ঢাকা , শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ২২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
জমজমাট প্রচারণায় উৎসবমুখর ক্যাম্পাস মহানবী (সা.)-এর অনুপম জীবনাদর্শ বিশ্বে শান্তি ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে-প্রধান উপদেষ্টা পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আজ ন্যায়বিচার-মানবিক মর্যাদা রক্ষায় মুহাম্মদ (সা.) আমাদের জন্য অনন্য আদর্শ-প্রধান বিচারপতি পেশাগত দায়িত্বপালনে মৃত্যু ঝুঁকিতে গণমাধ্যমকর্মীরা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নানা শঙ্কা মৎস্য খাতে দেশের বিজ্ঞানীদের অবদান গর্ব করার মতো- প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বেশির ভাগ সময়ই বন্ধ রেলের কংক্রিট সিøপার কারখানা টেকনাফে ২ রোহিঙ্গা ডাকাত গ্রেফতার স্কুলে সংগীত শিক্ষক নিয়োগে কঠোর হুঁশিয়ারি হেফাজতের নীলফামারীতে শ্রমিকের প্রাণহানির প্রতিবাদে ঢাকায় মানববন্ধন মাদক সেবনে বাধা দেয়ায় স্বামী-স্ত্রীকে পিটিয়ে জখম জুলাই আন্দোলনের হত্যাচেষ্টা মামলায় কারাগারে সাবেক এমপি পাভেল ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকাকে জাতীয় নির্দেশনায় অন্তর্ভুক্তির আহ্বান ফরিদপুরে আসন বিন্যাসের প্রতিবাদে দুই সড়ক অবরোধ অনশনরত শিক্ষার্থীদের পাশে ববি উপাচার্যের রাত্রিযাপন তারেক রহমানের উপহারের ঘর পেলেন শুক্কুরি বেগম গণঅধিকার পরিষদের সংহতি সমাবেশে ৩০ রাজনৈতিক দলের নেতারা আলু রফতানির চেষ্টা করছে সরকারÑ বাণিজ্য উপদেষ্টা নিত্যপণ্যের অসহনীয় দামে দিশাহারা সাধারণ মানুষ
* সাংবাদিকদের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠছে বাংলাদেশ হ পেশাগত দায়িত্ব পালনে ৯৬ সাংবাদিক হামলা-হুমকি, হত্যা ও নির্যাতনের শিকার

পেশাগত দায়িত্বপালনে মৃত্যু ঝুঁকিতে গণমাধ্যমকর্মীরা

  • আপলোড সময় : ০৬-০৯-২০২৫ ০৩:৩৮:৩৬ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৬-০৯-২০২৫ ০৩:৩৮:৩৬ অপরাহ্ন
পেশাগত দায়িত্বপালনে মৃত্যু ঝুঁকিতে গণমাধ্যমকর্মীরা
বাংলাদেশ সাংবাদিকদের জন্য একটি বিপজ্জনক স্থান হয়ে উঠছে, যা আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের (আরএসএফ) তথ্যমতে, এটি সাংবাদিকদের জন্য সাংবাদিকদের কাজের জন্য বিপজ্জনক দেশগুলোর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। এই প্রতিবেদনে গাজা ও পাকিস্তানের পর বাংলাদেশকে সাংবাদিকদের জন্য বিপজ্জনক দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় গত আগস্ট মাসে অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের প্রতিবেদক মো. আসাদুজ্জামান তুহিনকে। পরে সিসি ক্যামেরা ফুটেজে দেখা যায়, ঈদগাঁ মার্কেটের নিচতলায় একটি কাপড়ের দোকানের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় পেছন থেকে এক নারীকে ধাক্কা দেয় এক ব্যক্তি। তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে পেছন থেকে অস্ত্র নিয়ে ওই ব্যক্তির ওপর হামলা চালায় কয়েক জন যুবক। ৪ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের শৈবাল পয়েন্ট এলাকায় ঝাউবাগানের একটি গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় এক সংবাদকর্মীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে জানা যায়, নিহত ব্যক্তি সাংবাদিক আমিন উল্লাহ। তিনি জাতীয় দৈনিক আমার প্রাণের বাংলাদেশ পত্রিকার উখিয়া উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এলাকাবাসী জানান, আমিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরি করতেন। পাশাপাশি লেখালেখি করতেন এবং সমসাময়িক বিষয় নিয়ে ফেসবুকে সক্রিয় ছিলেন। স্থানীয়ভাবে তার সঙ্গে কারও বড় কোনও ঝামেলা বা শত্রুতা ছিল— এমন তথ্য জানা যায়নি। তবে অপর একটি সূত্র সংবাদকর্মীদের কাছে দাবি করে, ইয়াবা কারবারিদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করায় কিছু দুর্বৃত্ত তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। একইদিন ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আদালতে আরেকটি ঘটনা ঘটে। সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নার জামিন শুনানিতে কর্তব্যরত সাংবাদিকরা আইনজীবীদের হামলার শিকার হন।
 উপস্থিত অন্য সংবাদকর্মীরা বলেন, সাংবাদিক মুক্তাদির রশীদ এজলাসে পান্নার সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাকে বের হয়ে যেতে ধমকাতে থাকেন আইনজীবী মহিউদ্দিন মাহী। এ সময় মুক্তাদির রশীদ বলেন, আদালত কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার ক্ষমতা কেবলমাত্র বিচারকের আছে। তিনি বললে বের হয়ে যাবো। তাকে বলতে দিন। এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে ওই আইনজীবী মুক্তাদিরকে মারতে উদ্ধত হন। তাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন পাশে সাংবাদিক আসিফ মোহাম্মদ সিয়াম। এরপর আইনজীবীদের হামলায় সময় টিভির সাংবাদিক সিয়াম আহত হন। গত ২৯ আগষ্ট বিকালে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের গোপালপুর এলাকায় বাঙ্গালি নদী থেকে উত্তোলনকৃত বালু বিক্রির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দুইপক্ষের সংঘর্ষের সময় ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে একপক্ষের রোষানলে পড়ে দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হন এনটিভি অনলাইন প্রতিনিধি খাইরুল বাশার। এসময় জোরপূর্বক তার ফোন ছিনিয়ে নিয়ে ভিডিও ফুটেজ ডিলিট করা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় সাংবাদিক খাইরুল বাশার থানায় অভিযোগ করার সাহস পাননি। এতে গাইবান্ধা জেলা জুড়ে সাংবাদিকদের হামলা ও মারধরের ঘটনায় সাংবাদিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সম্প্রতি ধারাবাহিকভাবে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও মারধর কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের একটি অপপ্রয়াস। এসব ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও প্রকৃত অর্থে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই কোন বিচার হয় না; যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকের সুরক্ষা নিশ্চিতে সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। গত ৩০ অগাস্ট রাতে মতিঝিলের দক্ষিণ কমলাপুর উটের খামার সংলগ্ন রাস্তার পাশে ফুটপাতে দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা হয়। এদিন রাত ৮টার দিকে ডিবিসি নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার রেদওয়ানুল হক ও কালবেলার সাংবাদিক আব্দুজ্জাহের ভূইয়া আনাস মতিঝিলের দক্ষিণ কমলাপুর উটের খামার সংলগ্ন রাস্তার পাশে ফুটপাতে বসে ছিলেন। ?এ সময় আসামিরাসহ আরো ৮/১০ জন এসে উত্তেজিত ভাষায় তাদের ওই স্থান ত্যাগ করতে বলে। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর আসামিরা তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পরে তাদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ শুরু করে এবং কিল ঘুষি ও লাথি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলাফোলা জখম করে। ??একপর্যায়ে আসামিরা হত্যার উদ্দেশ্যে শক্ত বস্তু দিয়ে মাথায় গুরুতরভাবে আঘাত করতে থাকে, যার ফলে ভুক্তভোগী দুই সাংবাদিকের মাথায় নীলাফোলা জখম হয়। মারধরে আহত দুই সাংবাদিক মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এ ঘটনায় ডিবিসি নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার রেদওয়ানুল হক বাদী হয়ে পরদিন মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করেন। ২৯ আগস্ট কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে গুরুতর আহত হন বাংলাদেশ প্রতিদিনের নাইমুর রহমান দুর্জয়। ২৭ আগস্ট দুপুরে ক্ষুদ জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির দিকে মোটরসাইকেলে আসার সময় হামলার শিকার হন দৈনিক নিউ নেশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক শিমুল পারভেজ ও নোমান মোশাররফ। তাদের রক্ষা করতে গিয়ে বাংলাভিশনের সাংবাদিক কেফায়েত শাকিল ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর শরীফ পারভেজও আহত হন। আহত শিমুল পারভেজ জানান, মাইক্রোবাস চালক তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এরপর গাড়ির যাত্রীরা নেমেও আরেক দফা মারে। কিন্তু সেই দৃশ্য পুলিশ কাছ থেকে দেখলেও সাহায্যে এগিয়ে না এসে উল্টো তাদের মারধর করে। পরিচয় দেওয়ার পরও তারা দফায় দফায় পুলিশ বক্সে নিয়ে মেরেছে। যা অন্যায় ও ইচ্ছাকৃত বলে মনে করেন। আহত কেফায়েত শাকিল বলেন, আমাদের পুলিশ মারছিল। আমি তাদের বাঁচাতে গিয়ে আমাকেও বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। আহত ইউটিউবার শরীফ আলম বলেন, পুলিশ যখন তাদের হাসপাতালে না নিয়ে মারধর করছিল, এ দৃশ্য ধারণ করায় আমাকেও মারধর করেছে। গাজীপুরের চৌরাস্তায় ৭ আগস্ট রাত ৮টার দিকে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। শত শত মানুষের সামনে ঘটে যাওয়া এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তুহিন হত্যার ঘটনায় আলোচনার ঝড় উঠলেও, গত দুই দিনে সারা দেশে অন্তত পাঁচজন ব্যক্তি একইভাবে প্রকাশ্যে ছুরি, চাপাতি ও দেশীয় অস্ত্রের হামলায় নিহত হন। দেশজুড়ে এভাবে একের পর এক পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় বা পেশাগত কাজের বিপরীতে শত্রুতা তৈরি হওয়ায় হত্যা, নির্যাতন ও মবের শিকার হচ্ছেন সাংবাদিকরা। এছাড়াও আছে, মামলায় নাম ঢুকিয়ে দেওয়ার অভিযোগ। ঘটনার ধারাবাহিকতায় বারবার যে প্রশ্ন সামনে আসছে তাহলো– সাংবাদিকের ওপর এত রাগ বা ক্ষোভের কারণ কী। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের প্রতি যে প্রত্যাশা ছিল, সেটা পূরণ করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক উদ্বেগের পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) মানবাধিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগস্ট মাসে দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ৩৩টি ঘটনায় ৯৬ সাংবাদিক নানাভাবে হামলা, আইনি হয়রানি, হুমকি, হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আগস্টে আক্রান্ত সাংবাদিকদের সংখ্যা জুলাই মাসের তুলনায় প্রায় তিন গুণ। আর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে চলতি বছর বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ১৩ জন সাংবাদিক গ্রেফতার আছেন। তারা যদি অপরাধ করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তাদের বিচার হওয়া উচিত। কিন্তু আজ সাত-আট মাস ধরে কারাগারে, তারা জামিন পাচ্ছেন না। তাদের আইনি কোনও প্রক্রিয়া চলছে না। বিচার হচ্ছে না। তাহলে এটা কি চলতে থাকবে? মামলার প্রবণতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন মামলার যে প্রবণতা, তাতে ১০০, ৫০ বা ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা; তার মধ্যে একজন সাংবাদিকের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হলো। কেন পেশাগত কাজ করতে গিয়ে সাংবাদিকরা এ ধরনের হয়রানি ও রাগের শিকার হচ্ছেন, জানতে চাইলে মানবাধিকারকর্মী ও গবেষক রেজাউর রহমান লেনিন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার আগে শেখ হাসিনার আমলে সাংবাদিকরা ব্যাপক মামলা-হামলার শিকার হন। তথ্য বলছে, শেখ হাসিনার শেষ সময়ে ৫০০ মতো সাংবাদিক হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন।
এদিকে, চলতি বছরে তথ্য বলছে, অন্তত ১২৬ সাংবাদিক হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন এবং এর মধ্যে এক নারী সাংবাদিক সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলেও পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট এসেছে। সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ, সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে মারধোরের ঘটনা, দুর্নীতি উন্মোচন, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে সাংবাদিক নিগ্রহের ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। সরকারের প্রতি যে প্রত্যাশা ছিল, সেটা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক উদ্বেগের পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে করণীয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটি করা দরকার সেটি হলো-সাংবাদিকদের সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে কাজ করা। যে ধরনের মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় সাংবাদিকরা আটক রয়েছেন, আইনি পরিসরে যাদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, সেটি অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার। সেটি যদি করতে না পারা যায়, তাহলে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে যে অপরাধ শেখ হাসিনার আমলে হয়েছে, তারই ধারাবাহিকতা ইউনূস সরকারও অব্যাহত রাখছেন ধরে নিতে হবে। অচিরেই মামলা-হামলা বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া দরকার। সাংবাদিক বা গণমাধ্যমে যেন কোনোভাবেই মব সৃষ্টির শিকার না হন, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। যত দ্রুত এটি বন্ধ হবে, বাংলাদেশের মানবাধিকার ও আইনি শাসন প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রের যে ভীত তা আরও মজবুত হবে। কেন সাংবাদিকদের ওপর এত ক্ষোভ প্রশ্নে মানবাধিকারকর্মী নূর খান বলেন, সাংবাদিকতা সমাজের প্রতিচ্ছবি। সমাজকে বুঝতে হলে সাংবাতিকতাকে, সংবাদকে বুঝতে হবে। বর্তমান অস্থিরতায় এমনটা হওয়ারই কথা। মবসন্ত্রাস, আইনশৃঙ্খলার অবনতি সব মিলিয়ে অচলায়তনের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত মানুষ নিজেদের গন্ডিতে হিরো। আমরা নিজেদের জায়গায় সহনশীলতার পরিচয় দিই না। সেদিকটাও বিবেচনায় নিতে হবে। এটা কেবল সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে নয়, সব পেশাজীবীর ক্ষেত্রেই।
সাংবাদিকদের ওপর হামলায় বিএফইউজে-ডিইউজে’র তীব্র নিন্দা: রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, খুলনায় একজন সাংবাদিক হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। সাংবাদিকদের নির্যাতনের প্রতিবাদে ১ সেপ্টেম্বর এক যুক্ত বিবৃতি দেন বিএফইউজে’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী এবং ডিইউজে সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম। নেতৃদ্বয় বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর একের পর এক হামলা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাহাত মিনহাজ বলেন, সাংবাদিকতা সরল-সোজা, ঝুঁকিহীন, নির্ঝঞ্ঝাট কোনো পেশা নয়। একজন সংবাদকর্মীর কাজ সমাজের অপরাধ, অসঙ্গতি, অনাচার, মিথ্যাচার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তুলে ধরে ভিকটিম বা ক্ষতির শিকার নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করা। এই কাজ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত একজন সংবাদকর্মীকে ক্ষমতাশালী ব্যক্তির (প্রভাবশালী ব্যক্তি) বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়। যে কারণে সংঘাত কবলিত এলাকায় সাংবাদিকরা অনেক ক্ষেত্রেই শিকার হচ্ছেন সুপরিকল্পিত ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যাকাণ্ডের। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের কর্তব্য প্রত্যেক গণমাধ্যমকর্মীকে নিরাপত্তা দেয়া। একইভাবে গণমাধ্যমকর্মীদেরও নিজেদের নিরাপত্তা নিজেদেরই নিশ্চিত করে পেশাগত কাজ করতে হবে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স