ঢাকা , রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫ , ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
এই সরকার দিয়ে কোনো অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়-ডা. তাহের লাখো মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে যারা ধর্মের নামে রাজনীতির ব্যবসা করে, তাদের হাতে নারীরা নির্যাতিত-সালাহউদ্দিন আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না-প্রধান উপদেষ্টা নারীদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়নের চিন্তা করলে ভুল হবে : সেনাপ্রধান নির্বাচনকালীন ডিসি নিয়োগ পুলিশ দেখে ফেলে যাওয়া প্রাইভেটকারে মিললো এক লাখ পিস ইয়াবা তিন মাসে আয়ে প্রবৃদ্ধি তবুও তিতাসের লোকসান ২৪৯ কোটি টাকা প্রেমিকাকে ভিডিও কলে রেখেই তরুণের আত্মহত্যা দুই দশকে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা আটগুণ বৃদ্ধি মুন্সিগঞ্জের ভাষানচর বালুমহল ইজারা ঘিরে অভিযোগ, হয়রানি বন্ধে তদন্তের দাবি কৃষি গুচ্ছ ভর্তির আবেদন শুরু ২৫ নভেম্বর, পরীক্ষা ৩ জানুয়ারি ভয়াবহ দুর্ভোগ হানিফ ফ্লাইওভারে! যৌনাচারের অভিযোগে ঢাবি শিক্ষক গ্রেফতার ইসলামী ব্যাংক নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত জানাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্বাচনের আগে গণভোট চায় ৮ দল আমি পাশে না দাঁড়ালে গ্রামীণ ব্যাংকের অনেক স্থাপনা থাকতো না-কাদের সিদ্দিকী স্কুলে ভর্তিতে কোটা নিয়ে আপত্তি অভিভাবকদের দেশে দ্রুত কমছে খাদ্যের মজুত ট্রাভেল এজেন্সি অধ্যাদেশ-২০২৫ বাতিলের দাবি
* ডেঙ্গুতে আরও ৯ জনের মৃত্যু * হাসপাতালে রোগীর চাপ

চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন রোগীর স্বজনরা

  • আপলোড সময় : ০৬-১০-২০২৫ ০১:০৭:৪৪ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৬-১০-২০২৫ ০১:০৭:৪৪ অপরাহ্ন
চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন রোগীর স্বজনরা
আতাউর রহমান জুয়েল
ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার ও নার্সরা। ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর কাজের চাপ বাড়ছে। অনেক হাসপাতাল, বিশেষ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) ও মুগদা হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের মেঝেতে পর্যন্ত চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার ও মৃত্যুর সংখ্যাও আগের বছরের তুলনায় বেশি, যা পরিস্থিতিকে আরও গুরুতর করে তুলেছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে শুরু করে মেডিসিন ওয়ার্ড পর্যন্ত উপচে পড়া ভিড়। ডেঙ্গু রোগীর অধিকাংশই জ্বর, বমি ও শরীরে ব্যথা নিয়ে আসছেন। 
প্রতিদিন ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের অনেকেই ভর্তি হচ্ছেন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের ভোগান্তির সঙ্গে চিকিৎসা খরচের ধাক্কা সামাল দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বজনদের।
গতকাল রোববার দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার (৪ অক্টোবর) সকাল ৮টা থেকে রোববার (৫ অক্টোবর) সকাল ৮টার মধ্যে তারা মারা যান। এ নিয়ে ডেঙ্গুতে চলতি বছর মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ২১২ জনে। রোববার (৫ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৪২ জন। মৃত্যু ও আক্রান্তের এই সংখ্যা একদিনে চলতি বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সব মিলিয়ে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে সেবা নিয়েছেন ৪৯ হাজার ৯০৭ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর আরও জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে শুধু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেই সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি এ সময়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম বিভাগে একজন করে মোট দুইজন মারা গেছেন।
অন্যদিকে গত একদিনে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী (২০১ জন) হাসপাতালে ভর্তি হন। এছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১৯৮ জন, বরিশাল বিভাগে ১৯৫ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১২১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ৮২ জন, খুলনা বিভাগে ৭২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪১ জন, রংপুর বিভাগে ২৩ জন এবং সিলেট বিভাগে পাঁচ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে রোববার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট ২১২ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু (১০২ জন) হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। পাশাপাশি এই সময়ে বরিশাল বিভাগে ৩২ জন ছাড়াও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ১০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে সাত জন, খুলনা বিভাগে পাঁচ জন এবং ঢাকা বিভাগে তিন জন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন।
দেশজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে, যা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর ভিড় দেখা যাচ্ছে, এমনকি রোগীদের মেঝেতে রেখেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধ করার জন্য মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মশারি ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়।  মশা তাড়ানোর স্প্রে বা লোশন ব্যবহার করতে হবে। লম্বা হাতাযুক্ত পোশাক পরে শরীর যতটা সম্ভব ঢেকে রাখতে হবে।
বাড়ির চারপাশ এবং বাসাবাড়ির কোথাও জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে মশা ডিম পাড়ে। তাই জমা পানি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার মানিফা বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং সময়মতো সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। ডেঙ্গু জ্বর হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং মশা নিয়ন্ত্রণে সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি।
গতকাল রোববার সকালে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালটির অষ্টম ও ১১তম তলায় ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অষ্টম তলায় শিশু ওয়ার্ডে ১২ জন এবং ১১ তলায় সাধারণ ওয়ার্ডে নারী-পুরুষ রোগী মিলিয়ে মোট ৪২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সেবা নিচ্ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে, চলতি বছরের শুরু থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫২৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন, যা গত বছরের এই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের চেয়ে ২২৬ জন বেশি। এবার এখানে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী এবং তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভর্তি থাকা বেশির ভাগ রোগীই ঢাকার বাসিন্দা। তবে ঢাকার বাইরে থেকে আসা রোগীও এই হাসপাতালে রয়েছেন। দাউদকান্দি এলাকার রিমি (১৬) ১০ দিন ধরে ভর্তি রয়েছে বলে জানান তার মা জুলিয়া বেগম। তিনি বলেন, তার মেয়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পেটে পানি এসেছে। রক্ত দেওয়ার পরও প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে। চিকিৎসা খরচ বহন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
বেসরকারি মেডিকেলে চিকিৎসাধীন তাফসিন নামে এক রোগীর মা জানান, তার  জন্য প্রতিদিন ৭০০ টাকা শয্যা ভাড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন পরীক্ষা, ওষুধ বাবদ এখন পর্যন্ত ৩০ হাজারের বেশি টাকা খরচ করেছেন। তাফসিনের বাবা মাছের আড়তে কাজ করেন। চিকিৎসা খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
বরগুনা সিভিল সার্জন অফিসের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু বরগুনা সদর হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩৩ জন। এ ছাড়া আমতলী ৪, তালতলী ২, বেতাগী ৩, বামনা ৮ এবং পাথরঘাটায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৪ জন। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৫৫ জন। এ বছর জেলায় এখন পর্যন্ত ৭ হাজার ৭০০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭ হাজার ৫৪৫ জন। এ ছাড়া বরগুনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এখন পর্যন্ত ১৪ জন আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বরগুনার বাইরে চিকিৎসা নিয়ে মারা গেছেন আরও ৪৫ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৯ জনে।
বরগুনা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ বলেন, ‘সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে বর্ষা কমার কথা থাকলেও এখনও চলমান। বর্ষা যতদিন থাকবে জেলার হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বাড়বে কমবে। তবে কবে নাগাদ ডেঙ্গু নির্মূল হবে, তা বলা যাচ্ছে না।’
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স