ঢাকা , মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫ , ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
বৈধ পথে বিদেশ গমন ও মানব পাচার রোধে ফরিদপুরে আইএমও'র সংবাদ সম্মেলন জেল-জুলুম সহ্য করা নেতাকর্মীদের মনে রাখবে দল - ফরিদপুরে শামা ওবায়েদ গণভোট ও সনদ আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে -মির্জা ফখরুল নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার কোনো কারণ নেই-আইন উপদেষ্টা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর অর্ধেকের বেশি তরুণ শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান মিয়া গোলাম পরওয়ারের প্রাথমিকের শিক্ষকদের কর্মবিরতি ক্লাসের বাইরে ১ কোটি শিক্ষার্থী মাঝারি ক্ষুধার দেশেও খাদ্যের অপচয় মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের দশম গ্রেড দেওয়াসহ ১১ দফা দাবি এস আলমসহ ৬৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা সেনাবাহিনীর সদস্য সরিয়ে নেওয়ার খবর গুজব, আগের মতোই মাঠে থাকছেন তারা : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা স্যোশাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ রাখা বড় চ্যালেঞ্জ দারোয়ান থেকে শত কোটি টাকার মালিক মনিরুজ্জামান ইসলামী ব্যাংক থেকে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ, ৬৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা সিএমপির দুই থানার ওসি রদবদল ডিএনসিসির প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক ৩৪ টাকায় ধান, ৫০ টাকা কেজি দরে সেদ্ধ চাল কিনবে সরকার পাঁচ মামলায় হাইকোর্টে জামিন পেলেন সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী সেনা কর্মকর্তাদের হয়ে আর লড়ছেন না ব্যারিস্টার সরওয়ার
সংবাদ সম্মেলনে ক্যাব সভাপতি

কৃষক ৩০ টাকার পণ্য বিক্রি করলেও ভোক্তাকে দিতে হয় ১০০ টাকা

  • আপলোড সময় : ২০-০৯-২০২৫ ০৩:১৭:৪৫ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২০-০৯-২০২৫ ০৩:১৭:৪৫ অপরাহ্ন
কৃষক ৩০ টাকার পণ্য বিক্রি করলেও ভোক্তাকে দিতে হয় ১০০ টাকা
কৃষকরা ৩০ টাকার পণ্য বিক্রি করলেও ভোক্তা ৮০ থেকে ১০০ টাকায় তা কিনতে বাধ্য হন বলে জানিয়েছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, এর মূল কারণ হলো বিপণন ব্যবস্থার জটিলতা ও মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেট। ফার্টিলাইজার ও বীজের খরচের কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। ক্যাব সমবায়ভিত্তিক আধুনিক বাজার গড়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছে। নতুন পাইকারি হাব চালু হলে ভোক্তা ২০ টাকার মতো সাশ্রয় পাবেন। গতকাল শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত ‘ক্যাবের কার্যক্রম অবহিতকরণ বিষয়ক’ শীর্ষক একটি সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সফিকুজ্জামান বলেন, দ্রব্যমূল্যের ক্ষেত্রে সমস্যা দুটো। মূলত উৎপাদন খরচ এবং বিপণন ব্যবস্থা। আমরা বেশিরভাগ কৃষিপণ্য দেশে উৎপাদন করি, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সেই উৎপাদনের খরচ কি যৌক্তিক? কৃষকদের জন্য সরকার বিভিন্নভাবে সহায়তা ও সাপোর্ট দেয়। যেমন কৃষি ঋণ, সাবসিডি ইত্যাদি। তবু বাস্তবে সেই সহায়তা কৃষকের কাছে কতটা পৌঁছে, সেটা অনুসন্ধানযোগ্য প্রশ্ন। এই বছরের কৃষি তহবিল প্রায় ৩০০ কোটি টাকার মতো এবং আমি এই বিষয়টি গোয়েন্দা তদন্তের মাধ্যমে খতিয়ে দেখব, কৃষি ঋণ সত্যিই সরাসরি কৃষকের কাছে পৌঁছাচ্ছে কি না, মধ্যস্বত্বভোগীরা কি কৃষকের স্বাক্ষর ব্যবহার করে ঋণ নিয়ে নিচ্ছে কি না ইত্যাদি। তিনি বলেন, আমার মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী অনেক ক্ষেত্রেই কৃষকরা ঋণ বা সাপোর্ট সরাসরি পাচ্ছেন না। অনেক সময় তাদের স্বাক্ষর নিয়ে একটি সিন্ডিকেট কোনো গোষ্ঠীকে অর্থানুষ্ঠানিক সুবিধা দেয়। কৃষক শেষ পর্যন্ত উচ্চ সুদে পুঁজি নেন বা তাদের পণ্য নিম্নমূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হন। ফলস্বরূপ একটি পণ্যের বাস্তব উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে কম থাকলেও মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যে বাড়তি চাপ পড়ে এবং ভোক্তার দরও বেড়ে যায়। তিনি আরও বলেন, ফার্টিলাইজার ও বীজের খরচ নিয়েও সমস্যা আছে। সরকার ওইগুলোতে সাবসিডি দিয়ে সরবরাহ করলেও ডিলার-ডিস্ট্রিবিউশনের মাধ্যমে কমিশন ও অতিরিক্ত খরচ যোগ হলে কৃষকের হাতে তা ঠিকঠাক পৌঁছায় না। ডিলারশিপের কারণে উচ্চ মূল্যে বিক্রি হলে উৎপাদন কষ্ট বেড়ে যায়, এর প্রভাব লক্ষণীয়। পাশের দেশের সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের অনেক ক্ষেত্রেই উৎপাদন খরচ বেশি হচ্ছে, ফলে প্রতিযোগিতায় আমাদের পণ্য দুর্বল হয়ে পড়ে।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সাবেক এই মহাপরিচালক বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা হল বিপণন ব্যবস্থা। বাংলাদেশের বর্তমান বিপণন ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে আধুনিক নয়। পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের জটিল মাধ্যম, অপ্রতিষ্ঠিত মধ্যস্বত্তভোগীদের কারণে কৃষকের পণ্য থেকে ভোক্তার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত দাম অনেক বেড়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, আমি দীর্ঘদিন বলি যদি কৃষকের ৩০ টাকা দামের পণ্য সরাসরি পাওয়া যেত, তবে খুচরা পর্যায়ে একই পণ্য ৮০-১০০ টাকায় না গিয়ে যথেষ্ট সস্তা থাকতে পারত, কিন্তু মধ্যবর্তী চ্যানেলগুলোতে অতিরিক্ত ৪০-৭০ টাকা চলে যায়, যা ভোক্তা ও কৃষক দুজনকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। তিনি বলেন, আমরা বিপণন ব্যবস্থাকে মডার্নাইজ করে সমবায়ভিত্তিক ব্যবস্থা গড়ার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে আমি কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি এবং খুব শিগগিরই একটি নতুন হাব/বাজারের উদ্বোধন ঘোষণা করব। এটি একটি হাব (হোলসেল) মার্কেট, যেখানে ট্রাক থেকে নামানোর পর অপ্রয়োজনীয় মধ্যস্থতাযুক্ত চেইনকে ভেঙে সরাসরি কৃষক পণ্য আনতে পারবে এবং তা দ্রুত বাজারে পৌঁছাবে। এতে করে খুচরা পর্যায়ে কমপক্ষে ২০ টাকার মতো সাশ্রয় সম্ভব হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। ক্যাব সভাপতি বলেন, আমাদের বিপণন ব্যবস্থার বদল এবং মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেট ভাঙা না গেলেই উৎপাদন খরচ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এই কাজের জন্য আমি মাঠপর্যায়ের তদন্ত, সরকারি তদারকি, সমবায় নির্ভর উদ্যোগ ও সরাসরি বাজার হাব প্রতিষ্ঠার উপর বিশেষ জোর দিচ্ছি। এগুলো বাস্তবায়িত হলে কৃষক-ভোক্তা দুই পক্ষই উপকৃত হবে এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সহায়তা মিলবে। তিনি বলেন, ভোক্তা অধিকার সম্পর্কে সাধারণ মানুষ খুব বেশি জানেন না, এটি মেনে নিতে হবে। আমি মনে করি আপনি কিছুটা জানেন, আমরাও জানি, তবু তা ১৮ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়নি। ভোক্তা অধিকার অধিদফতর কাজ করছে, আমরা ক্যাব ও আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে ধীরে ধীরে এটি জনগণের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। প্রথম পর্যায়ে আমরা নভেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে ৮টি বিভাগে প্রোগ্রাম আয়োজন করছি, এরপর ধাপে ধাপে আরও প্রান্তিক পর্যায়ে যাব। কেন্দ্রীয়ভাবে সবকিছু করা সম্ভব নয়। অতএব আমাদের বিভাগীয় কমিটিগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। যাতে তারা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কাজ কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে পারে। তিনি আরও বলেন, আমাদের কাজের বড় বাধা লজিস্টিক ও আর্থিক সংকট। আমাদের সম্পদ সীমিত, তাই আমরা ইতোমধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান ও অংশীদারের সঙ্গে যৌথ অ্যাজেন্ডা গ্রহণ করেছি যাতে জনগণকে সচেতন করে তোলা সহজ হয়। এই সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা মানুষকে প্রয়োজনীয় তথ্য ও পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করব। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া, কোষাধ্যক্ষ ড. মো. মুঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার, প্রচার সম্পাদক মো. মুসা মিয়া ও নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহা. শওকত আলী খান।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স