এতদিন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক মাহবুব আনামকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছিলো ঢাকার ক্লাবগুলোর নির্বাচনী মোর্চা। যার মূল লক্ষ্য ছিল বিসিবির সভাপতি পদে নির্বাচন। কিন্তু আচমকাই মাহবুব আনাম জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি সভাপতি পদে নির্বাচন করবেন না। যেহেতু সভাপতি পদে নির্বাচনই করবেন না, তাই স্বাভাবিকভাবেই ঢাকার ক্লাবগুলোর নির্বাচনী মোর্চার বাইরে চলে গেছেন মাহবুব আনাম। এতে কিছু প্রশ্নের উদ্রেগও ঘটেছে। এখন ঢাকার ক্লাবগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেবেন কে? প্রিমিয়ার, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগের ৭২ ক্লাবের কাউন্সিলরদের নেতা হিসেবে বোর্ড নির্বাচনের নেপথ্য কারিগর হবেন কে? যে প্রশ্নটি আরও বেশি উঠছে, তা হলো- বিসিবির সম্ভাব্য সভাপতিই বা হবেন কে? এর উত্তরে বিসিবিপ্রধান পদে শুরু থেকে বেশ কটি নামই উঠে এসেছে। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সব সময়ের অন্যতম দক্ষ, মেধাবী ও করিৎকর্মা সংগঠক হিসেবে সমাদৃত সৈয়দ আশরাফুল হকের নাম উচ্চারিত হয়েছে। বিসিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির অন্যতম রূপকার এবং এসিসির সাবেক প্রধান নির্বাহীর যোগ্যতা ও দক্ষতা প্রমাণিত। তাই তার সভাপতি হওয়ার খবর বেশ সাড়াও জাগিয়েছিল। কিন্তু সময়ের প্রবাহতায় তা নিয়ে আর তেমন হৈচৈ নেই। আশরাফুল হক নিজে কিংবা তার পক্ষেও কেউ সেভাবে প্রচারণায় নামেননি। এরপর দেশের অন্যতম শীর্ষ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী এবং মোহামেডান তথা বিওএর সাবেক মহাসচিব কুতুবউদ্দীন আহমেদের কথা শোনা গেছে। তাকে ঘিরেও বোর্ড গঠনের গুঞ্জন ছিল। তবে সেটাও বাস্তব রূপ পায়নি। পাশাপাশি বিসিবির সভাপতি পদে আলী আসগর লবির নামও উচ্চারিত হয়েছে। সর্বশেষ বিএনপি শাসন আমলে (২০০১-২০০৬) বোর্ডপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। কিন্তু সময়ের প্রবাহতায় সেগুলোও ঢাকা পড়ে গেছে। এরপর থেকে ঘুরে ফিরে কয়েকটি নামই উচ্চারিত হয়েছে। প্রথমে ফারুক আহমেদ, পাশাপাশি তামিম ইকবাল, পরে মাহবুব আনাম আর সবশেষ আমিনুল ইসলাম বুলবুল। এর মধ্যে মাহবুব আনামও দৃশ্যপটের বাইরে চলে গেছেন। এখন নতুন কোনো নাম উঠে আসলে ভিন্ন কথা। হঠাৎ নতুন কোনো চরিত্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে না আসলে এখন চোখে পড়ছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। বর্তমানে জাতীয় দলের এই সাবেক অধিনায়কই পরবর্তী সভাপতি হওয়ার দৌড়ে বাকিদের চেয়ে এগিয়ে। সঙ্গে তামিম ইকবালও থাকতে পারেন। যদিও জাতীয় দলের সাবেক দুই অধিনায়কের কেউই এখন পর্যন্ত মুখ ফুটে বিসিবির সভাপতি পদে নির্বাচনের ঘোষণা দেননি। তবে সব হিসাব-নিকেশ আর সমীকরণে ঘুরে ফিরে আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও তামিম ইকবালের নামই উঠে আসছে। ভেতরের খবর, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রথম পছন্দ আমিনুল ইসলাম বুলবুল। কারণ, ফারুক আহমেদের বদলে বুলবুলকেই বোর্ড সভাপতি হিসেবে বেছে নিয়েছে বর্তমান সরকার। কাজেই এ সরকারের আমলে অর্থাৎ আগামী অক্টোবরে বিসিবি নির্বাচন হলে বুলবুলই হবেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার মনোনীত বা পছন্দের প্রার্থী। দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, বুলবুলকে সভাপতি পদে নির্বাচন করার কথা বলাও হয়েছে। তবে ঘনিষ্ট সূত্রের খবর, বুলবুল ভাবছেন আগামীতে বোর্ডে থাকবেন কিনা? মনে মনে বুলবুলের চিন্তা অনেকট এমন- বিসিবি নির্বাচন তো অক্টোবরে। এর কয়েক মাস পর জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনে বিজয়ী দল যদি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কোটায় আবার সভাপতি বদলের চিন্তা করে, তখন কী হবে? তখন যদি আবার নির্বাচিত সরকার তাকে (বুলবুলকে) সভাপতি পদে না রেখে নিজেদের পছন্দর কাউকে বেছে নিয়ে নতুন কাউকে সভাপতি নির্বাচিত করে? জানা গেছে, ভেতরে এমন চিন্তা মাথায় বাসা বাঁধলেও শেষ পর্যন্ত হয়তো বিসিবিপ্রধান হিসেবে বুলবুলকেই বেছে নিতে চাচ্ছে এনএসসি তথা সরকার। এদিকে মাহবুব আনাম দৃশ্যপটের বাইরে চলে যাওয়ায় তামিম ইকবালের আবারও পর্দায় আসার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। হার্ট অ্যাটাক না হলে হয়তো এতদিন তামিম বোর্ড প্রধান হওয়ার অন্যতম দাবিদার থাকতেন। কারণ, এক সময় ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পছন্দের মানুষ ছিলেন চট্টগ্রামের খান পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের কনিষ্ঠ খান (তামিম)। হার্ট অ্যাটাকের আগে তামিমই ছিলেন বর্তমান ক্রীড়া উপদেষ্টার খুব কাছাকাছি। বিভিন্ন সময় ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ডে তামিমকে কাছে ডেকে নিতে দেখা গেছে আসিফকে। অসুস্থ হওয়ার কারণেই হোক কিংবা অন্য কোনো কারণে, মাঝের দিকে তামিম নিজেকে খানিক গুটিয়ে নিয়েছেন। শোনা যাচ্ছিলো, তামিম বোর্ড পরিচালক হতে চান। সে সম্ভাবনাও ছিল প্রচুর। ঢাকার ক্লাব কোটায় তামিমের পরিচালক নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাও আছে যথেষ্ট। কিন্তু এখন আবার শোনা যাচ্ছে, জাতীয় দলের এই সাবেক অধিনায়ক বোর্ড নির্বাচনে সভাপতি পদে দাঁড়াতে পারেন। মাঝে একটি খবর চাওর হয়েছিল, বসুন্ধরার সঙ্গে গাঁট বেঁধেই নাকি নির্বাচনী মোর্চা করতে যাচ্ছেন তামিম। কিন্তু সেটা নিছক গুজব বলে মন্তব্য খোদ তামিমের। এক আলাপে তামিম বলেন, আমি নির্বাচন করলে আমার মতোই আগাবো। কারো সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করবো না। বসুন্ধরার সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন করবো, এমন খবর ঠিক নয়। আমার স্থির বিশ্বাস ও আস্থা, আমি আমার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সামর্থ্য রাখি। আমি সেভাবেই সামনে আগাতে চাই। জানা গেছে, তামিমের সঙ্গেও ঢাকার ৭২ ক্লাবের একটা অংশ রয়েছে। পাশাপাশি জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থায়ও তামিমের সমর্থন আছে। তার নিজ বিভাগ ও জেলা চট্টগ্রাম সহ আরও একাধিক জেলা ও বিভাগের বেশ কজন তরুণ সংগঠক তামিমের সঙ্গে আছেন। কাজেই নির্বাচন করলে তামিমও বেশ বড় প্রার্থী হয়ে উঠবেন। যে কারো জন্য চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারবেন। যদিও তিনি নিজ মুখে নির্বাচন করার ঘোষণা দেননি এখনো। সংবাদের ওপরের অংশ পড়ে মনে হতে পারে ফারুক আহমেদ উপাখ্যান বুঝি শেষ। একদম শেষ বলা সম্ভবত ঠিক হবে না। ক্রিকেট পাড়ায় জোর গুঞ্জন, ফারুক আহমেদও প্রার্থী হতে পারেন। তারও নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে। যদি তাই হয়, তাহলে বিসিবির পরবর্তী সভাপতি পদে লড়াই হবে জাতীয় দলের তিন সাবেক অধিনায়কের মধ্যে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়?
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

বিসিবি সভাপতি হওয়ার দৌড়ে আছেন যারা
- আপলোড সময় : ২১-০৮-২০২৫ ০৯:৩৫:০২ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২১-০৮-২০২৫ ০৯:৩৫:০২ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ