রাষ্ট্রীয় মদদে বাংলার অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির ওপর চলছে পরিকল্পিত মৌলবাদী আক্রমণ বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান। গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানির সেগুনবাগিচায় ভ্যানগার্ড মিলনায়তনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্মরণে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিখিল দাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সহসভাপতি শাহজাহান কবির, কবি কামরুজ্জামান ভূঁইয়া, দপ্তর সম্পাদক জসিম উদ্দিন ও প্রচার সম্পাদক প্রদীপ সরকার। খালেকুজ্জামান বলেন, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বিনির্মাণে কবিগুরু রবিঠাকুর ও কবি নজরুলের অনন্য ভূমিকা রয়েছে। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, নাটক গানসহ প্রত্যেকটা অঙ্গনে ছিলো তাদের পদচারণা। এ দু’জন মনিষীর জন্মকাল পরাধীন ভারতবর্ষে। ফলে কবিগুরু রবিঠাকুর জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে যেমন তিনি ‘নাইট’ উপাধি ত্যাগ করেছিলেন, আবার বৃটিশ ষড়যন্ত্রে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছিলেন। কবি নজরুল বৃটিশ অত্যাচারী শাসনের বিরুদ্ধে আমরণ অনশন করেছিলেন। বৃটিশ শাসনের বিরুদ্ধে কবি নজরুল ধূমকেতু পত্রিকায় ক্রমাগত লিখে যান। ১৯২২ সালে বৃটিশ সরকার তাঁর ভাঙ্গার গান নিষিদ্ধ করেন। বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে দুই মনিষী লড়াই করেছিলেন তাদের লেখনি ও রাজপথে নামার মধ্য দিয়ে। তিনি আরও বলেন, আজও আমরা সাম্রাজ্যবাদী শোষণের হাত থেকে রক্ষা পাইনি। বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার যেমন ভারতের স্বার্থে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, রাশিয়ার স্বার্থে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, ঠিক তেমন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও ডিপি ওয়ার্ল্ডকে চট্টগ্রামের নিউমরিং বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া, স্টারলিং এর সাথে চুক্তি, মানবিক করিডর দেওয়াসহ নানামুখী দেশবিরোধী অপতৎপরতা চালাচ্ছে। কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, বাংলা সাহিত্যের এ দুই মনিষী অসাম্প্রদায়িকতার জয়গান গেয়েছিলেন। অথচ আজকে আমরা দেখি, একটি সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধ গোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় মদদে মাজারে হামলা, ভিন্ন ধর্ম ও মতাবলম্বীদের উপর হামলা, নারীদের উপর আক্রমণ ও নারীদের খেলা বন্ধ, বাউলদের উপর হামলা, সাংস্কৃতিক আয়োজনে বাঁধাসহ মব সন্ত্রাসের মতো ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। তিনি বলেন, দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপ না থাকায় এরা দ্বিগুণ উৎসাহে তাদের অপরাধ কর্মকান্ড করেই যাচ্ছে। এই অপশক্তি ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে ’২৪ এর গণ অভ্যুত্থান দিয়ে ঢেকে দিতে চায়। মুক্তিযুদ্ধ হলো জনযুদ্ধ, এটি আমাদের ভিত্তি। মুক্তিযুদ্ধের সাম্যের বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত না হওয়ায় শোষনমুক্ত সমাজের আকাঙ্খা নিয়ে ’২৪ এর গণ অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে। সুতরাং ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ও ’২৪ এর গণ অভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে। আলোচনা সভায় অন্যান্য নেতারা বলেন, কবিগুরু রবি ঠাকুরকে মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবে উপস্থাপিত করার ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছেন বলে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন। আবার কবি নজরুলকে মুসলিম জাগরণের কবি হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন। বাস্তবে কবি রবি ঠাকুর ও কবি নজরুল একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বিকাশে অসাধারণ অবদান রেখে গিয়েছেন। তাদের কালজয়ী সৃষ্টি কর্মের ওপর ভিত্তি করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আলোচনা সভার শুরুতে ও শেষে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মীরা বিভিন্ন গণসংগীত পরিবেশন করেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির ওপর চলছে মৌলবাদী আক্রমণ-খালেকুজ্জামান
- আপলোড সময় : ২৩-০৮-২০২৫ ১২:২০:৫৭ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৩-০৮-২০২৫ ১২:২০:৫৭ পূর্বাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ