ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
বরিশালে তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা ও লাশ গুমের দায়ে দুজনের মৃত্যুদণ্ড ছাগলকাণ্ডে আলোচিত মতিউরকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ নিষিদ্ধ সংগঠনের অপতৎপরতা রোধে সজাগ থাকতে হবে-ডিএমপি কমিশনার বউ-শাশুড়ির মৃত্যু আহত ৮ ঢামেক হাসপাতালে জন্ম নেওয়া ছয় নবজাতকের ৫ জনের মৃত্যু ওসির পর গোয়ালন্দের ইউএনও বদলি দাওয়াত না দেওয়ায় মাদ্রাসার অনুষ্ঠানের সব খাবার খেয়ে গেলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা উন্নত জীবনের নিশ্চয়তায় বাড়ছে বিদেশগামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নে আগামীর বাংলাদেশ হবে সকলের : কর্নেল আজাদ রামগতিতে ভুলুয়া নদীর ভাঙন রোধে মানববন্ধন সাতক্ষীরার তলুইগাছা সীমান্ত দিয়ে ১০ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করলো বিএসএফ নাটোর মহাসড়কে কাভার্ডভ্যান আটকিয়ে ১০ লাখ টাকার মালামাল লুট লালমনিরহাটে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় গোপালগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা ফি নেয়ার অভিযোগ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস ও শামুক পাচারে নতুন আতঙ্ক চান্দিনায় খাল খনন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ সিরাজদিখানে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিল প্রতারকচক্র বেনাপোলে মোটরসাইকেল-ট্রাক সংঘর্ষে যুবক নিহত, আহত ১ আমতলীতে যৌথবাহিনীর অভিযানে ৯ গাড়িতে মামলা ও ৩ গাড়ি আটক ৫ নভেম্বর পটিয়া অটো-টেম্পো সমিতির ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন
স্থায়ী হওয়ার উদ্দেশ্যে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বিদেশে যাচ্ছেন

উন্নত জীবনের নিশ্চয়তায় বাড়ছে বিদেশগামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা

  • আপলোড সময় : ১৬-০৯-২০২৫ ০১:২৫:১১ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৬-০৯-২০২৫ ০১:২৫:১১ অপরাহ্ন
উন্নত জীবনের নিশ্চয়তায় বাড়ছে বিদেশগামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা
* মানসম্মত উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের অভাব, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, নিরাপত্তাহীনতাই শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করছে দেশ ছাড়তে। * সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরও শ্রমবাজারে অনিশ্চয়তা, সরকারি নিয়োগে ধীরগতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকায় দূর হয়নি তরুণ শিক্ষার্থীদের হতাশা উন্নত জীবনের নিশ্চয়তায় দেশ থেকে বিদেশগামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। মানসম্মত উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের অভাব, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, নিরাপত্তাহীনতাই শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করছে দেশ ছাড়তে। আর দেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরও শ্রমবাজারে অনিশ্চয়তা, সরকারি নিয়োগে ধীরগতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকায় দূর হয়নি তরুণ শিক্ষার্থীদের হতাশা। মূলত স্থায়ী হওয়ার উদ্দেশ্যে বেশির ভাগই বিদেশে যাচ্ছেন। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থীদের বিদেশগামী প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬৬ কোটি ২০ লাখ ডলার ছিলো বাংলাদেশীদের বিদেশে শিক্ষার ব্যয়। যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ। বাংলাদেশী মুদ্রায় ব্যয়কৃত ওই অথের পরিমাণ ৮ হাজার ৭৯ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে)। তাছাড়া শুধু ব্যয় নয়, বরং সংখ্যার দিক থেকেও এখন সর্বোচ্চসংখ্যক শিক্ষার্থী বিদেশ পাড়ি দিচ্ছে। শিক্ষাখাত এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ইউনেস্কোর ‘গ্লোবাল ফ্লো অব টারশিয়ারি লেভেল স্টুডেন্টস’ শীর্ষক ২০২৪ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে ২০২৩ সালে ৫২ হাজার ৭৯৯ শিক্ষার্থী ৫৫টি দেশে পড়াশোনার জন্য গেছেন। ২০২২ সালে ওই সংখ্যা ছিল ৪৯ হাজার ১৫১ এবং ২০২১ সালে ৪৪ হাজার ৩৩৮ জন। আর মোটামুটি এক দশক আগে ২০১৩ সালে ২৪ হাজার ১১২ জন বিদেশে পড়তে গিয়েছিলেন। ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল ১০ বছরের ব্যবধানে বিদেশগামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। সামপ্রতিক সময়ে এ সংখ্যা আরো বেড়েছে। অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষাকে বিদেশ গমনের একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে এবং তাদের বেশির ভাগ আর দেশে ফিরছে না। সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীর বিদেশগামী সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে ক্রমেই বেড়েছে ব্যয়ও। বিদেশে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬৬ কোটি ২০ লাখ ডলার ব্যয় করেছে। বিদেশে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫৩ কোটি ৩২ লাখ ডলার ব্যয় ছিল, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫২ কোটি ৮ লাখ ডলার, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪ কোটি ৩১ লাখ ডলার অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধানে এ ব্যয় আড়াই গুণের বেশি বেড়েছে। আর শুধু বিগত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় ব্যয় বেড়েছে প্রায় ১২ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে দেশের বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষদেশ। ‘ওপেন ডোরস রিপোর্ট অন ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনাল এক্সচেঞ্জ’-এর ২০২৪ সালের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রে ১৭ হাজার ৯৯ জন বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল। আগের শিক্ষাবর্ষের তুলনায় এ সংখ্যা ২৬ শতাংশ বেশি। এ বৃদ্ধি বাংলাদেশকে এক বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী পাঠানো দেশের তালিকায় ১৩তম স্থান থেকে অষ্টম স্থানে নিয়ে এসেছে। গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে যেখানে এ সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৮০২ জন, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৯৯ জনে। সূত্র আরো জানায়, দেশে কর্মসংস্থানের ঘাটতি শিক্ষার্থীদের বিদেশ গমনের প্রবণতার পেছনে ভূমিকা রাখছে। তাছাড়া সামাজিক-রাজনৈতিক কারণও রয়েছে। দেশে প্রকৃত শিল্পায়ন না হওয়ায় কর্মসংস্থান হয়নি পর্যাপ্ত। ফলে তরুণ শিক্ষাজীবন শেষে জীবিকা নির্বাহ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছে। চার লাখেরও বেশি শ্রমিক চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে কাজ করতে বিদেশে গেছে। একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষে তরুণরাও বিদেশে ছুটছেন। তরুণদের দেশে রাখতে চাইলে অবশ্যই কাক্সিক্ষত কর্মজীবনের নিশ্চয়তা দিতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশে শিল্পক্ষেত্রে আশানুরূপ উন্নয়ন না ঘটায় কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তাও বাড়ছে না। তরুণদের উৎপাদনশীল কর্মে নিয়োজিত করতে শিল্পায়নের কোনো বিকল্প নেই। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজ শিক্ষার্থীদের বিদেশ গমনের প্রবণতার কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে জানিয়ে বলেন, বিদেশগামী শিক্ষার্থী সংখ্যায় ভারত শীর্ষে রয়েছে। তাদের শিক্ষার্থীরাই বর্তমানে অ্যামাজন, গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানে শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে এবং যে কারণে ওসব প্রতিষ্ঠানে ভারতীয় কর্মীর সংখ্যা বেড়েছে। এদেশের শিক্ষার্থীরাও অত্যন্ত মেধাবী। তারা ওসব প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে যেতে পারলে তা দেশের জন্য ইতিবাচক হবে। তবে শিক্ষার্থীদের দেশে রাখার বিষয়েও সচেষ্ট হতে হবে। যে কারণে মানসম্মত শিক্ষা ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে এবং ছাত্র-শিক্ষক সম্পকের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। অন্যদিকে এ বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার জানান, একজন শিক্ষার্থী কোথায় পড়বে তা তার ব্যক্তিগত পছন্দ ও স্বাধীনতা। কোনো শিক্ষার্থীর যদি বিদেশে উচ্চশিক্ষার আগ্রহ থাকে এবং অভিভাবকও যদি তাকে বিদেশে পড়াতে চান তাহলে তারা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে বাধা দেয়া উচিত নয়। এ প্রবণতাকে দেশীয় শিক্ষার মানের উন্নতি ঘটিয়ে নিরুৎসাহিত করা যেতে পারে। ওই প্রয়াসটাই করতে হবে। দেশে কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও শিক্ষার মান, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, গুণগত দক্ষতায় ততটা উন্নতি ঘটেনি। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ধরনের সংকট রয়েছে। বর্তমানে দেশের অর্থনীতি বড় হলেও পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি। বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগে কর্মসংস্থানের ঘাটতি অনেকাংশে লাঘব হয়েছে। তবে মেধাবী দক্ষ-প্রবাসীদের রাষ্ট্রের বিভিন্ন কাজে সংযুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। বিদেশে চলে যাওয়াকে “ব্রেইন ড্রেইন”ভেবে শঙ্কিত না হয়ে বরং ব্রেইন সার্কুলেশনের একটি সুযোগ তৈরি করা হয় তাহলে ব্যক্তির স্বাধীনতাও ক্ষুণ্ন হবে না, আবার রাষ্ট্রও লাভবান হবে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স