* গোয়েন্দাপ্রধান, বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, ডিআইজি, ডিসি-এসপিকে চিঠি
* ঝুঁকিপূর্ণ সব ভোটকেন্দ্রে থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরা, মব সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা
* তিনটি বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনে যেসব প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার দায়িত্বে ছিলেন, তাদের বাদ
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন উল্লেখ করে তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ করতে যা যা করার দরকার সরকার তার সব পদক্ষেপ নিচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাতটি রাজনৈতিক দল ও একটি সংগঠনের প্রতিনিধিদের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। তবে বিগত তিনটি বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনে যেসব প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার দায়িত্বে ছিলেন, তাদের বাদ দিয়ে এবার নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে। নির্বাচনে জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবং ওসিদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না। এমনকি বিশৃঙ্খলা (মব) সৃষ্টিকারী ব্যক্তি বা গ্রুপকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে-এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই হবে। যারা সরকারকে নির্বাচন করতে দিতে চায় না, তারা ষড়যন্ত্র করবে। তার কিছু কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, সামনে আরও দেখা যাবে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ কর?তে যা যা করার সরকার তার সব পদক্ষেপ নিচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠু হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রফেসর ড. ইউনূস।
বৈঠকে অংশ নেয়া দলগুলো ও সংগঠনটি হচ্ছে; এবি পার্টি, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, গণ-অধিকার পরিষদ, এলডিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় গণফ্রন্ট ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
এর আগে গত রোববার বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আলাদা আলাদা বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা দলগুলোকে আশ্বস্ত করে বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই ধারাবাহিক সংলাপকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় উল্লিখিত বিষয়সহ ৯টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে এসব সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন করতে মন্ত্রিপরিষদসচিব, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবসহ ২৯ সচিব, আইজিপি, সব গোয়েন্দাপ্রধান, বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, ডিআইজি (রেঞ্জ), ডিসি-এসপিসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
উক্ত বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে গণপিটুনির ঘটনা বেড়েছে, যার ফলে সামাজিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা বন্ধ করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মামলার আসামিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার পদক্ষেপ নিতে হবে। ভুল তথ্য, প্ররোচনামূলক বার্তা ও প্রোপাগান্ডা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ব্যাংক ডিফল্টের মাধ্যমে দুর্নীতিতে জড়িত ও যোগসাজশকারীদের চিহ্নিত করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের শান্তি ও সুষ্ঠু ভোটপ্রক্রিয়া নিশ্চিতে যে কোনোভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ব্যক্তি বা গ্রুপকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে এবং কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের শান্তি ও সুষ্ঠু ভোটপ্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য ৯টি নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। সেগুলো হলো; যেকোনোভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ব্যক্তি বা গ্রুপকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বয়ে একটি সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করবে নির্বাচন কমিশন। জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠান নিশ্চিত করতে মাঠ পর্যায়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং ওসিদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন নিশ্চিত করতে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করবে পুলিশ অধিদফতর, বিজিবি, আনসার ও কোস্ট গার্ডসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। একই সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীতে সদস্য নিয়োগ ও পাসিংআউট কার্যক্রমও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করবে তারা। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী দুটি পৃথক প্রস্তুতিমূলক মহড়া পরিচালনা করবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঝুঁকিপূর্ণ সব ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা গ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন। গত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিদের আসন্ন নির্বাচনে যথাসম্ভব দায়িত্ব দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে, সে জন্য নজরদারি জোরদার করতে হবে এবং নির্বাচনের আগে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক প্রচারণা থেকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচন-পূর্ব এবং নির্বাচনকালে সব সংস্থাকে একত্রে নিরপেক্ষভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ৭ রাজনৈতিক দল ও ১ সংগঠনের বৈঠক
শান্তিপূর্ণ ভোটের প্রস্তুতি
- আপলোড সময় : ০৩-০৯-২০২৫ ০৬:৩৯:০২ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৩-০৯-২০২৫ ০৬:৩৯:০২ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ