
বাহিনী প্রধানদের কাছে হাসিনাসহ ৩০ জনের গ্রেফতারি পরোয়ানা * ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচ ডিজিসহ আসামি সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা * আসামিদের অনেকই এখনও নিজ নিজ দফতরে দায়িত্ব পালন করছেন
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুমের দুই মামলা
- আপলোড সময় : ১০-১০-২০২৫ ০৬:২১:৪৪ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১০-১০-২০২৫ ০৬:২১:৪৪ অপরাহ্ন


গুমের দুই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনের গ্রেফতারি পরোয়ানা পুলিশের আইজি ও বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানদের কাছে পাঠিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গত বুধবার বিকেলে সংশ্লিষ্ট সব দফতরে পরোয়ানা পাঠানো হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয় বিষয়টি জানিয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, গত বুধবার বিকেলেই দুই মামলায় ৩০ আসামির বিরুদ্ধে জারি হওয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা আইজিপি ও ১২টি দফতরে পাঠিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। পরোয়ানা পাঠানো ১২টি দপ্তর হলো-চিফ অব আর্মি স্টাফ, চিফ অব জেনারেল স্টাফ, এডজুটেন্ট জেনারেল (আর্মি হেডকোয়ার্টার), ডিজি ডিজিএফআই, ডিজি এনএসআই, প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন) সচিব প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, ডিরেক্টর মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স, ডিরেক্টর পার্সোনেল সার্ভিস ডিরেক্টরেট (বাংলাদেশ সেনাবাহিনী), কমান্ডেন্ট আর্মি সিকিউরিটি ইউনিট, প্রভোস্ট মার্শাল, সিইও (আর্মি এমপি ইউনিট ফর ইনফরমেশন)। এর আগে, বুধবার টিএফআই সেলে গুমের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল-১। একইসঙ্গে জেআইসিতে গুমের ঘটনায় আরেক মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। একই দিন সকালে এ দুই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউশন। মামলায় ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচ ডিজিসহ সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই এখনও কর্মরত রয়েছেন। তবে ফরমাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) দাখিলের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংশোধিত আইন অনুযায়ী তারা কোনো পদে থাকতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর।
সূত্র আরও জানায়, ২০০৯ থেকে ২০২৪। এ সময়জুড়ে দেশ শাসনে ছিল আওয়ামী লীগ সরকার। আর এ শাসনামলে গুমের শিকার হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার পতনের পর কেউ জীবিত ফিরেছেন আবার কারও খোঁজ এখনও মেলেনি। এমনকি অনেকের লাশের হদিসও পাননি স্বজনরা। ভিন্ন মত-পথের কিংবা রাজনৈতিক মতাবলম্বীদের তুলে নিতেন বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। গুম হওয়া এসব ব্যক্তিকে রাখা হতো আয়নাঘর হিসেবে পরিচিত গোপন বন্দিশালায়। সেখানেই চালানো হতো নৃশংসতা। কিন্তু বন্দিদের নিজের নামে ডাকা হতো না। ছিল আলাদা কোডনেম। আর বিশেষ বন্দিদের নাম ছিল মোনালিসা। এমনকি আয়নাঘরকে বলা হতো আর্ট গ্যালারি। হাসপাতাল বা ক্লিনিক নামেও ডাকা হতো র?্যাবসহ বিশেষ বাহিনীর এসব বন্দিশালাকে। আর গুমের শিকার ভুক্তভোগীদের বলা হতো সাবজেক্ট। নতুন বাংলাদেশে ভয় ও দমননীতির যুগ শেষ। বিচার করার সময় কখনোই দেখা হয় না অপরাধী কত উঁচু স্তরের, কত ক্ষমতাশালী অথবা কোন ব্যক্তি। অপরাধের দায় কেবলমাত্র ব্যক্তিদেরই। তাদের অপরাধের দায় রাষ্ট্র-সমাজ বা প্রতিষ্ঠান বহন করবে না।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আরও বলেছেন, বিচার করার সময় কখনোই দেখা হয় না অপরাধী কত উঁচু স্তরের, কত ক্ষমতাশালী অথবা কোন ব্যক্তি। অপরাধের দায় কেবলমাত্র ব্যক্তিদেরই। তাদের অপরাধের দায় রাষ্ট্র-সমাজ বা প্রতিষ্ঠান বহন করবে না। তিনি আরও বলেন, টিএফআই সেলের বর্বরতা বর্ণনা আমরা তুলে এনেছি। কীভাবে মানুষকে আটক রেখে নির্যাতন করা হতো। ইলেকট্রিক চেয়ারে ঘোরানো হতো। যৌনাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হতো। হাত-পা কেটে ফেলা হতো। নাড়িভুঁড়ি বের করে ফেলা হতো। পৈশাচিক নির্যাতন করা হতো। এই যে তাদের তৎপরতাগুলো ছিল একদিন না একদিন প্রত্যেক অপরাধীকেই বিচারের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। এটাই হচ্ছে বার্তা। চব্বিশের ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে যে অভূতপূর্ব বিপ্লব সাধিত হয়েছে, স্বৈরশাসন ভয়ের সংস্কৃতি মানবতাবিরোধী অপরাধের যে আতঙ্কের জনপদ ছিল বাংলাদেশ সেখান থেকে পুনর্জন্ম লাভ করেছে। অসংখ্য তরুণের রক্তের বিনিময়ে এই নতুন অর্জিত যে স্বাধীনতা সেটা তখনই সফল হবে, যারা অপরাধ করেছেন তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। আইনসম্মত উপায়ে এসব নিষ্পত্তি করা হবে। স্পষ্ট বার্তা হচ্ছে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং কোনো বিচারহীনতার সংস্কৃতি বাংলাদেশে আর চলতে দেওয়া হবে না।
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ