ঢাকা , শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫ , ২৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সুগন্ধি চাল রফতানির অনুমতি পেল ১৩৩ প্রতিষ্ঠান শাস্তির আওতায় আসছে বিপুলসংখ্যক চালকল পিছিয়ে পড়েও জয়ের দেখা পেলো মিয়ামি প্রথম লেগে ডর্টমুন্ডের সাথে জয় পেলো বার্সা হামজার হোম অভিষেকের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ঢাকা স্টেডিয়াম অবশেষে সেঞ্চুরির আক্ষেপ ঘুচলো জ্যোতির আজ মাঠে গড়াচ্ছে পিএসএল টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের আগে ইনজুরির ধাক্কা প্রোটিয়া শিবিরে অবশেষে অলিম্পিকে ফিরছে ক্রিকেট ফিক্সিং অভিযোগে তদন্ত শুরু করলো বিসিবি বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ এখন উন্মুক্ত বৈশাখের আয়োজন থেকে ‘মঙ্গল’ শব্দ বাদ দিতে হবে-ইসলামী আন্দোলন আওয়ামী লীগের বিচারের বিষয়ে ঐকমত্য হেফাজত-এনসিপি পদত্যাগ করে দলের দায়িত্ব নিন-প্রধান উপদেষ্টাকে দুদু প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠক ১৬ এপ্রিল ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিতেও প্রভাব দেখছে এডিবি মুজিববর্ষ-ম্যুরাল নির্মাণ : হাসিনা-রেহানাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু দুদকের ভারতের ভেতর দিয়ে নেপাল-ভুটানে রফতানি করতে পারবে বাংলাদেশ-রণধীর জয়সওয়াল বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সামনের দিনে আরও বাড়বে -মনোজ কুমার ফসলের উৎপাদন খরচ খুঁজতে ভ্রমণ ব্যয়ই ১০ কোটি টাকা

বাংলাদেশ আর কোনো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে পারবে না

  • আপলোড সময় : ০২-০৬-২০২৪ ০২:১৩:৪৫ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০২-০৬-২০২৪ ০৩:৫৫:০৭ অপরাহ্ন
বাংলাদেশ আর কোনো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে পারবে না
ড. অরুণ কুমার গোস্বামী
গত ১৮ মে ২০২৪ তারিখে রাখাইন রাজ্যের বুথিডং টাউনশিপের পতনের পর আনুমানিক ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী নাফ নদীর তীরবর্তী একটি এলাকায় আশ্রয় নেয়। জাতিসংঘের মানবাধিকার দফতরের মুখপাত্র এলিজাবেথ থ্রোসেল তাদের সুরক্ষা দিতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভোলকার তুর্কও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশকে তাদের কার্যকর সুরক্ষা দেয়ার আহ্বান জানান। অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, দেশটিতে ইতোমধ্যে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়ায় সরকার আর নিতে অনিচ্ছুক।
নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ বাংলাদেশ প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে স্বাগত জানিয়ে মানবিক দুর্ভোগের প্রতি সর্বোচ্চ মমত্ববোধ ও বোঝাপড়ার পরিচয় দিয়েছে। দেশটি তার অর্থনীতি, সমাজ এবং পরিবেশের ব্যয় এবং প্রভাবগুলো কাটাতে তার স্বল্প সম্পদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় করতে বাধ্য হয়।
সপ্তম বছরে পদার্পণ করলেও একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফিরে যায়নি। মনে হচ্ছে এই বিশাল শরণার্থীর বোঝা একাই বহন করছে বাংলাদেশ। দেশটি নিজস্ব সীমিত সম্পদ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতিবছর ১২২ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করছে। বাংলাদেশের কক্সবাজার এখন বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরের আশ্রয় নিয়েছে, যার মাত্রা এবং আয়তনের দিক থেকে এটি অন্যতম বৃহত্তম মানবিক সহায়তা কার্যক্রম।
উপরন্তু রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য দেশটি কখনোই বড় অঙ্কের তহবিল পায়নি। বরং সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমেছে সহায়তার পরিমাণ। যেখানে দাতারা ২০২০ সালে প্রয়োজনীয় নগদের মাত্র ৬০ শতাংশ অবদান রেখেছিল, যা দুই বছর আগের তুলনায় প্রায় ৭২ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশে নেমে এসেছিল। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য বাংলাদেশ ২০২৩ সালে প্রায় ৫১.৪ শতাংশ এবং ২০২২ সালে প্রায় ৪৯ শতাংশ মাত্র পেয়েছিল।
দরিদ্র ও নিরক্ষর রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কষ্ট এখন কম বিরক্তিকর কারণ বিদেশি অর্থদাতাদের কাছে তাদের মতো দেখতে শরণার্থী রয়েছে এবং তারা তাদের ধনী ইউরোপীয় সমাজে নিরাপত্তা খুঁজছে। প্রতিদিনই রোহিঙ্গাদের উপেক্ষা করার ফলে শরণার্থীদের শিবিরের অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। তহবিল সংকটের কারণে জাতিসংঘ মাথাপিছু প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ১০ ডলারে নামিয়ে আনতে বাধ্য হয়। এই হ্রাসের ফলে শিবিরগুলোতে ব্যাপক অপুষ্টি আরও খারাপ হয়েছে, যা বাংলাদেশে ইতোমধ্যে খাদ্য মুদ্রাস্ফীতির সংকটের মুখোমুখি হয়েছে।
কিছু রোহিঙ্গা, বিশেষ করে সশস্ত্র গোষ্ঠী ও অপরাধী দলে যোগ দেয়া তরুণদের দ্বারা অপহরণ, মাদক বিক্রি, ডাকাতি, সোনা চোরাচালান এবং অন্যান্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। গত ছয় বছরে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আবাসস্থল শিবিরগুলোতে পাঁচ শতাধিক অপহরণ ও ১৮৬টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
ক্রমবর্ধমান অপরাধের হারের কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে আতঙ্ক, উদ্বেগ এবং প্রকাশ্য হত্যার ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের প্রতি ক্ষোভ বাড়ছে। কক্সবাজারের মানুষ আশঙ্কা করছে, ওই এলাকায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কারণে তারা এখন সংখ্যালঘু হওয়ায় তাদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
রাখাইনের সাম্প্রতিক সংঘাত পরিস্থিতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, অন্যদিকে নিপ্পন ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ইয়োহেই সাসাকাওয়ার মধ্যস্থতায় ২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর অপারেশন ১০২৭-এর পরিপ্রেক্ষিতে আরাকান আর্মি (এএ) সাময়িক যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর থেকে আবারও রাখাইনে জান্তা অবস্থানে হামলা শুরু করে। আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যে উল্লেখযোগ্য বিজয় অর্জন করেছে, রাখাইনের বুথিডং, ম্রাউক ইউ, মিনবায়া, পাউকতাও, তাউংপিওলেতওয়ে, মাইবোন, কিয়াউকতাও, পোন্নাগিয়ুন, রামরি এবং রাথেডংসহ রাখাইনের ১০টি শহর (১৭টির মধ্যে) দখল করেছে। রাখাইনের ১৬টি বড় ঘাঁটিসহ জান্তার ১৮৭টি ঘাঁটি দখল করেছে তারা।
জান্তা ও আরাকান আর্মির মধ্যে নতুন করে এই তীব্র লড়াইয়ের সরাসরি প্রভাব পড়েছে রাখাইনে বসবাসরত অবশিষ্ট পাঁচ লাখের কিছু বেশি রোহিঙ্গার ওপর। বুথিডং ও রাথেডংয়ের পতনের ফলে ২০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে জানা গেছে, যার ফলে প্রায় ৪৫ হাজার নতুন করে বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়ার চেষ্টা করছে।
আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ এরই মধ্যে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। অপরিসীম আর্থিক বোঝা বাংলাদেশকে রোহিঙ্গাদের কল্যাণে ঋণ নিতে বাধ্য করেছে। গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছে ১০০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছিল, যার মধ্যে ৫৩৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ এবং ৪৬৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান ছিল। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কীভাবে আর কোনো রোহিঙ্গাকে স্বাগত জানাবে?
বাংলাদেশ যখন মানবিক কারণে সীমান্ত খুলে দিয়েছে এবং ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে, তখন বিশ্ব সম্প্রদায় নিপীড়নের মাধ্যমে পরিচালিত এই সংকটের সঙ্গে জড়িত দায়িত্বের ন্যায্য ও ন্যায়সংগত বণ্টন নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যারা মানবিক দায়িত্ব পালন করেছে। মিয়ানমারের অংশ, রোহিঙ্গা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও অধিকার গোষ্ঠীগুলোকে বুঝতে হবে যে, অর্থনীতির ওপর প্রভাব, উচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং জাতীয় নিরাপত্তার কারণে বাংলাদেশ বেশিদিন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে পারবে না বা নতুন কোনো প্রবাহকে আশ্রয় দিতে পারবে না। এটা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য লজ্জার বিষয় যে, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে সমান দায়িত্ব ভাগাভাগি করছে না এবং মিয়ানমারে অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে না।
আরাকান আর্মি ও জান্তা বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা। আরাকান আর্মি এবং জান্তা বাহিনী উভয়ই রোহিঙ্গাদের তাদের দলে চাপ দিয়েছে এবং একই সাথে রোহিঙ্গাদের তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সহায়তা করার অভিযোগ করেছে। যেহেতু রোহিঙ্গারা কোনো পক্ষের উপযোগী নয়, তাই জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আরেকটি মারাত্মক ঢেউ ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা ২০১৭ সালের চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে। এটা হবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর জন্য চরম ব্যর্থতা, যা ইতিহাসের সবচেয়ে কালো অধ্যায়।

লেখক : অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কলামিস্ট ও পরিচালক, সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ (সিএসএএস), ঢাকা

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য