বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খরচ কমানোর অজুহাতে শিশু বিকাশ কেন্দ্রে কর্মরত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বাদ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। বিগত ২০০৮ সালে প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের শারীরিক, মানসিক চিকিৎসার লক্ষ্যে দেশে ৩৫টি শিশু বিকাশ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। ওই কেন্দ্রগুলোর প্রতিটিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল একজন শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ওসব কেন্দ্রে প্রতিদিন চিকিৎসাসেবা নেয় এক হাজারের বেশি শিশু। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সম্ভব নয়। বিগত ২০০৮ সালের আগস্ট থেকে গত জুলাই পর্যন্ত ওসব কেন্দ্র থেকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন দুই লাখ ৪৩ হাজার ৯৩৪ শিশু চিকিৎসা পেয়েছে। কিন্তু সরকার এখন ওই শিশু বিকাশ কেন্দ্রের ৩৫ চিকিৎসককে বাদ দিতে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের বিভিন্ন জেলার দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত কর্মসূচির হসপিটাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট অপারেশন প্ল্যানের আওতায় স্থাপন করা হয় ৩৫টি শিশু বিকাশ কেন্দ্র। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন বাজেট থেকে ওই শিশু বিকাশ কেন্দ্রগুলোর অর্থায়ন করা হয়। তবে গত বছর জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বেতন পাচ্ছেন না ওই কেন্দ্রগুলোর চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারপরও চাকরি স্থায়ী হওয়ার আশায় বেতন ছাড়াই কেন্দ্রের কর্মীরা চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সমপ্রতি জরুরি স্বাস্থ্যসেবা সচল রাখতে সরকার নতুন আরেকটি প্রকল্পের সিদ্ধান্ত নেয়। আর সেক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় শিশু বিকাশ কেন্দ্রগুলোর বিশেষজ্ঞ পদ বাদ দিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে প্রকল্প প্রস্তাবনা। সূত্র জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ৩৫টি শিশু বিকাশ কেন্দ্রের সব পদ (চিকিৎসকসহ) বহাল রাখতে লিখিত অনুরোধ জানিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতে অত্যাবশ্যকীয় কার্যক্রম বাস্তবায়ন শীর্ষক প্রকল্পে শিশু বিকাশ কেন্দ্রের সব পদ বহাল রাখা জরুরি। কিন্তু ওসব কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৩ মাস বেতন পাচ্ছেন না। এক্ষেত্রে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে মারাত্মক ব্যাহত হবে বিশেষ স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসাসেবা। বর্তমানে প্রতিটি কেন্দ্রে পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করেন। পদগুলো হলো শিশু বিকাশ বিশেষজ্ঞ, শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, ডেভেলপমেন্টাল থেরাপিস্ট, অফিস ব্যবস্থাপক এবং ক্লিনার। মোট ৩৫টি কেন্দ্রে জনবল ১৭৫ জন, তাছাড়া আরো ১১ জন কেন্দ্রীয়ভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যুক্ত আছেন।
সূত্র আরো জানায়, রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিকাশ কেন্দ্রে দিনে ২৫-৩০ শিশু চিকিৎসা নিতে আসে। তার মধ্যে সেরিব্রাল পালসি, ডাউন সিনড্রোম, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, বাকপ্রতিবন্ধী ও মৃগীরোগীর সংখ্যা বেশি। সাধারণ হাসপাতালে ওসব সমস্যা ঠিকভাবে শনাক্ত বা চিকিৎসা সম্ভব হয় না। কারণ শিশু বিকাশ কেন্দ্রে সেবা নিতে আসা শিশুদের অনেকের ভাষাগত ত্রুটি, আচরণগত সমস্যা, অটিজম বা শেখার অসুবিধা থাকে। সেজন্য নিয়মিত অনুসরণ ও মূল্যায়ন প্রয়োজন। যে কারণেই প্রতিটি বিকাশ কেন্দ্রে একজন শিশু বিকাশ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকা জরুরি। শিশু বিকাশ কেন্দ্রে প্রত্যেক শিশুর পর্যবেক্ষণে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় লাগে। ফলে প্রতিদিন চিকিৎসকের পক্ষে ২০-৩০ জনের বেশি রোগী দেখা সম্ভব নয়। সেখানে সংখ্যার চেয়ে গুণগত মান বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাড়াহুড়া করলে রোগ নির্ণয়ে ভুল হওয়ার শঙ্কা থাকে এবং তাতে শিশুরই ক্ষতি হয়।
এদিকে এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হসপিটাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট শাখার লাইন ডিরেক্টর ডা. জয়নাল আবেদীন টিটো জানান, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু আগের চেয়ে বেড়েছে। তাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। ওই লক্ষ্যেই সরকার ২০০৮ সালে ৩৫টি কেন্দ্র চালু করে। ওসব সেবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেয়া হয়। কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে বন্ধ হওয়ার পথেওই কার্যক্রম। অথচ প্রতিটি জেলায় অন্তত একটি এবং প্রতিটি মহানগরে দুই থেকে তিনটি শিশু বিকাশ কেন্দ্র থাকা জরুরি।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য সচিব সাইদুর রহমান জানন, অপারেশন প্ল্যানের মাধ্যমে আগে এই প্রকল্প পরিচালিত হতো। তখন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে শিশু বিকাশ কেন্দ্রের কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব ছিল। এখন অপারেশন প্ল্যান বন্ধ। তাই হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক দিয়েই এ সেবা চালু রাখা হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
খরচ কমাতে শিশু বিকাশ কেন্দ্রের চিকিৎসক বাদ দেয়ার উদ্যোগ
- আপলোড সময় : ০৬-১০-২০২৫ ১০:৪২:২৭ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৬-১০-২০২৫ ১০:৪২:২৭ অপরাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
স্টাফ রিপোর্টার