
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশন
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রত্যয় জাতিসংঘে তুলে ধরবেন প্রধান উপদেষ্টা
- আপলোড সময় : ১৮-০৯-২০২৫ ১২:০৭:০০ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৮-০৯-২০২৫ ১২:০৭:০০ অপরাহ্ন


জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের উচ্চপর্যায়ের সাধারণ বিতর্ক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর শুরু হতে যাওয়া এ অধিবেশনে যোগদানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা ২২ সেপ্টেম্বর একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে নিউইয়র্কে পৌঁছাবেন। জাতিসংঘ অধিবেশন শেষে তিনি আগামী ২ অক্টোবর দেশে ফিরে আসবেন বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ২৬ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ আলোচনা পর্বে বক্তব্য রাখবেন। তিনি তার বক্তব্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রেক্ষিতে বিগত একবছরে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সংস্কার ও আগামী দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় বিশ্বদরবারে তুলে ধরবেন।
নিউইয়র্ক সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গী ফখরুল-তাহেরসহ ৪ রাজনীতিবিদ। তারা হলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আখতার হোসেন ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির। গতকাল বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন। প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, আগামী ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন। প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে যাচ্ছেন চারজন রাজনীতিবিদ।
আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ অবস্থান, বিশ্বব্যাপী সংঘাত, রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিকূলতা, উন্নয়নশীল দেশগুলো হতে সম্পদ পাচার প্রতিরোধ, নিরাপদ অভিবাসন, অভিবাসীদের মৌলিক পরিষেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, জেনারেটিভ কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রযুক্তির টেকসই হস্তান্তর, এবং সর্বোপরি ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াসের বিষয়গুলো প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে উঠে আসবে বলে গনমাধ্যমকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি জানান, সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ মহাসচিবের স্বাগত অভ্যর্থনা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভ্যর্থনাসহ বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন।
মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, এ সময়ে অনেক বৈঠকের সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তেও হয়ে যায়। সে বিবেচনায় নতুন বৈঠক তালিকায় যোগ হতে পারে; আবার সময়ের অভাবে কোনও বৈঠক বাদও যেতে পারে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, এ বছরের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এবার আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির সভাপতিত্বে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে। রোহিঙ্গা সঙ্কটকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘ কর্তৃক সাধারণ পরিষদে এমন একটি উচ্চপর্যায়ের সভার আয়োজন এবারই প্রথম।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, গতবছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রধান উপদেষ্টা প্রথমবারের মতো সকল অংশীদারের অংশগ্রহণে জাতিসংঘ কর্তৃক এমন একটি উচ্চপর্যায়ের সভা আয়োজনের প্রস্তাব করেন। প্রধান উপদেষ্টার এই প্রস্তাব দ্রুত বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে, যার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ সর্বসম্মতিক্রমে একটি রেজ্যুলুশনের মাধ্যমে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের সভাটি আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই সভা থেকে যেন রোহিঙ্গা সংকট দ্রুত সমাধানের একটি কার্যকর ও সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা উঠে আসে তার জন্য আন্তর্জাতিক অংশীদার ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গত মাসে (২৪-২৬ আগস্ট) কক্সবাজারে প্রথমবারের মতো একটি অংশীদারদের নিয়ে সংলাপের আয়োজন করা হয়।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এছাড়াও জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস গত মার্চ মাসে বাংলাদেশ সফরকালে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে কক্সবাজারে একসঙ্গে ইফতার করেছিলেন। প্রতিনিয়ত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নতুন নতুন সংকটের উত্থানের পরেও সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতার কারণে রোহিঙ্গা সংকটে যে বিশ্বব্যাপী আলোচ্যসূচীতে পিছিয়ে পড়েনি প্রথমবারের মতো এ বিষয়ে জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের সভার আয়োজন এবং স্বয়ং জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর তারই প্রমাণ। আমরা এ উচ্চপর্যায়ের সভার সফল অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
তৌহিদ হোসেন বলেন, সরকারের বর্তমানে অন্যতম অগ্রাধিকার হলো জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা এবং সুষ্ঠুভাবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা। এ প্রেক্ষাপটে এবারের অধিবেশনে আমাদের কাছে একটি সুযোগ বিশ্বদরবারে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে পরিচালিত আমাদের চলমান সংস্কার কার্যক্রম এবং গণতন্ত্র অভিমুখে আমাদের যাত্রাকে উপস্থাপন করা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ