


* ভিপি, জিএস ও এজিএসসহ ২৮ পদের ২৩টিতেই জয়লাভ করেছে ছাত্র শিবির
* অতন্দ্র প্রহরী হয়ে রাজপথ পাহারা দেওয়ার আশ্বাস ছাত্রদলের পরাজিত দুই প্রার্থীর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে জয় হয়েছে ছাত্রশিবির-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা। এ নির্বাচনে ১২টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ৯টিতে এই প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া ১৩টি সদস্যের মধ্যে ১১টিতে এই প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। গতকাল বুধবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এই নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
ভিপি (সহসভাপতি) পদে শিবিরের নেতা মো. আবু সাদিক কায়েম ১৪ হাজার ৪২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ৫ হাজার ৭০৮ ভোট। এরপর স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন পেয়েছেন ৩ হাজার ৮৮৩ ভোট। স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের উমামা ফাতেমা পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৮৯ ভোট। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংসদের আবদুল কাদের ১ হাজার ১০৩ ভোট এবং প্রতিরোধ পর্ষদের তাসনিম আফরোজ ইমি পেয়েছেন ৬৮ ভোট। জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে বিজয়ী ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ পেয়েছেন ১০ হাজার ৭৯৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের শেখ তানভীর বারি হামিম পেয়েছেন ৫ হাজার ২৮৩ ভোট। এরপর প্রতিরোধ পর্ষদের প্রার্থী ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের নেতা মেঘমল্লার বসু পেয়েছেন ৪ হাজার ৯৪৯ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী আরাফাত চৌধুরী ৪ হাজার ৪৪ ভোট এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংসদের আবু বাকের মজুমদার পেয়েছেন ২ হাজার ১৩১ ভোট। এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক) পদে শিবিরের মুহা. মহিউদ্দীন খান পেয়েছেন ১১ হাজার ৭৭২ ভোট, ছাত্রদলের তানভীর আল হাদী মায়েদ ৫ হাজার ৬৪ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমীদ আল মুদাসসীর পেয়েছেন ৩ হাজার ৮ ভোট। আর প্রতিরোধ পর্ষদের জাবির আহমেদ জুবেল পেয়েছেন ১ হাজার ৫১১ ভোট। এ ছাড়া মহিউদ্দিন রনি ১ হাজার ১৩৭, আশরেফা খাতুন ৯০০, আশিকুর রহমাস জিম ৭৯৬ ও হাসিব আল ইসলাম ৫২০ ভোট পেয়েছেন। এ ছাড়া ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্যানেল থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক ফাতেমা তাসনিম জুমা (১০ হাজার ৬৩১ ভোট), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ইকবাল হায়দার (৭ হাজার ৮৩৩ ভোট), আন্তর্জাতিক সম্পাদক খান জসিম (৯ হাজার ৭০৬ ভোট ), ছাত্র পরিবহন সম্পাদক আসিফ আবদুল্লাহ (৯ হাজার ৬১ ভোট), ক্রীড়া সম্পাদক আরমান হোসাইন (৭ হাজার ২৫৫ ভোট), কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে উম্মে ছালমা (৯ হাজার ৯২০ ভোট), মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক সাখাওয়াত জাকারিয়া (১১ হাজার ৭৪৭), স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে এম এম আল মিনহাজ (৭ হাজার ৩৮ ভোট) এবং ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম (৯ হাজার ৩৪৪ ভোট) বিজয়ী হয়েছেন। শিবিরের প্যানেলের বাইরে সমাজসেবা সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবাইর বিন নেছারী (৭ হাজার ৬০৮ ভোট), সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ (৭ হাজার ৭৮২ ভোট) এবং গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী সানজিদা আহমেদ তন্বি (১১ হাজার ৭০৮ ভোট) বিজয়ী হয়েছেন। তবে ফলাফল পেয়ে উচ্ছ্বসিত ছাত্রশিবির-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী-সমর্থকেরা। তিনজন আলিঙ্গন করছেন। এদিন ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে জয়ী ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা হাত তুলে মুষ্টিবদ্ধ করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। একইসঙ্গে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট থেকে জয়ী এক নারী প্রার্থী অন্যদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছেন।
বিজয়ীদের অভিনন্দন জানালেন সাবেক ভিপি নুর: জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী ঐতিহাসিক ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী ও অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। একইসঙ্গে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অত্যন্ত ধৈর্য, কৌশল ও দক্ষতার সঙ্গে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে প্রাণবন্ত ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য। বুধবার এক বিবৃতিতে নুরুল হক নুর বলেন, আশা করি নবনির্বাচিত ডাকসু ও হল সংসদের নেতারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করে ক্যাম্পাসের সব ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনকে নিয়ে ছাত্ররাজনীতিতে একটি নব দিগন্তের সূচনা করবেন। যেখানে ছাত্ররাজনীতি হবে জাতীয় রাজনীতির কালো থাবামুক্ত এবং শিক্ষার্থী তথা জাতির কল্যাণে। ক্যাম্পাস হবে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া-গবেষণা, গান-কবিতা, আড্ডা-বন্ধুত্ব, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার তীর্থভূমি।
বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে বাকের বললেন ‘আপনাদের সঙ্গেই আছি’: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) নির্বাচিত সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছেন জিএস প্রার্থী ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ নেতা আবু বাকের মজুমদার। বুধবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই অভিনন্দন জানান। বাকের মজুমদার তার ফেসবুকে লিখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ডাকসু ও হল সংসদে যাদেরকে নিজেদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করেছেন, তাদের সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন। মঙ্গলবার উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন হলেও কিছু জায়গায় অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগ উঠেছে। তারপরও গণতান্ত্রিক চর্চায় পরাজয় মেনে নিতে আমার কোনো আপত্তি নেই। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি পা ফেলতে গিয়ে আমি শিখেছি। খুব দুঃসময়েও এ ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের জন্য সবকিছু বাজি ধরেছি। আমার ছাত্রজীবনের স্বপ্ন ছিলো শেখ হাসিনার পতন, সেটি সফল হয়েছে। যতদিন এ ক্যাম্পাসে থাকব, ততদিন আপনাদের সাথেই আছি।
ডাকসুর নতুন নেতৃত্বকে স্বাগত জানাল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বিজয়ী নতুন নেতৃত্বকে স্বাগত জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সবাইকে সাথে নিয়ে মিলেমিশে কাজ করতে নতুন নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই আহ্বান জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৫ সালের ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য গণতান্ত্রিক উত্তরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। দীর্ঘদিনের ভোটাধিকারের লড়াই ও ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সকল প্রার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানিয়েছে।
অতন্দ্র প্রহরী হয়ে রাজপথ পাহারা দেওয়ার আশ্বাস ছাত্রদলের পরাজিত দুইপ্রার্থীর: ডাকসু নির্বাচনে পরাজিত হওয়া ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেছেন, আমার যাত্রা এখানেই শেষ নয়। আমার যাত্রা অনেক দীর্ঘ। আমরা (ছাত্রদল) অতন্দ্র প্রহরী হয়ে রাজপথ পাহারা দেব, নিজেদের সবটুকু দিয়ে সমগ্র বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসব। এর প্রতিফলন আপনারা পরবর্তী ডাকসুতে দেখতে পাবেন। বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন। আবিদুল বলেন, ক্ষুদ্র জীবনে আমি এতদূর আসব কোনোদিন ভাবিনি। নির্বাচনের আগের রাতে খালেদ মুহিউদ্দিন ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ৫ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চাই? আমি কোনো সদুত্তর দিতে পারিনি। আমি আসলে কোনোদিনই জানতাম না নিজেকে কোথায় দেখতে হবে, কোথায় দেখা উচিত। একের পর এক আন্দোলন-সংগ্রাম এসেছে, নিজেকে রাজপথে সঁপে দিয়েছি। সেই পথ আজ আমাকে এতদূর নিয়ে এলো। ইটস ওকে। তিনি আরও বলেন, এই নির্বাচনে আমার দিনটা শুরু হয় মিডিয়ার অপপ্রচার দিয়ে। এদিন দুপুর থেকেই আমি বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক সমস্যা খুঁজে পেয়েছি, সারাদিন সেসব নিয়ে কথা বলেছি। এই সমস্ত অভিযোগের একটা সুষ্ঠু অনুসন্ধান ও যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে আসবে বলে এখনো আশা রাখি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে পরাজয়কে রাজনৈতিক জীবনের প্রথম পরাজয় হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্রার্থী তানভীর বারী হামীম। এই পদে বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত এস এম ফরহাদ। বুধবার তিনি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তানভীর লিখেছেন, তিনি খুব সাধারণ একজন মানুষ, হাসিখুশি হলেও সংগ্রামী। ছাত্রদল থেকে জিএস পদে প্রার্থী করে তাকে সম্মানিত করার জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ছাত্রদল নেতৃবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি।
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ