ঢাকা , শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫ , ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
এই সরকার দিয়ে কোনো অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়-ডা. তাহের লাখো মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে যারা ধর্মের নামে রাজনীতির ব্যবসা করে, তাদের হাতে নারীরা নির্যাতিত-সালাহউদ্দিন আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না-প্রধান উপদেষ্টা নারীদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়নের চিন্তা করলে ভুল হবে : সেনাপ্রধান নির্বাচনকালীন ডিসি নিয়োগ পুলিশ দেখে ফেলে যাওয়া প্রাইভেটকারে মিললো এক লাখ পিস ইয়াবা তিন মাসে আয়ে প্রবৃদ্ধি তবুও তিতাসের লোকসান ২৪৯ কোটি টাকা প্রেমিকাকে ভিডিও কলে রেখেই তরুণের আত্মহত্যা দুই দশকে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা আটগুণ বৃদ্ধি মুন্সিগঞ্জের ভাষানচর বালুমহল ইজারা ঘিরে অভিযোগ, হয়রানি বন্ধে তদন্তের দাবি কৃষি গুচ্ছ ভর্তির আবেদন শুরু ২৫ নভেম্বর, পরীক্ষা ৩ জানুয়ারি ভয়াবহ দুর্ভোগ হানিফ ফ্লাইওভারে! যৌনাচারের অভিযোগে ঢাবি শিক্ষক গ্রেফতার ইসলামী ব্যাংক নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত জানাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্বাচনের আগে গণভোট চায় ৮ দল আমি পাশে না দাঁড়ালে গ্রামীণ ব্যাংকের অনেক স্থাপনা থাকতো না-কাদের সিদ্দিকী স্কুলে ভর্তিতে কোটা নিয়ে আপত্তি অভিভাবকদের দেশে দ্রুত কমছে খাদ্যের মজুত ট্রাভেল এজেন্সি অধ্যাদেশ-২০২৫ বাতিলের দাবি
ব্যাংক থেকে অর্থ সহায়তা না পাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছেন বাগান মালিকরা

অস্থিরতায় তীব্র সংকটে চা শিল্প

  • আপলোড সময় : ২১-০৯-২০২৫ ০৩:২৭:১৯ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২১-০৯-২০২৫ ০৩:২৭:১৯ অপরাহ্ন
অস্থিরতায় তীব্র সংকটে চা শিল্প
গত কয়েক বছর ধরে ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’র সাম্রাজ্যে চলছে টানাপড়েন। দেশের কৃষিভিত্তিক এই চা-শিল্পটি ইদানীং সঠিক পরিকল্পনা, শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রদান, তদারকি ও পরিচালনার প্রভৃতির অভাবে বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এককথায় বলতে গেলে বাংলাদেশের চা শিল্প এখন অনেকটাই মহাসংকটের কিনারে। মূলত ব্যাংক থেকে অর্থ সহায়তা না পাওয়া, উৎপাদন খরচ ও শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির কারণে গত কয়েক বছরে বাগানগুলোতে লোকসান হওয়ায় চা শিল্প টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন বাগান মালিকরা। এছাড়া শ্রমিক অসন্তোষ আর ব্যাংক থেকে আর্থিক সহায়তা না পাওয়াসহ নানান কারণে এখন সিলেটের বেশিরভাগ চা বাগানই বন্ধ হওয়ার উপক্রম। বাগান মালিকরা বলছেন, ধীরে ধীরে বিনিয়োগের অভাব আর বাজার অস্থিরতায় তীব্র সংকটের মুখে তারা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের অন্যান্য শিল্পখাতের মতো চা শিল্পেও সরকারের বিশেষ নজর না দিলে ভবিষ্যতে আরও সংকটে পড়বে এ খাত। মেক্সান ব্রাদার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক এম এ জামান সোহেল বলেন, বাগান ব্যবস্থাপনায় শ্রমিকদের মজুরি দেয়া সবচেয়ে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কারণ আমার চা বিক্রি করে তো লস হচ্ছে। আমার পেষানো যাচ্ছে না। সিলেট নিনা আফজাল ইন্ড্রাস্টিজ লিমিটেডের প্রধান পরিচালক আফজাল রশিদ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে চায়ে ম্যানুফ্যাকচারিং খরচ প্রায় ২২৫ থেকে ২৩০ টাকা। কিন্তু চা গড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। তবে বাংলাদেশ চা সংসদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বর্তমানে বাংলাদেশ চা অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান কামরান তানভীরুর রহমান বলছেন, এ শিল্প না থাকলে শুধু বাগান মালিকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বরং বিশাল জনগোষ্ঠী বেকার হওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রের আর্থিক খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, চা শিল্পের একটা ক্রান্তি লগ্ন। কিন্তু কীভাবে এর থেকে আমরা উত্তোলন পাবো? উত্তোলন পেতে হবে। যদি উত্তোলন না পাই তাহলে তো এ শিল্প আর থাকবে না। এ শিল্প যখন থাকবে না বহু মানুষ বেকার হয়ে যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভঙ্গুর বাজার ব্যবস্থার কারণেই এ শিল্প এখন হুমকির মুখে। সেজন্য চায়ের দাম বৃদ্ধিসহ পণ্যটিকে রফতানিমুখী করার পরামর্শ দেন তারা। শ্রীমঙ্গল ব্রæকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ এস এম ইসলাম মুনীর বলেন, ইন্টারনাল কনজ্যুম বেড়েছে ঠিক আছে কিন্তু রফতানিতে যদি না যাওয়া হয় তাহলে কিন্তু দাম বাড়বে না। এরইমধ্যে জানা গেছে যে, সিওপি বেড়ে গেছে, এটা যদি মিনিমাইজ করতে হয় তাহলে দাম ভালো পেতে হবে। বাংলাদেশ টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন বলেন, ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য আমার মনে হয় বাগান মালিক যারা আছেন বা যারা এ ব্যবসার সঙ্গে আছেন তাদের আরেকটু সহনীয় হওয়া দরকার। তার পাশাপাশি যদি সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাংক ইন্টারেস্ট যদি একটু সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা যায় তাহলে একটু উপকৃত হবে। চা শুধু অর্থনীতির একটি খাত নয় বরং কয়েক লাখ মানুষের জীবিকার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তবে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তা রক্ষায় পৃথক কোম্পানির পৃথক পরিচালনা কমিটি গঠন করে কোনোরকমে কীটনামক ওষুধ প্রয়োগ করে টিকিয়ে রেখেছেন। কোম্পানিগুলো আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বাগানগুলো পর্যবেক্ষণসহ পরিচালনার কথা জানিয়েছে। এ বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের (বাচাশ্রই) ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল এর সঙ্গে। তিনি বলেন, চা শুধু একটি জনপ্রিয় পানীয় নয়, এটি বাংলাদেশের লাখো কৃষক ও শ্রমিকের জীবিকা ও সামাজিক সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। চা শ্রমিকদের অধিকাংশই নারী, যারা তাদের পরিবারের অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তুলতে চা শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। তাই শ্রমিকদের ভ‚মি অধিকার সুরক্ষা, ন্যায্য মজুরি নিশ্চিতকরণ এবং কল্যাণমূলক কার্যক্রম গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। একপ্রশ্নের জবাবে তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, চা শ্রমিকদের ভ‚মি অধিকার থেকে পুরোপুরিভাবে বঞ্চিত। বাংলাদেশ শ্রম আইনের ৩২ ধারায় (১) অনুচ্ছেদে বলা আছে, কোনো শ্রমিকের চাকরির অবসান হলে, তা যে কোনোভাবে হোক না কেন, তিনি চাকরির অবসানের ৬০ দিনের মধ্যে মালিক কর্তৃক বরাদ্দ করা বাসস্থান ছাড়িয়া দেবে। তিনি বলেন, আমাদের চা শ্রমিকদের দাবি, দেশের নিবন্ধিত ১৬৭টি চা বাগানের যে সোয়া লাখের মতো চা শ্রমিক রয়েছে তার সঙ্গে অন্য শ্রমিকদের এক করে দেখার অদূরদর্শিতায় ভ‚মি অধিকারের মতো রাষ্ট্রীয় মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। পৌনে ২শ বছরেও চা শ্রমিকদের ভাষা, সংস্কৃতি, জীবনযাপনের সঙ্গে দেশের মূল সমাজের সংযোগ সামান্য। চা বাগানের বাইরে অচেনা ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় তাদের চা বাগানের পরিবেশেই আটকে থাকতে হয়। তারপরও চা শ্রমিকদের ভ‚মি অধিকার নেই। সিনিয়র টি-প্লান্টার এবং বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট ব্রাঞ্চ প্রতিনিধি ইবাদুল হক বলেন, সরকার নিলাম মূল্য প্রতি কেজি চা ২৪৫ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও সিন্ডিকেটের তৎপরতায় বাগানমালিকসহ সংশ্লিষ্টরা এ নিয়ে শঙ্কিত। এমনিতেই সার কীটনাশক, তেল ইত্যাদির দাম বেড়েছে। এই অবস্থায় চায়ের আকাক্সিক্ষত মূল্য পাওয়া না গেলে চায়ে লোকসান বাড়বে। দেশের চা-বাগানগুলোর আদৌ টিকে থাকবে কি না সন্দেহ। তিনি বলেন, ২০১৫ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত চায়ের উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৫৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। একই সময়ে চায়ের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ১৬ ভাগ। দামের তুলনায় উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় চা-শিল্পের আর্থিক সক্ষমতা কমেছে। তাই চা-শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রতি কেজি চায়ের গড় মূল্য ২৫০ টাকায় উন্নীত করতে হবে। দেশের চা-বাগানগুলো মহাক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। চা একটি সংবেদনশীল কৃষি পণ্য। এর জন্য প্রয়োজন সুষম আবহাওয়া। এবারও মৌসুমের প্রথমে খরা দেখা দেওয়ায় উৎপাদন হার হ্রাস পায়। জুন থেকে মোটামুটি ভালোই বৃষ্টি হচ্ছে। এটা যদি পুরো সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে তাতে করে খরাজনিত লোকসান পুষিয়ে যেতে পারে বলে জানান তিনি।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স