ঢাকা , বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ২৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
কুষ্টিয়ায় বাসের ধাক্কায় নারী আইনজীবীর মৃত্যু রাজধানীতে অবৈধ ওয়াকিটকি ব্যবসায় জড়িত দু’জন গ্রেফতার চাটমোহরে ওএমএসের আটা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে মানুষ এস আলমের দুই ছেলেসহ ১০ জনের নামে মামলা ফরিদপুর-৪ আসনে ভাঙ্গার দু’ইউনিয়ন নিয়ে হাইকোর্টে রিট বাগেরহাটের ৪ আসন বহালের দাবিতে মিছিল দু’দিন হরতাল পুলিশের মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদনে ব্যবসায়ী মৃত্যুশয্যায় বেবিচকের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টার কাছে অভিযোগ বাজারে জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া মা-নবজাতকের যত্নে পরিবর্তন আনছে স্বাস্থ্যশিক্ষা ১৩ ট্রাভেল এজেন্সির নিবন্ধন বাতিল ডাকসু নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিকের মৃত্যু পাট পণ্যের উপযোগিতাকে প্রাধান্য দিতে হবেÑ বাণিজ্য উপদেষ্টা গুণতে হবে বিপুল টাকা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা ভিপি প্রার্থী তাহমিনার ঢাবির কিছু শিক্ষক শিবিরের ভাষায় কথা বলছেন-নাছির শান্তিপূর্ণভাবে ডাকসু নির্বাচন সম্পন্ন আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ, দিনভর আলোচনা নানা ঘটনা নেপালে বিক্ষোভ-প্রাণহানির জেরে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ছাতকে আওয়ামী লীগ নেতা হাজী বুলবুল গ্রেফতার
শেষ মুহূর্তে উত্তেজনা, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ

শান্তিপূর্ণভাবে ডাকসু নির্বাচন সম্পন্ন

  • আপলোড সময় : ১০-০৯-২০২৫ ০১:২৭:৪৭ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১০-০৯-২০২৫ ০১:২৭:৪৭ পূর্বাহ্ন
শান্তিপূর্ণভাবে ডাকসু নির্বাচন সম্পন্ন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলে। ভোটগ্রহণ শেষে সঙ্গে সঙ্গেই ভোট গণনার কাজ শুরু হয়। তবে ডাকসু নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, রাত ১২টার মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্থাপিত এলইডি স্ক্রিনে শিক্ষার্থীরা সরাসরি ভোট গণনার কার্যক্রম দেখতে পারবেন। নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মাঝে বেশ উদ্দীপনা লক্ষ করা গেছে। সারাদিনের ভোটগ্রহণে বড় কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি, যা সবার মাঝে স্বস্তি ফিরিয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এবার ডাকসু নির্বাচনে গড়ে প্রায় ৮০ শতাংশ ভোট পড়েছে।  নির্বাচনে মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। এর মধ্যে পাঁচটি ছাত্রী হলে ১৮ হাজার ৯৫৯ জন এবং ১৩টি ছাত্র হলে ২০ হাজার ৯১৫ জন ভোটার রয়েছেন। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচনে ফলাফল পাওয়া যায়নি।
এদিকে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হলেও মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে শুরু হয় উত্তেজনা। নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এনেছেন প্রার্থীরা। এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) শুরু হয় উত্তেজনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান জানান, সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকাল ৪টার পর লাইনে যারা উপস্থিত থাকবেন তাদেরও ভোট নেওয়া হয়েছে। এদিন দুপুর দেড়টার দিকে লিফলেট বিতরণকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীনের সঙ্গে প্রশাসনের বাগবিতণ্ডার জেরে উত্তেজনা তৈরি হয় টিএসসিতে। এ সময় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। ছাত্রদলের অভিযোগ, প্রশাসন শিবিরের পক্ষে কাজ করছে। তবে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বলেন, প্রশাসন পক্ষপাতিত্ব করছে। তিনি বলেন, শিবিরের প্যানেলের পক্ষে ব্যালটে আগে থেকেই সিল মারার অভিযোগ দিতে গেলে প্রশাসন আমাদের সঙ্গে অপ্রীতিকর আচরণ করে। আমাদের কোনও কথা শুনতে চায়নি। এ সময় সেখানে অবস্থানরত শিবিরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও স্লোগান দেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। উত্তেজনা নিরসনে এ সময় সামনে বের হয়ে আসেন দায়িত্বরত শিক্ষক সামিরা লুৎফা নিত্রা। তিনি ছাত্রদল নেতাকর্মীদের শান্ত করেন। তিনি বলেন, এ কেন্দ্রে কোনও অনিয়ম হয়নি। তবে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী আল সাদী ভূঁইয়া বলেন,ছাত্রদল ও শিবিরের নেতারা আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। অথচ স্বতন্ত্র প্যানেলের কর্মীদের নানা হয়রানি করা হচ্ছে। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন বলেন, টিএসসি কেন্দ্রে শিবিরের পক্ষে সিল মারা ব্যালটের বিষয়ে অভিযোগ করতে গেলে প্রশাসন আমাদের সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করে। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এক ছাত্রী অভিযোগ করেন, এই কেন্দ্রে শিবিরের পক্ষে সিল মারা ব্যালট দেখতে পেয়েছেন তার এক বান্ধবী। যদিও শিবিরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, একুশে হলের কারচুপির অভিযোগ ঢাকতেই এ ধরনের নাটক সাজানো হয়েছে। নির্বাচনে পক্ষপাতিত্ব ও জালিয়াতি করার অভিযোগ এনেছেন প্রার্থীরা। অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব স্টুডেন্ট ফ্রন্টের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী তাহমিনা আক্তার। তিনি বলেন, আগে থেকে শিবির প্রার্থীর পক্ষে পূরণ করা ব্যালট দিয়ে এবং বিভিন্ন কৌশলে জালিয়াতি করে তাদের প্রার্থীকে জিতিয়ে দেওয়ার জন্য প্রহসনের ভোটগ্রহণ হচ্ছে। এসব কারণে আমি ভিপি পদ থেকে প্রার্থিতা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলাম। জালিয়াতির অভিযোগ ঢাকতে তাদের প্যানেলের বিরুদ্ধে বানোয়াট অভিযোগের নাটক করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী এস এম ফরহাদ। টিএসসি কেন্দ্রে আগে থেকে সাদিক কায়েম ও ফরহাদের ব্যালটে সিল মারা ছিল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করেন ফরহাদ। এর আগে তিনি ছাত্রদলকে প্রশাসনের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রের বাইরে কাকে ভোট দিতে হবে তাদের নাম লিখে একটা তালিকা ভোটারদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এই তালিকাটা শিবিরের প্রার্থীর। শুধু তাই নয়, শিবিরের স্বতন্ত্র নামে প্রার্থী তালিকাও তুলে দেওয়া হচ্ছে। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি দুটো তালিকার ছবি তুলে ধরেন।
কারচুপির অভিযোগে ভোট বর্জন স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী তাহমিনার: কারচুপির অভিযোগ এনে ডাকসু নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেন তাহমিনা আক্তার নামে এক স্বতন্ত্র সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী। মঙ্গলবার বিকেলে টিএসসিতে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভোটকেন্দ্রে ভোট কারচুপি ও দখলদারিত্ব হয়েছে। তাহমিনা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, আগে থেকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রার্থীর পক্ষে পূরণ করা ব্যালট দিয়ে এবং বিভিন্ন কৌশলে জালিয়াতি করে তাদের প্রার্থীকে জিতিয়ে দেয়ার জন্য প্রহসনের ভোটগ্রহণ হয়েছে। স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী তাহমিনা বলেন, এ ভুয়া নির্বাচন বর্জন ও বয়কট করলাম। শিবিরের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট ভিসি ও নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সবার ওপর অনাস্থা জ্ঞাপন করে তাদের পদত্যাগ দাবি করছি এবং বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। একইভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ভোট গণনায় কারচুপি হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংসদ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার। মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণের পর ভোট গণনা চলার মধ্যে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এই শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সভাপতি বাকের মজুমদার বলেন, প্রতি হলের ৩০০টি ভোট করে যদি কনভার্ট (অন্য প্রার্থীর দেখানো) করতে পারে, তাহলে ৫ হাজার ৬০০ ভোট হয়ে যায়। একজন প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার জন্য এর চেয়ে বেশি ভোটের প্রয়োজন নেই। আমরা জানি না ভেতরে নির্বাচন নিয়ে এখন কী হচ্ছে।
কোন কেন্দ্রে কত ভোট পড়লো: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে (ডাকসু) ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। নির্বাচনের আটটি কেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে কার্জন হল কেন্দ্রে। এখানে মোট ৮৪ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। অপরদিকে শামসুন নাহার হলের শিক্ষার্থীদের ইউ ল্যাব স্কুলে ৬৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। কেন্দ্রের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিন কার্জন হলে ভোট দেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল, অমর একুশে হল ও ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থীরা। এ কেন্দ্রে মোট ভোটার ৫ হাজার ৭৭ জন। কার্জন হল কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসার এম এম মহিউদ্দীন বলেছেন, ফজলুল হক মুসলিম হলে ১৪৪৩ জন, শহীদুল্লাহ হলে ১৯০৯, অমর একুশে হলে ১ হাজার ৮৩ জন ভোট দিয়েছেন। অর্থাৎ কেন্দ্রটিতে মোট ভোটের হার ৮৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা। এ কেন্দ্রে মোট ভোটার ৫ হাজার ৬৬৫ জন। কেন্দ্র প্রধান শামসুন নাহার হলের প্রভোস্ট নাসরীন সুলতানা বলেছেন, এখানে ভোট দিয়েছেন ৩ হাজার ৯০৭ জন, যা প্রায় ৬৯ শতাংশ। নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ভোট দেন বিজয় একাত্তর হল, স্যার এ এফ রহমান হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ও বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থীরা। এখানে মোট ভোটার ৪ হাজার ৮৩০ জন। কেন্দ্রের পোলিং অফিসার অধ্যাপক আইনুল ইসলাম বলেন, বিজয় একাত্তর হলে ৮৫ শতাংশ, এ এফ রহমান হলে ৮৩ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং মুহসীন হলে ৮৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। সব হল মিলিয়ে ৮৪ শতাংশ কাস্ট হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের শিক্ষার্থীরা। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ হাজার ৭৫৫। কেন্দ্র প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক শারমীন কবীর বলেন, তার কেন্দ্রে ৭০ শতাংশের কাছাকাছি ভোট কাস্ট হয়েছে। ইউল্যাব স্কুল কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন শামসুন নাহার হলের শিক্ষার্থীরা। এ কেন্দ্রে মোট ভোটার ৪ হাজার ৯৬ জন। কেন্দ্র প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা শহিদুল জাহিদ বলেন, কেন্দ্রটিতে ৬৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। উদয়ন স্কুল কেন্দ্রে সূর্যসেন হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও কবি জসীম উদ্দীন হলের শিক্ষার্থীরা ভোট দিয়েছেন। এ কেন্দ্রে মোট ভোটার ৬ হাজার ১৫৫ জন। কেন্দ্রের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক শামীম রেজা বলেন, চারটি হলে মোট ভোটার ছিলেন ৬ হাজার ১৬৩ জন। এর মধ্যে ৫ হাজার ১৪১ জন ভোট দিয়েছেন, যা প্রায় ৮৩ শতাংশ। তিনি বলেন, সূর্যসেন হলে মোট ভোটার ছিলেন ১ হাজার ৪৯৮ জন। এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১ হাজার ৩১৬ জন, যা প্রায় ৮৮ শতাংশ। জসীম উদ্দিন হলে মোট ভোটার ১ হাজার ৩০৩ জনের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১ হাজার ১১৭ জন, যা ৮৬ শতাংশ। জিয়া হলে মোট ভোটার ছিলেন ১ হাজার ৭৫৩ জন, এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১ হাজার ৩১৫ জন, যা প্রায় ৭৫ শতাংশ। অন্যদিকে মুজিব হলে মোট ভোটার ছিলেন ১ হাজার ৬০৯ জন। এর মধ্যে ভোট কাস্ট হয়েছে ১ হাজার ৩৯৩টি, যা ৮৭ শতাংশ। ভূতত্ত্ব বিভাগ কেন্দ্রে সুফিয়া কামাল হলের ৪ হাজার ৪৪৩ শিক্ষার্থী ভোট দিয়েছেন। কেন্দ্র প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী মারুফুল ইসলাম বলেছেন, কেন্দ্রটিতে ২৯৪৭ জন ভোট দিয়েছেন। মোট ৬৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ কাস্ট হয়েছে। শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন জগন্নাথ হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের শিক্ষার্থীরা। কেন্দ্রটিতে মোট ভোটার ৪ হাজার ৮৫৩ জন। কেন্দ্রের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী মোস্তাক গাউসুল হক বলেন, এ কেন্দ্রে তিনটি বুথে মোট ৪ হাজার ৮৬১ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৪ হাজার ৪৪ জন, যা প্রায় ৮৩ শতাংশ। তিনি বলেন, এর মধ্যে জগন্নাথ হলে মোট ২ হাজার ২২২ জন ভোটারের মধ্যে ভোট কাস্ট হয়েছে ১ হাজার ৮৩১টি এবং অনুপস্থিত ছিলেন ৩৯১ জন। শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ১ হাজার ৯৬৩ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১ হাজার ৬৬০ জন, অনুপস্থিত ছিলেন ৩০৩ জন। স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৬৬৯ জন ভোটারের মধ্যে ভোট কাস্ট হয়েছে ৫৫৩টি এবং অনুপস্থিত ছিলেন ১১৬ জন।
‘রাজাকার’ ও ‘ভোট চোর’ স্লোগান: ডাকসু নির্বাচনে টিএসসি কেন্দ্রে প্রবেশ নিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে তুমুল বাগবিতণ্ডায় জড়িয়েছেন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান। তিনি ভোট গণনা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে চাইলে কর্মকর্তারা সুযোগ দিচ্ছেন না। এ সময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন। ছাত্রদল কর্মীদের অভিযোগ, সেখানে শিবিরের কর্মীরা অবস্থান করছেন। তাই ছাত্রদল নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দিতে হবে। কিন্তু প্রশাসন জানায়, এ সময় কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে আবিদ ও তার সমর্থকরা তা মানতে নারাজ। তারা শিক্ষক নাসিমা বেগমের বিরুদ্ধে ভোট চুরির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনেন। তারা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের শিবিরের দালাল ও রাজাকার বলে স্লোগান দেন। ফটকের অপর প্রান্তে শিক্ষকরা এবং বাইরের দিকে ছাত্রদলের কয়েকশত নেতাকর্মী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, এই কেন্দ্রে শিবিরের পক্ষে ভোট কারচুপি হয়েছে। তাই ছাত্রদলসহ অন্যান্য প্যানেলের শিক্ষার্থীরাও ভোট গণনা দেখতে চাচ্ছেন। কিন্তু প্রশাসন কোনও কথা শুনছে না। তারা আমাদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছেন। আমরা প্রবেশ না করা পর্যন্ত সেখান থেকে সরবো না। তিনি বলেন, প্রশাসন এখনও ব্যালট বাক্স লুকিয়ে রেখেছে।
ফলাফল গণনায় অনিয়ম হলে শিক্ষার্থীরা মানবে না: ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল গণনায় অনিয়ম হলে শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ভোট গণনায় প্রভাব বিস্তার করতে সারা দেশের জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসের আশেপাশে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমাদের দৃষ্টিতে দেশবাসীর প্রত্যাশা অনুযায়ী ভোট হয়নি। মঙ্গলবার ভোট শেষ হওয়ার পর সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় মধুর ক্যান্টিনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন। ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, সকাল থেকেই আমরা বিভিন্ন অভিযোগ জানিয়ে আসছি। কিন্তু প্রশাসন কর্ণপাত করেনি। টিএসসিতে শিবিরের প্যানেলের প্রার্থীদের সিল মারা ব্যালট পাওয়া গেলেও সেটার পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এর বাইরেও ১২টি অভিযোগ দিয়েছি। তারা শুধু আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, টিএসসিতে আমাদের একজন ছাত্রী কর্মী লিফলেট বিতরণ করতে গেলে তার ছাত্রত্ব বাতিল করার হুমকি দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এসব কারণে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ। তারপরও আমরা এখন পর্যন্ত ধৈর্য ধরে আছি। কোনও অন্যায় আমরা মেনে নেবো না। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন একই প্যানেলের জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামীম ও এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ।
ডাকসু নির্বাচন যে প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়েছে, তা সন্তোষজনক: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, দু-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে এখন পর্যন্ত যে প্রক্রিয়ায় ডাকসু নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে তা সন্তোষজনক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রত্যাশিত সংখ্যায় অংশগ্রহণ করেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন। পোস্টে তিনি লিখেছেন, ভোট গণনা চলছে, এরপরই ফলাফল। শিক্ষার্থীরাসহ সারা দেশ এই ফলাফলের দিকে তাকিয়ে আছে। তিনি বলেন, একটা অভ্যুত্থানের ফসল এই ডাকসু। শুধুমাত্র রাজনৈতিক কামড়াকামড়ি আর জেতা-হারার ভয়ে ডাকসুটা যেন নষ্ট না হয়। যদি এটা হয়, তাহলে যাদের কারণে এটা হবে তারা এর দায় কখনো এড়াতে পারবে না এবং এই দায়ের বোঝা নিয়ে সামনে চলতেও পারবেন না। তিনি আরও লেখেন, কেউ যদি ভাবেন- নিজে জিততে না পারলে ডাকসু সফলভাবে শেষ হতে দেব না, তাহলে ডাকসু বানচাল করার মধ্য দিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনাদের রাজনীতির কবর রচিত হবে।
ভোট সুষ্ঠু হলে ফলাফল যাই হোক, মেনে নেবে ছাত্র দল: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের (ডাকসু) নির্বাচনে ভোট সুষ্ঠু হলে ফলাফল যাই হোক, মেনে নেব। মঙ্গলবার সকালে ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এই মন্তব্য করেন। রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, আমরা ?এখন পর্যন্ত প্রত্যাশা রাখছি নির্বিঘ্নেই এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, বুথের তুলনায় যথেষ্ট পোলিং এজেন্ট নেই, যা সমস্যা তৈরি করছে। একজন ভোটারকে দুটো ব্যালট পেপার দেওয়ারও অভিযোগ আছে।
উল্লেখ্য, প্রায় ৬ বছর পর অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, বিরতিহীনভাবে চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এবারের ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩৯ হাজার ৮৭৪। এর মধ্যে ছাত্র ভোটার ২০ হাজার ৯১৫ এবং ছাত্রী ১৮ হাজার ৯৫৯ জন। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮টি কেন্দ্রে ৮১০টি বুথে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচনে মোট ২৮টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৪৭১ জন প্রার্থী। সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে লড়েছেন ৪৫ জন এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন প্রার্থী। সব মিলিয়ে এবার একজন ভোটারকে ৪১টি করে ভোট দিতে হয়। ভোট নেওয়া হয় ওএমআর ফরমে, ৬ পাতার ব্যালটে। ১৪টি গণনা মেশিনে ৮টি কেন্দ্রে চলছে ফলাফল গণনা। ফলাফল ঘোষণা করা হচ্ছে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে। ভোট গণনা সরাসরি দেখানো হচ্ছে এলইডি স্ক্রিনে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স