকাদার হিসেবে দায়িত্ব পান। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, সাঘাটা পাইলট বয়েজ হাইস্কুল (বারকোনা) টেন্ডার আইডি নম্বর (১১২৩৩৯৫), পলাশবাড়ীর বরিশাল হাইস্কুল (১১২৩৩৯৬), একই উপজেলার আমলাগাছি ডিইউ গার্লস হাইস্কুল (১১২৩৩৯৭), সাদুল্লাপুর উপজেলার কুঞ্জুমহিপুর বিইউ হাইস্কুল (১১২৩৩৯৮) ও শাহ আজগর আলী ডিগ্রি কলেজ টেন্ডার আইডি নম্বর (১১২৩৩৯৯)। গত ১৫ জুলাই এসব কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। আর ওপেন করা হয় গত ২৯ জুলাই।
ঠিকাদার সোয়াইব হক্কানীসহ অনেকেই অভিযোগ করেন, সম্প্রতি একটি প্যাকেজে ২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফার্নিচার সামগ্রী সরবরাহে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের চিহ্নিত দোসর কয়েকজন ঠিকাদারদের সাথে নিয়ে নির্বাহী প্রকৗশলী বেলাল আহমেদ শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে কাজগুলো ভাগাভাগি করে দিতেন। বিনিময়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে পিসি বাণিজ্যসহ দেওয়া হতো ওভার ইস্টিমেট ও উচ্চদরদাতাকে ওয়ার্ক অর্ডার। গোটা অফিসের সব কর্মকর্তাই নেন তাদের অফিস খরচ। ফলে কর্মকর্তাদের পকেট ভারী হলেও সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। তিনি দাবি করেন নতুন বাংলাদেশেও এই সিন্ডিকেটের কাছে আমরা সাধারণ ঠিকাদারেরা জিম্মি।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী বেলাল আহমেদকে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata