ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫ , ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা সেই রিকশাচালকের জামিন ধানমন্ডিতে আটক রিকশাচালককে হত্যা মামলার আসামি করা হয়নি-ডিএমপি রিকশাচালক আজিজুর কিসের ভিত্তিতে আটক-জানতে চেয়েছে সরকার শেখ মুজিবের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ লিখে টাকা-ফ্ল্যাট দেওয়ার ঘটনা তদন্তে দুদককে লিগ্যাল নোটিশ আইন উপদেষ্টার বক্তব্য চিকিৎসকদের পেশাদারিত্বের ওপর আঘাত-ডা. রফিকুল না ভোট রাখার প্রস্তাব দেয়নি বিএনপি-নজরুল ইসলাম খান জুলাই সনদ নিয়ে ২০ আগস্টের মধ্যে মত জানাবে বিএনপি সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার রোধে সক্রিয় হচ্ছে বিএনপি রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান চায় বাংলাদেশ-নিরাপত্তা উপদেষ্টা পোরশায় উৎসবমুখর পরিবেশে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপিত ফরিদপুরে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ পালিত ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন -উপদেষ্টা রিজওয়ানা দেশ যেন চরমপন্থা ও মৌলবাদের অভয়ারণ্য হতে না পারে -তারেক রহমান কর্মকর্তারা কোনো দলের লেজুড়বৃত্তি করতে পারবে না-স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্যবসা-বাণিজ্যের বিরোধ মীমাংসায় পৃথক আদালতের প্রস্তাব প্রধান বিচারপতির একনেকে ১১ প্রকল্প অনুমোদন ব্যয় ৯৩৬১ কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্র-ভারত শুল্ক আলোচনা বাতিল বন্দরে বিদেশি অপারেটরের বিরোধিতা নয়, সমর্থন করা উচিত: বিকেএমইএ’র সভাপতি মশক নিধনের বাজেট বাড়লেও মশা কমছে না রাষ্ট্রপতির ছবি সরানো নিয়ে জল্পনা-কল্পনা

ড্রামের খোলা ভোজ্যতেল জনস্বাস্থ্যের হুমকি বাড়াচ্ছে

  • আপলোড সময় : ৩০-০৫-২০২৪ ০৯:৪৮:০৯ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ৩১-০৫-২০২৪ ১২:১১:২৫ পূর্বাহ্ন
ড্রামের খোলা ভোজ্যতেল জনস্বাস্থ্যের হুমকি বাড়াচ্ছে
ভোজ্যতেল আমাদের দৈনন্দিন চাহিদার অন্যতম একটি প্রধান পণ্য। খাদ্যমানবিহীন কেমিক্যাল ড্রামে তেল পরিবহন করায় তেলের গুণগতমানও ঠিক থাকে না। এছাড়া এসব তেলের ড্রাম পরিষ্কার না করেই বারবার ব্যবহারে মারাত্মক রোগ-জীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। ভোজ্যতেল খাদ্যপণ্য বিধায় এটি নিরাপদভাবে প্যাকেজিং, মোড়কাবদ্ধ ও লেভেলিং করে ভোক্তার কাছে পৌঁছানোর আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোনো উপকরণ দিয়ে তৈরি প্যাকেট বা পাত্রে ভোজ্যতেল বাজারজাত না করার বিধানও রয়েছে। সংবিধানের ১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং সুরক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। নিরাপদ এবং গুণগত মানসম্পন্ন খাবার নিশ্চিত করা সরকারের অগ্রাধিকারভুক্ত কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং এটি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) সবার জন্য সুস্বাস্থ্য সংক্রান্ত লক্ষ্য অর্জনের সাথেও সম্পৃক্ত। পাশাপাশি ২০১৩ সালে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন এবং ২০১৫ সালে বিধিমালা প্রণয়ন করে। ভোজ্যতেল ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন, ২০১৩ এবং ভোজ্যতেল ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ বিধিমালা, ২০১৫ অনুযায়ী, সব ভোজ্যতেলে (সয়াবিন তেল, পাম তেল, পাম তেল এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অন্য যেকোনো উদ্ভিজ্জ ভোজ্যতেল) নির্ধারিত মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ভোজ্যতেল ড্রামে বাজারজাতকরণ বন্ধ করা এবং এর পরিবর্তে বিভিন্ন আকৃতির ফুড গ্রেডেড পাউচ প্যাকে (প্লাস্টিক বোতল, পলিপ্যাক, প্লাস্টিক ফয়েল ইত্যাদি) ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ বিষয়ে ২০২১ সালে অংশীজনদের নিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ে একাধিক সভা হয়। ওই সভাগুলোতে গৃহীত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ১ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক এক নির্বাহী আদেশে ১৬ মার্চ ২০২২ তারিখের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর ননফুড গ্রেডেড ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাত ও পরিবহন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণের কথা বলা হয়। তবে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তুতির ঘাটতি বিবেচনায় শিল্প মন্ত্রণালয় এ সময়সীমা বৃদ্ধি করে। সর্বশেষ ২০২২ সালের ২ জুন এ জারিকৃত নির্দেশনায় খোলা সয়াবিন তেল বাজারজাতকরণের সময়সীমা ৩১ জুলাই এবং খোলা পামতেল বাজারজাতকরণের সময়সীমা একই সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এ সময় সীমার পর শতভাগ ভোজ্যতেল ফুডগ্রেড বোতল/ প্লাস্টিক ফয়েল/ পাউচপ্যাকে বাজারজাতকরণ নিশ্চিত করতে বলা হয়। যা এখনো কার্যকর হয়নি।
শিল্প মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) মো. শামীমুল হক বলেন, খোলা ভোজ্যতেল বিক্রি বন্ধ করতে হবে। খোলা ভোজ্যতেল বিক্রি বন্ধ কবে থেকে কার্যকর হবে সে বিষয়ে এ মাসে একটা মিটিংয়ের তারিখ ছিল, তবে সেটা এখনো হয়নি। আশা করছি কোরবানির ঈদের পরে মিটিংয়ে খোলা ভোজ্যতেল বাজারে বিক্রি বন্ধের একটা সময়সীমা নির্ধারণ করা হবে। ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে রাতকানা রোগ, চোখের শুষ্কতা ও কর্নিয়ার ক্ষতি, ইনফেকশন, দেহের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়াসহ নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে থাকে। পাশাপাশি ভিটামিন ‘এ’ স্বল্পতা মানবদেহে পুষ্টির ঘাটতি ঘটায় এবং এর ফলে বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
দেশের আইন অনুযায়ী ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ ব্যতীত ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ দণ্ডনীয় অপরাধ। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে ড্রামে বাজারজাতকৃত ৫৯ শতাংশ ভোজ্যতেলই ভিটামিন সমৃদ্ধ নয় এবং ৩৪ শতাংশ ভোজ্যতেলে সঠিকমাত্রায় ভিটামিন নেই। ড্রামের খোলা ভোজ্যতেল মানুষের জন্য কতটা ক্ষতিকর জানতে চাইলে লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন কান্ট্রি অ্যাডভোকেসি বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. রীনা রাণী পাল বাংলানিউজকে বলেন, খোলা ভোজ্যতেল ক্যামিকেলের ড্রামে ভর্তি করে বিক্রি করা হয়। একই ড্রাম বারবার ব্যবহার করা হয়। ড্রামের মুখ অনেক ছোট থাকায় ভালোমতো পরিষ্কার করাও প্রায় অসম্ভব। তাই এসব ড্রামে ক্যামিকেলের অংশবিশেষ থেকেই যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি, যা অল্প পরিমাণের হলেও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। যেকোনো ক্যামিকেলে কিডনি, হৃৎপিণ্ড ও লিভারের ক্ষতি হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ড্রামের ভোজ্যতেল বিক্রির কারণে ভিটামিন এ ফর্টিফিকেশন আইনের বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। কারণ এসব তেলের ড্রামের উৎস শনাক্ত করা যায় না। এসব ড্রামের তেলে সয়াবিনের মধ্যে পামওয়েল সহজেই মিশিয়ে বিক্রি করা যায়। অন্যদিকে খোলা ভোজ্যতেল বিক্রির প্রক্রিয়াও বেশ অস্বাস্থ্যকর। নন ফুড গ্রেডেড এসব ড্রামের দীর্ঘদিন খোলা থাকায় আলো ও বাতাসের সংস্পর্শে আসার ফলে তেলের গুণগত মানও নষ্ট হয়ে যায়। মানবদেহে ভিটামিন ‘এ’ এর স্বল্পতা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একটি নীরব মহামারি আকারে ধরা পড়ছে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকার বেশ কিছু অঞ্চলে এ প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
জার্নাল অব হেলথ, পপুলেশন অ্যান্ড নিউট্রিশনে প্রকাশিত এক গবেষণায় থেকে জানা যায়, ভারতে ভিটামিন ‘এ’ স্বল্পতার হার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মধ্যে সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৬২ শতাংশ প্রাক-স্কুল শিশু ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবে ভুগছে এবং এরফলে বছরে প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার শিশু মৃত্যুবরণ করে। পাকিস্তান এবং শ্রীলংকায়ও এ সমস্যা প্রকট। বাংলাদেশও ভিটামিন ‘এ’ স্বল্পতাজনিত স্বাস্থ্য সমস্যার প্রকোপ থেকে মুক্ত নয়। জাতীয় মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট জরিপ ২০১৯-২০ অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি দুইজনে একজন শিশু ভিটামিন ‘এ’ স্বল্পতায় ভুগছে।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনিস্টিটিউশন (বিএসটিআই) ২০১৮ থেকে জুন, ২০২১ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৯১৩টি (বোতল- ৫২০টি, ড্রাম- ৩৯৩) নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষা করা হয়, যেখানে অধিকাংশ (৮৭%) বোতলজাতকৃত তেলে ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া গেলেও ড্রামে বাজারজাতকৃত তেলে এটি পাওয়া গেছে মাত্র ৫২.৬৭ শতাংশ। অর্থাৎ ৪৭.৩৩ শতাংশ ড্রামে বাজারজাতকৃত তেলেই ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায়নি, যা উদ্বেগজনক।
আইসিডিডিআরবি পরিচালিত এক গবেষণায় থেকে জানা যায়, বাজারে প্রাপ্ত খোলা ভোজ্যতেলের ৫৯ শতাংশ নমুনায় ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায়নি। এক-তৃতীয়াংশ নমুনায় পরিমিত মাত্রার চেয়ে কম ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া গেছে। মাত্র ৭ শতাংশে সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ সাইন্স অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের পুষ্টি ও স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র নিউট্রেশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান ড. শারমিন আক্তার বলেন, ভিটামিন এর স্বল্পতায় আমাদের বিভিন্ন ধরনের স্কিন ডিজিজ হতে পারে। রাতকানা রোগসহ চোখের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। গর্ভবতী মায়েদের ভিটামিন ‘এ’ স্বল্পতায় বাচ্চা পরবর্তীতে চোখে কম দেখতে পারে। এছাড়াও ভিটামিন ‘এ’এর অভাবে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তিনি আরও বলেন, ভোজ্যতেল আমাদের নিত্য দিনের সঙ্গী। আমরা ধনী গরিব নির্বিশেষে সবাই খাবারে তেল ব্যবহার করি। সুতরাং ভোজ্যতেলে যদি ফর্টিফাইড করে ভিটামিন এ মিশিয়ে দেওয়া যায় তাহলে ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে যেসব শারীরিক সমস্যাগুলো হতে পারে কিংবা এরই মধ্যে হচ্ছেও সেসব জটিলতা কমে আসবে।  জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ পদক্ষেপের যথাযথ বাস্তবায়ন ভিটামিন ‘এ’ স্বল্পতাজনিত বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। সুস্থ ও কর্মক্ষম জাতি গঠনে খোলা ড্রামে ভোজ্যতেল বিক্রি বন্ধ করা এবং দেশের জনগণকেও নিজেদের সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে খোলা ভোজ্যতেল ব্যবহার না করার পরামর্শও দেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ