ঢাকা , শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫ , ৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
দেশকে দুর্নীতি ও খুনিমুক্ত করতে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চাই- চরমোনাই পীর অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির ওপর চলছে মৌলবাদী আক্রমণ-খালেকুজ্জামান কফি ও কাজুবাদাম চাষে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সামনে সরকারি জায়গা দখল করে দোকান নির্মাণের পাঁয়তারা কেন্দুয়ায় সড়কের পাশ থেকে সিএনজি চালকের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার বাইকে পত্রিকার স্টিকার লাগিয়ে ইয়াবা পাচারে সাংবাদিক আটক সোনারগাঁওয়ে পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে ভাঙচুর লুটপাট দুই-গ্রুপের সংঘর্ষ আহত- ১০ কুমিল্লায় ৫২টি পাসপোর্টসহ এক মানবপাচারকারী গ্রেফতার শেরপুরের নকলায় এনসিপি’র ১৫ নেতার পদত্যাগ পোরশায় টাইফয়েড ক্যাম্পেইন উপলক্ষে শিক্ষক ওরিয়েন্টেশন কর্মশালা আদমদীঘিতে স্কুল ছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগ কলাপাড়ায় ৬ জেলে নিয়ে আবারও ট্রলার ডুবি ॥ নিখোঁজ ৯ জেলের সন্ধান মিলেনি ভূরুঙ্গামারীতে মিলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ছাই ৪০ লাখ টাকার সম্পদ আমতলীতে যুবদল নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে ও ভিত্তিহীন বানোয়াট সংবাদ প্রকাশে নিন্দা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন যুবদল নেতা পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পার্থক্য কেবল পরিচালন ব্যবস্থায়- ঢাবি উপাচার্য ডেঙ্গুতে একদিনে ৫ মৃত্যু তিনজনই ঢাকায় মানবপাচার চক্রের সদস্য গ্রেফতার জড়িত বিমানের কর্মচারীরাও গাজীপুরে শ্রমিকদের সংঘর্ষ, মহাসড়ক অবরোধ পদ্মায় ভরা মৌসুমেও কাক্সিক্ষত ইলিশ পাচ্ছেন না ফরিদপুরের জেলেরা স্ত্রীকে তালাক দিয়ে পুনরায় বিয়ে করায় সমাজচ্যুত
* প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক কোটি টাকা * দেড় শতাধিক বিনিয়োগকারী হয়েছেন সর্বস্বান্ত

রাজধানীতে ভুয়া ওয়েবসাইট বানিয়ে প্রতারণা

  • আপলোড সময় : ২১-০৮-২০২৫ ০৫:০৬:২৮ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২১-০৮-২০২৫ ০৫:০৬:২৮ অপরাহ্ন
রাজধানীতে ভুয়া ওয়েবসাইট বানিয়ে প্রতারণা
ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরা একটি সিন্ডিকেট বানিয়ে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এই চক্রের সদস্যরা ভুয়া ওয়েবসাইট বানিয়ে ব্যবসার প্রবণ দেখিয়ে ডেইলি মুনাফার লোপ দেখিয়ে ইতিমধ্যেই প্রায় ১৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এদের বিরুদ্ধে রাজধানীর ওয়ারী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা করেছেন ভুক্তভোগী হাবিবুর রহমান । ভুক্তভোগী মো. হাবিবুর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান তিনি কাপ্তান বাজারের একজন ব্যবসায়ী, মো. হাবিবুর রহমান কাপ্তানবাজারের একজন ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিনের পরিচিত রহিম নামক এক ব্যাক্তির কথায় মুগ্ধ হয়ে তিনি এক্সএক্সপ্রেস ডট আইও প্রকল্পে বিনিয়োগ করেন ১২ হাজার ডলার, টাকায় যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ ডলার। মনোয়ার হোসেন মনির একটি ট্র্যাভেল এজেন্সিতে চাকরি করেন। দীর্ঘ সময়ের পরিচিত ক্লয়েন্ট জনৈক নারী উদ্যোক্তার কথায় প্রলুব্ধ হয়ে বিনিয়োগ করেন ৮ হাজার ডলার বা প্রায় ৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। মো. আলমগীর পুরান ঢাকার একজন ব্যবসায়ী। স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতা কাপ্তানবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি কামাল পাশার অনুরোধে একই স্ক্যামে ১৫ হাজার ডলার বা প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। এভাবেই ীবীঢ়ৎবংং.রড় ডোমেইন নাম দিয়ে, অসংখ্য মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য সম্বলিত একটি ওয়েবসাইট বানিয়ে, সেই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ডলার ইনভেস্টমেন্টের পর ডেইলী প্রফিট রিটার্ন পাওয়ার লোভ দেখিয়ে মাত্র ৪ মাস পর লেনদেন বন্ধ করে বিনিয়োগকারীদের পুরো টাকা গায়েব করে দেয়া হয়েছে। কমবেশি ১৫০ ব্যাক্তি থেকে হাতিয়ে নেয়া টাকার পরিমান ৮ লাখ ডলারের ওপর, যা বাংলাদেশী মূদ্রায় ১০ কোটি টাকার ওপরে। আর টাকা ফেরত চেয়ে অনবরত হুমকি পাচ্ছেন বিনিয়োগকারী সাধারণ মানুষ। ইতিমধ্যে এই বিষয়ে রাজধানীর ওয়ারী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন একজন ভুক্তভোগী। আরও কয়েকজন ভুক্তভোগীও ঢাকার বিভিন্ন থানায় প্রতারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু এতকিছুর পরেও প্রতারকরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর অনবরত ভুক্তভোগীদের টেলিফোনে এবং বিভিন্ন ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী ব্যবহার করে হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছে। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে এবং বিভিন্নভাবে অনুসন্ধান করে পাওয়া তথ্যমতে, এই প্রতারকচক্রের মূলহোতা জনৈক অ্যাডভোকেট রহিম ওরফে রাহুল আহমেদ। আর তার প্রধান দুই সহযোগী হলেন কাপ্তানবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি কামাল পাশা এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ওয়ারী থানা কমিটির সদস্য ও যাত্রাবাড়ি থানায় বৈষ্যম্যবিরোধী হত্যা ও অস্ত্র মামলার এজাহারভুক্ত আসামী সোহাগ পাঠান ওরফে সোহেল পাঠান ওরফে এসএম পাঠান। কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগ অনুযায়ী এই চক্রের সঙ্গে একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার এক নারী উদ্যোক্তারও যোগসাজস রয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অ্যাডভোকেট রহিম বিভিন্ন রেস্তারো এবং হলরুমে সেমিনার আয়োজন করে সেখানে ীবীঢ়ৎবংং.রড় ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ডলার বিনিয়োগ করে কিভাবে ডেইলি প্রফিট রিটার্ন” বা প্রতিদিন লভ্যাংশ পাওয়ার মাধ্যমে অন্য যেকোনো ব্যবসার চেয়ে অধিক পরিমাণ লাভবান হওয়া যায়-সে বিষয়ে বক্তব্য রাখতেন। বিনিয়োগ করা ডলার কোন ধরনের ব্যবসায় বিনিয়োগ হচ্ছে যে এত বিপুল পরিমান লাভ পাওয়া যাচ্ছে-এমন প্রশ্নের জবাবে রাহুল আহমেদ ওরফে এডভোকেট রহিম বলতেন, ক্রিপ্টকারেন্সি বা বিটকয়েন ব্যবসায় এই ডলার বিনিয়োগ হয় বলেই এত পরিমান লাভ দেয়া সম্ভব হয়। অ্যাডভোকেট রহিম বক্তব্য শেষ করা পরপরই ৫/৭ জন ব্যাক্তি উঠে দাঁড়িয়ে জোরগলায় এখানে বিনিয়োগ করেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা বড় অংকের ডলার বিনিয়োগ করবেন বলে সেখানেই ওয়াদা করতেন। অ্যাডভোকেট রহিমের সুমিষ্ট ভাষণ আর অনেকগুলো মানুষের বিনিয়োগ করার ওয়াদা-এসব দেখেই মূলত প্রলোভনে পড়ে গিয়ে ভুক্তভোগীরা এই ডলার স্ক্যাম প্রতারণার ফাঁদে জড়িয়ে পড়েন বলে জানান। অ্যাডভোকেট রহিমের পাশাপাশি কাপ্তানবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি কামাল পাশা এবং একজন নারী উদ্যোক্তাও সেসব সেমিনারে বিনিয়োগ আহ্বান করে বক্তব্য রাখতেন। ীবীঢ়ৎবংং.রড় ওয়েবসাইটের অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়া, ডলার জমা দেওয়া এবং প্রফিট বা লাভ উত্তোলনের গোটা পদ্ধতি সবাইকে শিখিয়ে দেন সোহেল পাঠান ওরফে সোহাগ পাঠান ওরফে এসএম পাঠান। তাছাড়া ীবীঢ়ৎবংং.রড় ওয়েবসাইটটি ভিয়েতনাম থেকে পরিচালিত হয় এবং সোহাগ পাঠান ওই প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ জোনের প্রধান এজেন্ট-এমন পরিচয়ই বরাবর সবার কাছে দেয়া হতো। এভাবেই প্রলুব্ধ হয়ে প্রায় দেড় শতাধিক ব্যাক্তি চলতি বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৮ লাখ ডলার এই স্ক্যামে বিনিয়োগ করেন, বাংলাদেশী মূদ্রায় যা প্রায় সাড়ে ১০ কোটি ডলার। এমতাবস্থায় জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে হঠাৎ করেই ীবীঢ়ৎবংং.রড় ওয়েবসাইটে একাউন্টগুলোতে নিয়মিত লভ্যাংশ জমা হতে থাকলেও, উত্তোলন করার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং উত্তোলন করতে চাইলেই ওয়েবসাইট আন্ডার মেইনটেনেন্স বার্তা দেখাতে থাকে। এই সমস্যা বিষয়ে জানতে চাইলে দুএকদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে-অ্যাডভোকেট রহিম ও সোহাগ পাঠান এমন ভরসা দিলেও, দিনের পর দিন লভ্যাংশ উত্তোলন বন্ধই হয়ে থাকে। একপর্যায়ে এডভোকেট রহিম ও সোহেল পাঠান বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে দুরত্ব তৈরির পাশাপাশি নানাপ্রকার বিরুপ আচরণ শুরু করেন এবং বিভিন্ন মোবাইল নাম্বার থেকে আর সেই সঙ্গে আরও কিছু অজ্ঞাত নাম্বার থেকে নানাধরনের হুমকি-ধামকি দেয়া শুরু করে, বিনিয়োগ করা ডলারের বিষয়টি ভুলে যেতে বলে, অন্যথায় ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যদের-বিশেষ করে তাদের সন্তানদের বড় ধরনের ক্ষতি করা হবে বলে হুমকি দেয়া শুরু করে। অনুসন্ধানে জানা যায় যে, বাইরে থেকে একটি গেমিং ওয়েবসাইটের রূপ দিয়ে এর ভেতরে যে বিপুল অংকের ডলার জমা দেয়া এবং সেখানে বিটকয়েন ব্যবসার মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে তা থেকে লভ্যাংশ দেয়ার একটি নোংরা খেলা হয়েছে-তা কোনোভাবেই বোঝা সম্ভব না। আইপি বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, ওয়েবসাইটের শুরুর দিকে লেখা রয়েছে ২০ বছর ধরে তারা নাকি কম্পিউটার গেমিং নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। অথচ ডোমেইন বিষয়ক তথ্যে দেখা যাচ্ছে এটি ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ হোস্টিং করা, যার মেয়াদ রয়েছে মাত্র এক বছর ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত। ওয়েবসাইটেরর নিচের দিকে ভিয়েতনামের একটি ঠিকানা ও ফোন নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে। ফোন নাম্বারটি ভুয়া, ডায়াল করলেই বোঝা যায়। আর ঠিকানাটি একটি ভিয়েতনামের একটি দোকানের, যা গুগল লোকেশন গেলেই পাওয়া যায়। আর, ওয়েবসাইটটি নির্মাণ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এটি অত্যন্ত সস্তা একটি ভিপিএন সফটয়ার ক্লাউডফ্লেয়ার (পষড়ঁফভষধৎব) ব্যবহার করে চালানো হচ্ছে। এর আইপি সবসময় পরিবর্তনশীল এবং আইপি লোকেশন সব সময় আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া দেখায়। কারণ ক্লাউডফ্লেয়ার (পষড়ঁফভষধৎব) প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত। অনুসন্ধানে আরও জানা যায় যে, প্রধান মাস্টারমাইন্ড হিসেবে চিহ্নিত অ্যাডভোকেট রহিম গত কয়েক মাসে ঢাকার বনশ্রীতে দেড় কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট, আফতাবনগরে প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের জমি এবং ৯০ লাখ টাকা মূল্যের গাড়ি ক্রয় করেছেন। আর সহযোগী মাস্টারমাইন্ড হিসেবে চিহ্নিত সোহেল পাঠান ওরফে সোহাগ পাঠান ওরফে এসএম পাঠান গত তিন মাসে মুন্সিগঞ্জে কয়েক বিঘা জমি কিনেছেন, কক্সবাজারে রিসোর্ট করার উদ্দেশ্যে বিনিয়োগ করেছেন এবং সাড়ে ৪ কোটি টাকা মূল্যের দুটো দামি গাড়ি কিনেছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, স্ক্যাম থেকে আয়কৃত টাকার বৃহদাংশ এখনো প্রধান মাস্টারমাইন্ড হিসেবে চিহ্নিত রাহুল আহমেদ ওরফে এডভোকেট রহিমের চারটি ব্যাংক একাউন্টে রয়েছে, যার পরিমাণ ৫ লাখ ডলারের বেশি। এছাড়া দ্রুত দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন তিনি, অনবরত কানাডার ভিসা পাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আর বাকি দুই মাস্টারমাইন্ড কাপ্তানবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি কামাল পাশা এবং সোহাগ পাঠান ওরফে সোহেল পাঠান ইতিমধ্যেই গাঢাকা দিয়েছেন। এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে রহিমের মোবাইলে ফোন করলে তিনি শুরুতে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। পরে বিভিন্ন সেমিনারে তার বক্তব্যের ভিডিও রয়েছে জানানোর পর তিনি সব দোষ কামাল পাশা, সোহাগ পাঠান এবং সেই নারী উদ্যোক্তার ওপর চাপিয়ে বলেন যে, শুধুমাত্র গুছিয়ে কথা বলতে পারার কারণেই নাকি তাকে ওইসব সেমিনারে বক্তব্য দেয়ার জন্য ভাড়া করে নেয়া হতো। মন্তব্য জানার জন্য বাদবাকি প্রতারকদের মোবাইলে ফোন করলে সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ