
নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি সাবেক তিন ভিপির
- আপলোড সময় : ০৭-০৯-২০২৫ ০৫:০২:২৫ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৭-০৯-২০২৫ ০৫:০২:২৫ অপরাহ্ন


আগামী মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল নির্বাচন ‘হাত-পা বেঁধে’ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান। একটি পক্ষকে সুবিধা দেওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই নিয়ম করেছে বলে মনে করেন তিনি। পাশাপাশি ডাকসুর সাবেক ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও মাহমুদুর রহমান মান্না দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার দাবি করেছেন। তারা বলেছেন, অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারেও নির্বাচনের দিন-তারিখ উল্লেখ করে দেওয়ার জন্য।
পরীক্ষার তারিখের মতোই ডাকসু নির্বাচনের তারিখ অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারে থাকতে হবে, এমন আশাবাদ রেখে ১৯৭২-৭৩ সেশনে ডাকসুর ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, প্রতিবছর এটা নিয়মিত হবে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন ভয়েস যেন উঠে আসে। তিনি বলেন,শুধু ছাত্রদের ভেতর থেকে নেতা হবে, এমনটা সঠিক না। খালি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই নেতা হবে? কৃষক, শ্রমিক, অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেতা হবে না? সিপিবির সাবেক এই সভাপতি বলেন, নিয়মিত নির্বাচন হলে শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার নিয়ে সচেতন থাকতে পারবে। আমার প্রত্যাশা হলো, এতদিন দখলদারত্বের মাধ্যমে একটা রুগ্ন রাজনীতির অনুষঙ্গ হিসেবে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল,সেই অবস্থা থেকে বেরুতে ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং সবগুলোতে এটা চালু হতে হবে এবং এটা অব্যাহত থাকবে এবং সেখানে সাধারণ ছাত্রদের ভয়েস সামনে উঠে আসে। তিনি বলেন, শুধু ডাকসু নয়, প্রত্যেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত প্রতি বছর নির্বাচন হওয়া উচিত।
এবারের ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ডাকসুর সাবেক দুইবারের ভিপি (৭৯-৮০ ও ৮০-৮১ সেশন) মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিগত সময়ের মতো এবারের নির্বাচনে তেমন প্রচার প্রসার দেখছি না। হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় সেরকম রাজনীতি চায় না। তারা বিরাজনীতিকরণ চায়। এজন্য তেমন আমেজ লক্ষ্যণীয় নয়। এবারের ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীরা আপনার কাছ থেকে পূর্ব অভিজ্ঞতা নিতে এসেছে কিনা বা আপনার পছন্দের কোনও প্রার্থী আছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার নিজের দল থেকেই তো ইলেকশনে দাঁড়িয়েছে। তাদের একটা পরিষদ আছে। তো সে জায়গায় অন্য কেউ আমার কাছে এলে বা তাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করলে তো ডাবল স্ট্যান্ড হয়ে যাবে। সেটা তো আবার ঠিক হবে না। এই নির্বাচন নিয়ে কোনও শঙ্কা আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে মান্না সরাসরি নাকচ করে দিয়ে বলেন, না, তেমন কোনও শঙ্কা দেখছি না। হাইকোর্টের যে নির্দেশনা ছিল— তা তো বহাল হয়নি, নির্বাচন হচ্ছে। আপাতত আর কোনও শঙ্কা দেখছি না। ছাত্রসংসদ নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা আসলে কতখানি, এমন প্রশ্নের জবাবে মান্না বলেন, ডাকসুর কমবেশি সবাই এখন জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে ভূমিকা পালন করছেন। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো— ডাকসুটাও ঠিকমতো হয় না, অন্যান্য ক্যাম্পাসের ছাত্র সংসদ নির্বাচের কথা বাদ দিলাম, কিন্তু এটা আসলে ঠিক না। রাজনীতিতে তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ এবং স্মার্ট নেতৃত্ব তৈরি করার জন্য হলেও নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমান বলেন, ডাকসু হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় সংসদ। ডাকসু নির্বাচন প্রতিবছরই হওয়া উচিত এবং ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাতীয় নেতৃত্ব গড়ে ওঠে। ১৯৯০-৯১ সেশনে ডাকসুর এই ভিপি বলেন, আমরা ডাকসুর সাবেক হিসেবে ক্যাম্পাসে যেতে পারছি না। সাবেক ছাত্ররা তারাও যেতে পারছে না। এটা তো ‘হাত-পা বেঁধে’ একটা ডাকসু নির্বাচন করা হচ্ছে। এখানে তো ডাকসুর সাবেক নেতারা যেতে পারবে না। সেখানে তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারবে না, কথা বলতে পারবে না। এরকম তো কখনও হয়নি। এই প্রথম। এক প্রশ্নের জবাবে আমান উল্লাহ বলেন, হ্যাঁ। এটা প্রশাসন করছে। আমার মনে হয়, এভাবে এটা করা ঠিক হয়নি। আগে কখনও এমন হয়নি। আমরা যখন ডাকসু নির্বাচন করি, নেতৃত্ব এসেছে। জাতীয় নেতারা এসেছেন (ক্যাম্পাসে)। তারা প্যানেল পরিচিতিতে এসেছেন, বিভিন্ন হল প্যানেল পরিচিতিতে এসেছেন। এর নেপথ্যে কি রাজনীতি আছে বলে আপনার মনে হয়, জানতে চাইলে আমান উল্লাহ বলেন, এখানে অবশ্যই একটা উদ্দেশ্য আছে, অবশ্যই। তাদের কোনও না কোনও চিন্তাভাবনা আছে— যার জন্য তারা এটা করেছে। কী চিন্তা থাকতে পারে, সেটা আপনারা বুঝে নেন। কারণ, ডাকসুতে একটা পক্ষ তো এবার প্রথমবারের মতো অংশ নিচ্ছে। যাই হোক এজন্যই আমি বলছি, আসলে এভাবে হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটতে বললে, সেই সাঁতারে কতটুকু টিকে থাকতে পারে— সেটা আপনারা বুঝেন’, উল্লেখ করেন আমান। আমান উল্লাহ আমান জানান, ১৯৭৯-৮০-৮১ সেশনে ডাইনিংয়ে খাবারের জন্য ডিপোজিট করে দিয়েছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ব্যবস্থাও তিনি সহজ করে দেন বলে জানান। তিনি এও উল্লেখ করেন, খালেদা জিয়াও প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় পরিবহন সমস্যার সমাধান করেছেন। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ পরিবহনের ব্যবস্থা করেছিলেন।
এবারের নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেল নিয়ে আমান উল্লাহ আমান বলেন, জুলাই আন্দোলনে ছাত্রদের ব্যাপক ভূমিকা ছিল। আন্দোলনে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ভূমিকা রেখেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের ছাত্রসমাজ ভূমিকা রেখেছে। আবু সাঈদ শহীদ হয়েছেন। চট্টগ্রামের ছাত্রদলের ওয়াসিম শহীদ হয়েছেন। এরকমভাবে অনেক ছাত্রজনতা শহীদ হয়েছেন। ছাত্রদলের নির্বাচিত সাদারণ সম্পাদক ইলিয়াস আলী গুম হয়েছেন। ছাত্রনেতা সুমন গুম হয়েছেন। বর্তমানে ডাকসুর ছাত্রদলের যে প্রার্থী আবিদ, তিনিও একটি বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন, এই সময় থাকার কথা ছিল কবরে, আমি রয়েছি আজকে এখানে। অতএব, আমরা আন্দোলন করেছি, সংগ্রাম করেছি দেশের জন্যে। দেশের মানুষের জন্যে, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য— সেই আন্দোলনে আমরা সফল হয়েছি। অতএব, আগামী দিনে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্যে, দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্যে এবং গণতন্ত্র রক্ষার জন্যে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল যদি নির্বাচিত হয়, সেই ভূমিকা অতীতের মতো আগামী দিনেও অব্যাহত রাখবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ