
নগরে শরৎ উৎসব ‘সবার বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয়
- আপলোড সময় : ২৭-০৯-২০২৫ ০২:২৬:৪১ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৭-০৯-২০২৫ ০২:২৬:৪১ অপরাহ্ন


নানা শ্রেণি ও বর্ণের মানুষকে নিয়ে ‘সবার বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয়ে হয়ে গেল শরৎ উৎসব। গতকাল শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় নাচ, গান, কবিতা আর কথামালায় এ উৎসব আয়োজন করে ‘ষড়ঋতু উদযাপন জাতীয় পর্ষদ’। শুভ্র কাশফুল, নীল আকাশ আর সাদা মেঘের ঋতু শরতের আবহে এদিন বকুলতলায় জড়ো হন কবি, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মীরা।
অনুষ্ঠানে নাচ পরিবেশন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষক ও নৃত্যশিল্পী র্যাচেল প্রিয়াঙ্কা প্যারিস। গান গেয়ে শোনান কোহিনুর আক্তার গোলাপী ও সাগর বাউলের দল। গানের ফাঁকে ছিল স্বরচিত কবিতা পাঠ। এতে অংশ নেন মাজহার সরকার, মৃদুল মাহবুব, সাম্য সাহা, রাফসান গালিব, সানাউল্লাহ সাগর, লাবণ্য লিপি, রিক্তা রিচি এবং লতিফুল ইসলাম শিবলী।
এর আগে উদ্বোধন পর্বে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, “আমাদের দেশের অনেক কিছু নিয়ে হয়তো আমরা খুশি নই। তবে দেশের প্রকৃতি ভীষণ মুগ্ধকর। শরৎ ভীষণ কোমল। এ কোমলতা আমাদের স্পর্শ করে। “শরৎ ঋতুতেই সবচেয়ে সুন্দর চাঁদ দেখা যায়, আকাশে সবচেয়ে সুন্দর তারা দেখা যায়। এই শরৎ উৎসবে আমরা গান, কবিতার মধ্য দিয়ে শরতের কোমলতাকে আরেকবার উপলব্ধি করি।”
দৈনিক আমাদের সময়ের সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, “রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ- তাদের লেখায় প্রকৃতিকে আবাহন করেছেন। অন্য ঋতুতে ‘বিদ্রোহী’ ব্যাপারটি থাকলেও শরৎ ঋতুতে আছে কোমলতা। নজরুলকেও শরতের কোমলতা ছুঁয়েছে।” হিন্দু, মুসলমান, পাহাড়ি, বাঙালি- সবার মধ্যে রাখী বন্ধন জরুরি মন্তব্য করে আবু সাঈদ খান বলেন, “সবাই মিলেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে।” কবি মোহাম্মেদ রোমেল বলেন, “আমাদের নদী-খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। শরৎ উদযাপনের পাশাপাশি এসব বিষয়েও আমাদের সোচ্চার হতে হবে।”
প্রেস ইন্সটিটিউটের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, “কাশফুল ফোটার মধ্য দিয়ে প্রকৃতিতে ইতোমধ্যে শরৎ উদযাপন শুরু হয়ে গেছে।” দেশীয় সংস্কৃতির চর্চা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ফারুক ওয়াসিফ বলেন, “আমরা নানাভাবে পশ্চিমা ধারায় আক্রান্ত। আমাদের লড়াইটা হল সংস্কৃতিকে জীবন্ত রাখা। সীমান্ত পাহারা দেয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী। কিন্তু মানুষের মনকে পাহার দেয় সংস্কৃতি। সংস্কৃতির মধ্যেই সম্প্রীতির বিষয়টা আছে। সেটাই সংস্কৃতি, যা মানুষকে আলিঙ্গন করে এবং পারস্পরিক ঐক্য গড়ে তোলে।” সভাপতির বক্তব্যে ‘ষড়ঋতু উদযাপন জাতীয় পর্ষদের’ আহ্বায়ক কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক এহসান মাহমুদ বলেন, “শুভ্র আকাশের যে শরৎ, তার মতো করে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হবে।”
বাংলাদেশের সম্প্রীতি যেন নষ্ট না হয়, সেই আহ্বান জানিয়ে এহসান মাহমুদ বলেন, “যারা দেশের সম্প্রীতি নষ্ট করছে, তাদেরকে নিবৃত্ত করতে সরকারকে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখাতে হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এই বাংলাদেশ সবার হবে, সব শ্রেণির মানুষের হবে। এটাই আমরা আশা করি।”
আসন্ন শারদীয় উৎসব নির্বিঘ্নে উদযাপন করার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকার এবং সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। ‘ষড়ঋতু উদযাপন জাতীয় পর্ষদের’ সদস্য সচিব দীপান্ত রায়হান বলেন, “বাংলার সাহিত্য ও শিল্পকলার মূল শক্তি প্রকৃতি। ষড়ঋতুকে উদযাপন মানে আমাদের সৃজনশীল ঐতিহ্যকে পুনর্জাগরিত করা।” ভবিষ্যতে প্রতিটি ঋতুতে ধারাবাহিকভাবে এ ধরনের উৎসব আয়োজন করার কথাও জানান আয়োজকরা।
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ