লক্ষ্মীপুর থেকে ভি বি রায় চৌধুরী
লক্ষীপুর সদর উপজেলার কামানখোলা গ্রামে দাঁড়িয়ে আছে এক ঐতিহাসিক নিদর্শন—কামানখোলা জমিদার বাড়ি। প্রায় আড়াইশো বছর আগে স্থাপিত এই বাড়িটি জেলার অন্যতম প্রাচীন স্থাপনা। দীর্ঘদিনের অবহেলা আর সংস্কারের অভাবে আজ এটি ধ্বংসাবশেষ।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জমিদার দর্পনারায়ন দাসের বংশধররাই এ জমিদারী প্রথা পরিচালনা করতেন। তাঁদের মধ্যে ক্ষেত্রনাথ দাস, যদুনাথ দাস, হরেন্দ্র নারায়ণ দাস চৌধুরী ও গোপেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁদের উত্তরসূরীদের কেউ কেউ বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করছেন, আবার কেউ রয়েছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যে বাড়িটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। স্থানীয় উপাদান ও পশ্চিমা শৈলীর মিশ্রণে নির্মিত এই স্থাপনাটিতে রয়েছে উন্মুক্ত উঠোন, ঝুলন্ত ছাদ, খিলান, প্রতিসম সম্মুখভাগ ও দৃষ্টিনন্দন স্তম্ভ, বাড়িতে ঢুকতে সিংহ দরজা, ঐতিহাসিক প্রাসাদ । সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর শোভা হারালেও ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে এখনো কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে জমিদার বাড়িটি।
প্রতিদিনই বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এই জমিদার বাড়ি দেখতে আসেন। কিন্তু সংস্কারের অভাব, ভাঙাচোরা অবস্থা ও অবকাঠামোগত দুর্বলতায় পর্যটকরা হতাশ হচ্ছেন। বিশেষ করে প্রায় ৪৮ একর আয়তনের জমিদার বাড়িটির প্রবেশপথে ২০০ মিটারের রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে আছে। এতে স্থানীয় জনগণ ও দূর-দূরান্ত থেকে আগত দর্শনার্থীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন।
স্থানীয় সচেতন মহল ও দর্শনার্থীদের দাবি, প্রশাসন যদি জরাজীর্ণ এই রাস্তাটি কার্পেটিং করে এবং জমিদার বাড়িটির সংস্কারের উদ্যোগ নেয়, তবে এটি দেশের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা হিসেবে নতুনভাবে পর্যটন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে।
জমিদারদের উত্তরসূরীদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ বাংলাদেশ প্রেসক্লাব লক্ষীপুর জেলা শাখার সভাপতি দৈনিক জনতার স্টাফ রিপোর্টার, বিশিষ্ট সাংবাদিক ভাস্কর বসু রায় চৌধুরী বলেন, “এই জমিদার বাড়ি শুধু ইট-পাথরের স্থাপনা নয়; এটি আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির অংশ। দ্রুত সংস্কার করা না হলে আমরা একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হারিয়ে ফেলবো।”
ইতিহাস-ঐতিহ্য গবেষকরা মনে করেন, যথাযথ সংস্কার ও সরকারি নজরদারি নিশ্চিত করা গেলে কামানখোলা জমিদার বাড়ি পর্যটকদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
