ঢাকা , বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
হেরা ফেরি ৩-তে ফিরছেন টাবু বাশার-তিশার নতুন রোমান্সের গল্প ‘বসন্ত বৌরি’ ওজন কমাতে সার্জারি, প্রাণ গেল মেক্সিকান ইনফ্লুয়েন্সারের ‘স্কুইড গেম’ অভিনেত্রী লি জু-শিল আর নেই বিচ্ছেদের পর ফের নতুন প্রেম খুঁজছেন মালাইকা অরোরা? দেশের প্রেক্ষাগৃহে ‘বলী’ আসছে ৭ ফেব্রুয়ারি হামলার পর প্রথমবার জনসমক্ষে সাইফ আলী খান অবশেষে প্রকাশ্যে এলো চিত্রনায়িকা পপির স্বামী-সন্তানসহ ছবি সমালোচনা সহ্য না হলে উপদেষ্টা পদ ছেড়ে রাজনৈতিক দল করেন-রিজভী লালমনিরহাটে বিয়ে করে ফেরার পথে বরের মৃত্যু পুঁজি রক্ষার আন্দোলনে বিনিয়োগকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কমাতে, একীভূতকরণে নজর দেয়ার সুপারিশ বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে আরও কমার আশঙ্কা বান্দরবান সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে কিশোরের পা বিচ্ছিন্ন ট্রেনের ধাক্কায় ট্রাকের চালক সহকারী নিহত জগন্নাথ হলে সরস্বতী পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে দুই উপদেষ্টা রমজান মাসে গ্যাস বিদ্যুতের বড় সংকটের শঙ্কা বাংলাদেশকে সহায়তা করছে ব্রিটিশ সংস্থা তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরতে হবে-নাহিদ ইসলাম লোকজনকে অতিষ্ঠ করে ফেলছে তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা-স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
# রেমালের তাণ্ডবে ২১ জনের মৃত্যু # ঘূর্ণিঝড় রেমালে ঢাকা দক্ষিণে ভেঙে পড়েছে ৯৪টি গাছ # লণ্ডভণ্ড সুন্দরবন, ৩০টি মৃত হরিণ উদ্ধার # রেমালের তাণ্ডবে পটুয়াখালীতে ক্ষতি ২৯ কোটি টাকা

ঘূর্ণিঝড় রেমালে তছনছ উপকূল

  • আপলোড সময় : ২৮-০৫-২০২৪ ১০:২১:৫৬ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৯-০৫-২০২৪ ১২:৪৯:০১ পূর্বাহ্ন
ঘূর্ণিঝড় রেমালে তছনছ উপকূল প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের উপকূলীয় অঞ্চল। বিধ্বস্ত হয়েছে লাখো ঘরবাড়ি, সড়ক, গাছপালা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট। ঘূর্ণিঝড় চলে গেলেও রেখে গেছে ক্ষতচিহ্ন। পটুয়াখালীর ভান্ডারিয়া থেকে মঙ্গলবার তোলা ছবি
ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে তছনছ হয়েছে উপকূলীয় অঞ্চল। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ১০ জেলায় ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। রেমালের প্রভাবে উপকূলের এলাকায় জলোচ্ছ্বাস দেখা দেয়ায় বহু জায়গায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে। ঝড়ে ভেঙে পড়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি, দেয়াল ও গাছপালা। ভারী বৃষ্টিতে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শহর প্লাবিত হয়েছে। সন্দরবনে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সুন্দরবন থেকে ৩০টি মৃত হরিণ উদ্ধার করেছে বনবিভাগ। জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাস দেখা দেয়। বহু জায়গায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে। ঝড়ে ভেঙে পড়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি, দেয়াল ও গাছপালা। রাজধানীসহ ১০ জেলায় অন্তত ২১ জন মৃত্যুর মধ্যে ঢাকায় ৪, ভোলায় ৩, বরিশালে ৩, পটুয়াখালীতে ৩, চট্টগ্রামে ২, খুলনা, সাতক্ষীরা,  লালমনিরহাট, বরগুনা, কুষ্টিয়া ও কুমিল্লায় একজন করে।
জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে দেশের অন্যান্য জেলার মতো রাজধানী ঢাকাতে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালে প্রভাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় ৯৪টি গাছ ভেঙে পড়েছে। ডিএসসিসির গঠিত ৯১টি দলের পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২ হাজার ৫০০ জন পরিচ্ছন্নকর্মী নিরবচ্ছিন্নভাবে জলাবদ্ধতা ও জলজট নিরসনে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সংস্থাটির জনসংযোগ বিভাগ এসব তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটি জানায়, রেমালের মধ্যে ডিএসসিসির স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষে মোট (বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত) ১২০টি ফোন কল এসেছে। এরমধ্যে অতিবৃষ্টিজনিত জলজট সংক্রান্ত ফোন কলের সংখ্যা ৭৮টি। সেসব কলের প্রেক্ষিতে সেসব স্থানে করপোরেশনের লোকবল কাজ করছে। এছাড়াও ৪২টি ফোন কল ছিল ঝড়ে গাছ পড়ে যাওয়া সংক্রান্ত। সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় ৯৪টি বড় গাছ পড়ে গিয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশ গাছ কেটে সরানো হয়েছে। কর্তনকৃত বাকি কিছু গাছ সরানোর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পড়ে যাওয়া ১টি গাছ অপসারণ করার কার্যক্রম চলমান। এছাড়া ৬টি ‘সড়কবাতি পোল’ পড়ে গিয়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রাজধানীতে ভারী বৃষ্টিপাতের মধ্যে পৃথক তিন স্থানে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- খিলগাঁও রিয়াজবাগ এলাকার রিকশার গ্যারেজে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া রাকিব (২৫), খিলগাঁও সিপাহীবাগে রাস্তায় জমে থাকা পানির মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া মরিয়ম বেগম (৪৫), যাত্রাবাড়ীতে টিনের প্রাচীর স্পর্শ করে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া লিজা আক্তার (১৬) ও অন্যজন বাড্ডার বাসিন্দা। তার নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গত সোমবার তাদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। ঢামেক হাসপাতালের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া এসব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সবার লাশ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট থানায় জানানো হয়েছে। সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সুন্দরবনের। ঝড়ের কবলে মারা পড়েছে হরিণসহ অন্যান্য প্রাণী। গত সোমবার বিকেলে বনের কটকা ও দুবলা এলাকা থেকে দুটি মৃত হরিণসহ ৩০টি আহত হরিণ ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করেন বনরক্ষীরা। এছাড়া রেমালের তাণ্ডবে বনের অভ্যন্তরে ২৫টি টহল ফাঁড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লবণ পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে অন্তত ৮০টি মিষ্টি পানির পুকুর।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দে জানান, গত রোববার বিকেল থেকে একটানা ২০ ঘণ্টা রিমালের তাণ্ডব ও জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের প্রাণপ্রকৃতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি বনবিভাগের বিভিন্ন বন অফিস, টহল বোট, টিনের চালা, সোলার প্যানেল ও অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে। এ সময় জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়ে কটকা অভয়ারণ্যের অফিস ঘাটের জেটি ও পুকুর বঙ্গোপসাগর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দুবলা, কটকা, কচিখালী, বগিসহ বিভিন্ন বন অফিসসহ ২৫টি টহল ফাঁড়ির টিনের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেছে ঘূর্ণিঝড়। সুন্দরবনের অভ্যন্তরে মিঠাপানির পুকুরগুলোও জলোচ্ছ্বাসে লোনাপানিতে তলিয়ে গেছে। সুন্দরবনের ৮০টি মিঠাপানির উৎস পুকুর ৮ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে লোনাপানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বনকর্মীদের পাশাপাশি বাঘ, হরিণসহ বন্যপ্রাণীরাও সুপেয় পানির সংকটে পড়েছে। সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীর অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়ে মারা যাওয়ার খবরও মিলেছে। তবে হরিণের পাশাপাশি আরও বণ্যপ্রাণী মারা যেতে পারে উল্লেখ করেন বন কর্মকর্তা মিহির কুমার। সেইসব মৃত প্রাণীর খোঁজে বনরক্ষীরা তৎপর বলেও জানান তিনি। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পূর্ব সুন্দরবনের একমাত্র করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের বিভিন্ন অবকাঠামো। সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে এখানকার পর্যটক চলাচলের কাঠেরপুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে তছনছ হয়েছে অসংখ্য গাছপালা। তবে পুরো সুন্দরবনের গাছপালাসহ কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনই বলা সম্ভব নয়।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্টি জলোচ্ছ্বাসে খুলনার তিন হাজার ৬০০ পুকুর ও ৯ হাজার ১১৫টি ঘের তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ২৪৫ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার মৎস্য সম্পদ। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল জানান, রেমালের আঘাতে খুলনার ৯ উপজেলার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া ও রূপসা উপজেলার ৩৮ ইউনিয়নের মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের তাণ্ডবে জেলায় ওই ছয়টি উপজেলার ৩৫৫ দশমিক ৩০ হেক্টর জমির তিন হাজার ৬০০টি পুকুর এবং ১০ হাজার ২২৩ দশমিক ৭৫ হেক্টর জমির ৯ হাজার ১১৫টি ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেইসঙ্গে ১ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমির ১ হাজার ৩৫৬টি কাঁকড়া/কুচিয়া খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি আরও বলেন, এবারের ঝড়ে মোট ক্ষতি হয়েছে ২৪৫ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার মৎস্য সম্পদ। যার মধ্যে ৬৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা মূল্যের ৩ হাজার ৭৮ মেট্রিকটন মাছ, ১১৪ কোটি ৬৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের দুই হাজার ৫৬৪ মেট্রিকটন চিংড়ি, ২০ কোটি ৫৭ হাজার টাকা মূল্যের ৬৩৬ মেট্রিকটন পোনা, ১৮ কোটি ৬৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের ১০২ দশমিক ২০ মেট্রিকটন কাঁকড়া/কুচিয়া, ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা মূল্যের ২৭০ মেট্রিকটন পিএল, ২০ লাখ টাকা মূল্যের ২০টি নৌকা/ট্রলার/জলযান ও ১৬ কোটি ১১ লাখ টাকার অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে পটুয়াখালীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখনো পানিবন্দি হয়ে আছে হাজার কয়েক পরিবার। বাতাসের চাপ না থাকলেও উপকূলের আকাশ ঘনকালো মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। অনেক স্থানে এখনো হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক তথ্যমতে, জেলায় ৩ হাজার ৫শ’ কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্থ হয়েছে, হাজার হাজার গাছপালা উপড়ে পড়েছে। ৯ হাজার ১শ’ ৫টি পুকুর, ৭শ’ ৬৫টি মাছে ঘের এবং ১শ’ ২০টি কাঁকড়া ঘের প্লাবিত হয়েছে। এতে মৎস্য চাষীদের ১৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান ২৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বলে জানিয়েছে জেলা ত্রান কর্মকর্তা। এছাড়াও পটুয়াখালীতে ৩ কিলোমিটার এবং কলাপাড়া উপজেলায় ৪ কিলোমিটার বেরীবাঁধ আংশিক বিধ্বস্ত হয়ে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এদিকে অনেক স্থানের বিদ্যুতের খুটি ভেঙে পড়ে আছে। গত দুইদিন ধরে বিদ্যুৎহীন রয়েছে অনেক এলাকা। জেলার বিভিন্নস্থানে পড়ে থাকা গাছ অপসারনে স্থানীয়দের পাশাপাশি কাজ শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস, থানা পুলিশ ও নৌপুলিশ।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার হেলিকপ্টারে ঘূর্নিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছেন পূর্নবাসন ও ত্রান প্রতিমন্ত্রী মহিব্বুর রহমান। ঘূর্নিঝড় উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে উপকূলীয় এলাকায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এক লাখ ৫০ হাজার ৪৭৫টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। রেমালের তাণ্ডবে ১৯টি জেলায় ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন মানুষের ঘর-বাড়ি, পুকুরের মাছ, ধান-চাল, গবাধি পশুসহ বিভিন্ন মালামাল হারিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় বাংলাদেশের অর্ধেকের বেশি মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার অচল হয়ে রয়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্কের পাশাপাশি বিটিসিএল এবং আইএসপির গ্রাহকরা মোবাইল নেটওয়ার্কের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন।
বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও ত্রাণমন্ত্রালয়ের কর্মকর্তারা। উপকূলীয় অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রয়েছে।  র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক এএসপি আ ন ম ইমরান খান জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে খুলনা ও বরিশালের উপকূলীয় অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা প্রদান করছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় রেমালে খুলনা ও বরিশালসহ তৎসংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। অনেকেই নিজের শেষ সম্বল ও মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে ফেলে। কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুরসহ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের অনেকেই কর্মহীন হয়ে অসহায় ও মানবেতর জীবন-যাপন করছে। এছাড়াও খুলনা ও বরিশালসহ তৎসংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ে।  র‌্যাব ফোর্সেস ঘূর্ণিঝড় রেমালের পূর্ব থেকেই খুলনা ও বরিশালসহ তৎসংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চলের স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে এই অঞ্চলের সর্বসাধারণকে সর্তক করা এবং ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে দ্রুত সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে। পাশাপাশি র‌্যাবের পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে নিত্যপ্রয়োজনীয় শুকনা রসদ যেমন চাল, ডাল, আটাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ এবং প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়। এছাড়াও র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে।
পূর্বাভাসে সংস্থাটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সজল কুমার রায় বলেন, দেশের অভ্যন্তরে ও উজানে ভারতের রাজ্যগুলোতে বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ায় ছয় জেলায় স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা নদ-নদীগুলোর পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে পদ্মা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। আগামী দুই দিনে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে, অপরদিকে গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী দুইদিনে এই অঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের অভ্যন্তরে এবং উজানের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ভারি এবং কোথাও কোথাও অতিভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আছে। ফলে, দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কোথাও কোথাও বিপদসীমা অতিক্রম করে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। আজ বুধবারের মধ্যে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলের ফেনী, বান্দরবান, চট্টগ্রাম জেলার কতিপয় নিম্নাঞ্চল স্বল্পমেয়াদি আকস্মিক বন্যার ঝুঁকিতে থাকতে পারে। পাউবো জানিয়েছে, তাদের পর্যবেক্ষণাধীন ১১০টি স্টেশনের মধ্যে পানির সমতল বেড়েছে ৮৯টিতে, কমেছে ১৮টিতে। দুইটি স্টেশনের পানির সমতল অপরিবর্তিত আছে। তথ্য পাওয়া যায়নি একটি স্টেশনের আর বিপদসীমার ওপর দিয়েছে প্রবাহিত হচ্ছে একটি নদীর পানি।

 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স