আমদানি ঋণপত্র বা এলসি খোলার পরিমাণ ক্রমাগত কমে তলানিতে এসে ঠেকেছে। যা আমদানিনির্ভর যেকোনো দেশের জন্য বিপৎসংকেত। মূলত দেশে বেসরকারি বিনিয়োগে মন্দা, মূল্যস্ফীতি, মজুরি বৃদ্ধির সমন্বয় না থাকা এবং ভোগব্যয় কমে যাওয়ার প্রভাবে কমে গেছে আমদানির চাহিদা। ফলে গত জুন মাসে সবচেয়ে কম আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে। যার পরিমাণ কোভিড মহামারির সময়ের চেয়েও কম। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সদ্যসমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে ক্রমাগত কমেছে এলসি খোলার পরিমাণ। আর গত জুনে তা এসে ঠেকে তলানিতে। এরচেয়ে বিগত ২০২০ সালের আগস্টে কম এলসি খোলা হয়েছিল। যার পরিমাণ ছিলো ৩.৭ বিলিয়ন ডলার। আর গত জুনে এলসি খোলার পরিমাণ ৪.১৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। যা আগের অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় প্রায় ২৪.৪২ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের জুনে এলসি খোলা হয়েছিল ৫.৪৭ বিলিয়ন ডলারের। বিগত ২০২০ সালের মার্চে দেশে প্রথম কোভিডে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর দেশব্যাপী লকডাউন ও অর্থনৈতিক স্থবিরতার কারণে ওই বছর আমদানি কমে গিয়েছিল। তবে বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার এ বছরের জুনে এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে।
সূত্র জানায়, দেশের বড় বড় অনেক আমদানিকারকই আমদানির পরিমাণ অনেক কমিয়ে দিয়েছে। কারণ কমে গেছে পণ্যের চাহিদা। পাশাপাশি এবার সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিএপি) বাস্তবায়নের হারও অনেক কম। আমদানিনির্ভর দেশে এভাবে আমদানি কমে যাওয়া সুফল বয়ে আনবে না। বরং কমে যাবে সরকারের রাজস্ব আয় ও ব্যাংকের সামগ্রিক আয়ও। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) মোট প্রায় ৬৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় মাত্র ০.১৮ শতাংশ বা ১২২ মিলিয়ন ডলার বেশি। তবে সব পণ্যে আমদানি বাড়েনি। বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি খোলা এলসি আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৫ শতাংশের বেশি কমেছে। একই সময়ে কমেছে মধ্যবর্তী পণ্য, পেট্রোলিয়াম ও শিল্পের কাঁচামালের আমদানি এলসি খোলাও।
সূত্র আরো জানায়, গত জুনে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে মোট ৪.৫৯ বিলিয়ন ডলারের, যা এক বছর আগের একই মাসের ৫.৩৩ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ১৪ শতাংশ কম। আর সর্বশেষ চলতি বছরের জুনের চেয়ে কোভিডকালীন ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে কম এলসি নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। ওই মাসে ৪.৪১ বিলিয়ন ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল। তবে অর্থবছরের হিসাবে এলসি নিষ্পত্তি বেড়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬৯.৪৬ বিলিয়ন ডলারের আমদানি এলসি নিষ্পত্তি করেছে, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৬৬.০৭ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ৪.১৮ শতাংশ বেশি। এমন পরিস্থিতিতে ‘সরকারকে আমদানি বাড়াতে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। আর জুনে আমদানি অনেক বেশি কমে যাওয়ায় বাজারে ডলারের তারল্য বেড়ে গিয়েছিল। তার জের ধরে ডলারের দাম কমতে শুরু করেছিল। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের শেষদিক থেকে ডলারের দাম কমতে শুরু করে। তখন মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডলারের দাম প্রায় ৩ টাকা কমে নেমে এসেছিল ১২০ টাকায়। এই পরিস্থিতিতে গত ১৩ জুলাই প্রথমবারের মতো নিলামে ডলার কিনে বাজারে হস্তক্ষেপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিন নিলামের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১২১.৫০ টাকা দরে ১৭৩ মিলিয়ন ডলার কেনে, যদিও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ১২০ থেকে ১২০.৫০ টাকা দরে বিক্রির প্রস্তাব করেছিল। বেশি ফ্লোর প্রাইস দিয়ে ডলার কিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু তার মাত্র দুই দিন পর একই দামে আরো ৩৭৩ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ ব্যাংক কেনে। পরের একটি নিলামে কেনা হয় আরো ১০ মিলিয়ন ডলার। ওসব পদক্ষেপে ডলারের দরপতন থামে এবং মুদ্রাটির দাম ফের বাড়তে শুরু করে।
এদিকে আমদানি এলসির চাহিদা না থাকা প্রসঙ্গে একটি ব্যাংকের সিইও জানান, বর্তমানে বিনিয়োগ হচ্ছে না বললেই চলে। আর বিনিয়োগ না হলে মূলধনী যন্ত্রপাতি বা কাঁচামালসহ অনেক আমদানি হয় না। এখন যা আমদানি হচ্ছে, তার একটা বড় অংশই নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য। আর ভোগ্যপণ্যের আমদানি সাধারণত একটা নির্দিষ্ট অবস্থানেই থাকে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

এলসি খোলার পরিমাণ কমে তলানিতে
- আপলোড সময় : ২০-০৮-২০২৫ ০৭:১০:৪৫ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২০-০৮-২০২৫ ০৭:১০:৪৫ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ