ঢাকা , শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫ , ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
আমরা দাসত্বের মধ্যে থাকতে চাই না -প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূতরা যে কারও বাসায় যেতে পারেন-পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সব ধরনের ক্রিকেট বর্জনের ঘোষণা ক্লাব সংগঠনের ফের মাঠে নামছে এনসিপি আরও কঠিন হচ্ছে আ’লীগের ফেরার পথ বিএনপি চায় সংসদে জামায়াত গণভোটে আমতলীত ও তালতলীতে ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা, জেলেদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে হাসপাতাল মর্গে বেওয়ারিশ লাশের স্তূপ যানজটে আটকা সড়ক উপদেষ্টা, ১২ কর্মকর্তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অফিস করার নির্দেশ রসায়নে নোবেল পেলেন ৩ বিজ্ঞানী গণভোটে নোট অব ডিসেন্ট গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার আহ্বান আলী রীয়াজের দৈনিক জনতার প্রকাশক ছৈয়দ এম আন্ওয়ার হোসেনের তৃতীয় মৃত্যুবাষির্কী আজ আজ হংকংয়ের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ ফিফার কমিটিতে বাফুফের সভাপতি তাবিথ আউয়াল আমি আশাবাদী, আমরা ভালো করতে পারব : শমিত সিরিয়ার বিপক্ষে দারুণ জয় পেলো মেয়েরা ভারতের আম্পায়ারই কাল হলো বাংলাদেশের? ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াই করেও জিততে পারলোনা বাঘিনীরা বাংলাদেশ সফরের জন্য টেস্ট দল ঘোষণা দিলো আয়ারল্যান্ড প্রথমবারের মতো মাদ্রাসা ক্রিকেট চালু করতে যাচ্ছে বিসিবি

উজানের ঢলে তিন জেলায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

  • আপলোড সময় : ০৬-১০-২০২৫ ১০:২২:৫৯ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৬-১০-২০২৫ ১০:২২:৫৯ অপরাহ্ন
উজানের ঢলে তিন জেলায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
* ১২২৭ হেক্টর ফসলি জমি ও পুকুর পানিতে নিমজ্জিত
* বন্যার আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তিস্তা পাড়ের মানুষ
* হু হু করে বাড়ছে তিস্তার পানি, আতঙ্কে তীরবর্তী মানুষ
* বিপৎসীমার ওপরে তিস্তার পানি, নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিং


ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা ভারি বৃষ্টিতে কুড়িগ্রামে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কুড়িগ্রামে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পেলেও ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে দুধকুমার, ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর দুই তীরের অববাহিকায় রোপা আমন, সবজি, মাসকালাইসহ বিভিন্ন ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন খাল, ডোবা ও নিম্নাঞ্চল তলিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ি ঢল আর টানা ভারি বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। এতে নীলফামারী, লালমনিরহাট ও রংপুরের তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ অবস্থায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নদী তীরবর্তী মানুষদের নিরাপদ স্থানে চলে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে তথ্য মতে, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে এ পর্যন্ত জেলায় মোট ১২শ ২৭ হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে রোপা আমন ৯৮৭ হেক্টর, বিভিন্ন শাক-সবজি ১৯১ হেক্টর, মাসকলাই ৪৯ হেক্টর পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি টানা বৃষ্টি ও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে সেক্ষেত্রে এ বছর রোপা আমনসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হবে। এতে কৃষকরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার সাহা বলেন, আমার উপজেলার বজরা ও থেতরাই ইউনিয়নের কিছু নিম্নাঞ্চলে পানি উঠতে শুরু করেছে। আমি ত্রাণ কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছি আমিও একটু পরে যাব।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল মতিন বলেন, জেলায় শুকনো খাবার ২ হাজার ৫০০ টন, চাল ৪২৪ টন এবং নগদ ১৪ লাখ টাকা রয়েছে। আমাদের খাদ্য পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। আপাতত কোনো সমস্যা হবে না।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বিকেল ৩টার দিকে তিস্তার পানি বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এরপর রাতের দিকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করে ৫২ দশমিক ৫০ মিটার রেকর্ড করা হয়, যা বিপদসীমার ৫২ দশমিক ১৫ মিটারের চেয়ে ৩৫ সেন্টিমিটার বেশি। বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, খালিশাচাপানী ও ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি গ্রামে। এসব এলাকার শত শত ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, আদিতমারী ও বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ শুকনো খাবার ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছেন।
পূর্ব ছাতনাই এলাকার বাসিন্দা করিম উদ্দিন বলেন, প্রতিবার তিস্তার পানি বাড়লেই আমাদের ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়। এবারও সব কিছু ডুবে গেছে। ঘুমাতে পারছি না চিন্তায়।
স্থানীয় গৃহবধূ মর্জিনা বেগম বলেন, চারপাশে শুধু পানি আর পানি। ঘরবাড়ি সব তলিয়ে গেছে। রাতে জিনিসপত্র নিরাপদ জায়গায় নিতে হচ্ছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, তিস্তার পানি বিকেলে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে এবং এখনো বাড়ছে। ইতোমধ্যে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরানুজ্জামান বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। শুকনো খাবার ও ত্রাণ সহায়তা দেওয়া শুরু হয়েছে।
এদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নীলফামারী, লালমনিরহাট ও রংপুরের তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে দেখা দিয়েছে বন্যার আশঙ্কা। নদীর পানি দ্রুত বাড়তে থাকায় তীরবর্তী এলাকার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন।
পাউবোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারতের দার্জিলিং ও কালিম্পং অঞ্চলে টানা ভারী বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি ঢল নেমে আসছে। ফলে তিস্তার পানি হু হু করে বাড়ছে। এতে ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিসা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী ও গয়াবাড়ী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন, তিস্তার পানি যেভাবে বাড়ছে, তাতে রাতে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দা হাসানুর রহমান বলেন, বিকেলে তেমন পানি ছিল না। সন্ধ্যার পর হঠাৎ পানি বাড়তে শুরু করে। এখন পুরো ঘর ডুবে গেছে। জিনিসপত্র নিয়ে নিরাপদ স্থানে যাচ্ছি। আরেক বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন বলেন, তিস্তার পানি ঘরে ঢুকে গেছে। আমরা যা পারছি, বাচ্চা ও জিনিসপত্র নিয়ে বাইরে যাচ্ছি। সবকিছু ডুবে যাচ্ছে চোখের সামনে। পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন, উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টির কারণে কয়েকটি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দী। রাতে পানি আরও বাড়তে পারে।
তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২৫ মিটার, যা বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপরে। পানি বৃদ্ধি মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তিস্তা ব্যারেজের সব (৪৪টি) জলকপাট খুলে দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ভারতের দার্জিলিং ও কালিম্পং এলাকায় টানা ভারী বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি ঢল নেমে আসছে। যার ফলে নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। এরই মধ্যে ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিসা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী ও গয়াবাড়ী ইউনিয়নের অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরের অনেক ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। ফসলের জমিও পানির নিচে চলে গেছে, এতে ফসলহানির শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকেরা। গবাদিপশুর খাবারের সংকটেও পড়েছেন অনেকে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। রাতে পানি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য