ঢাকা , সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫ , ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
মশক নিধনের বাজেট বাড়লেও মশা কমছে না রাষ্ট্রপতির ছবি সরানো নিয়ে জল্পনা-কল্পনা সীমান্তে প্রবেশের অপেক্ষায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা শিক্ষা ক্যাডারে বৈষম্য নিরসনে ঢাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শ্রীপুরে পোশাক কারখানার সীমানা প্রাচীর ধসে শ্রমিকের মৃত্যু শ্রীপুরে পোশাক কারখানার সীমানা প্রাচীর ধসে শ্রমিকের মৃত্যু আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস উত্তরা জাতীয় নির্বাচন ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে- দুদু ঢাবিতে ঠিকাদারির টাকা নিতে এসে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আটক কক্সবাজারে চিংড়ির ঘের দখল নিয়ে গোলাগুলি, নিহত ১ পাঁচ দফা দাবিতে উত্তাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবনে তালা বাংলাদেশে নাশকতা চালাতে হাসিনাকে সহযোগিতা করছে ভারত : রিজভী বসুন্ধরা চেয়ারম্যান ও স্ত্রীর সম্পদের হিসাব চেয়েছে দুদক শেরপুরে কোটি টাকার সরকারি জমি উদ্ধার জুলাই ঘোষণা-জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি বাস্তবসম্মত পদ্ধতি-শিশির মনির ফ্যাসিস্ট সরকার এস আলম গ্রুপকে সেতাবগঞ্জ চিনিকল দিতে চেয়েছিল-জোনায়েদ সাকি রমনা লোকাল ট্রেন উদ্ধারে আসা রিলিফ ট্রেনও লাইনচ্যুত সনদের আইনিভিত্তি না থাকলে আরেকটি হাসিনার জন্ম হবে-গোলাম পরওয়ার ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু একজনের, হাসপাতালে ভর্তি ৪৬৬

সীমান্তে প্রবেশের অপেক্ষায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা

  • আপলোড সময় : ১৮-০৮-২০২৫ ০৪:৪৯:০৯ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৮-০৮-২০২৫ ০৪:৪৯:০৯ অপরাহ্ন
সীমান্তে প্রবেশের অপেক্ষায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা
* ৫০ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্তের কাছে অবস্থান নিয়েছে * সীমান্ত সংলগ্ন ২৭০ কিলোমিটার এলাকা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আরাকান বিদ্রোহীরা * গত ১৮ মাসে নতুন করে দেড় লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে আরও ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। যেকোনও সময়ে তারা বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত ১৮ মাসে নতুন করে দেড় লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সীমান্ত-সংলগ্ন মিয়ানমারের ২৭০ কিলোমিটার এলাকার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আরাকান বিদ্রোহীরা। সেই সঙ্গে নতুন করে সীমান্ত নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। তাদের ফেরত পাঠাতে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে এতদিন দেনদরবার চলেছে। এর মধ্যে আরাকান বিদ্রোহীদের সংঘাতের কারণে নতুন করে রোহিঙ্গা আসা ঠেকানো এবং আগে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো নিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। গতকাল রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রোহিঙ্গা-বিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের এক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন কর্মকর্তা বলেন, রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষের কারণে রোহিঙ্গারা সীমান্তের দিকে জড়ো হচ্ছে। কিছু কিছু করে তারা সীমান্ত অতিক্রম করছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী গত ১৮ মাসে নতুন করে দেড় লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। গতকাল রোববারের বৈঠকে রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল অপ্রতুলতার বিষয়টিও আলোচনা হয়। এই কর্মকর্তা জানান, গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে রোহিঙ্গাদের নিয়ে এক অনুষ্ঠানে তহবিল সংগ্রহের বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। নাম প্রকাশ না করে আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, চলতি বছর রোহিঙ্গা জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানে প্রায় ৯৫ কোটি ডলারের জন্য আবেদন করা হয়। এ পর্যন্ত অর্ধেকের কিছু বেশি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। এখন জরুরিভাবে ১৭ কোটি ডলারের প্রয়োজন। এই তহবিল সংগ্রহরের জন্য জাতিসংঘে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। অপর একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো আরাকান আর্মি দখলে নেওয়ায় নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের গতিপথ নির্ধারণ বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। তারা মনে করছেন, প্রথমত এখন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জরুরি হলো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো। সীমান্তে সতর্ক থাকা। এটাকে শুধু ঢাকা-নেপিদো সমস্যা হিসেবে না দেখে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংকট হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উপস্থাপন করতে হবে। বিষয়টিতে মনোযোগ দিতে হবে। কারণ আগে ছিল একপক্ষ। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খুব ভালো না গেলেও তারা সরকার হিসেবে স্বীকৃত ছিলো। আর এখন হলো দুটি পক্ষ। এর মধ্যে আরকান বিদ্রোহী বাহিনী অনির্বাচিত এবং রোহিঙ্গা ইস্যুটি আরাকান বিদ্রোহীদের দখল করা অংশের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, আরাকান বিদ্রোহীদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নেতিবাচক। ফেব্রুয়ারিতে বিদ্রোহীদের আক্রমণে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় তাদের শত্রুপক্ষ। তখন বাংলাদেশ সেই শত্রুপক্ষকে আশ্রয় দিয়েছিল। সেই দলে রোহিঙ্গা নেতারাও ছিলেন। তাছাড়া বিদ্রোহীরা রোহিঙ্গামুক্ত রাখাইন চায়। কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, আরকান আর্মি ও মিয়ানমার সরকার উভয়পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে সমস্যার সমাধান করতে চায় বাংলাদেশ। পাশাপাশি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে ভারত ও চীনের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে ঢাকা। কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও অধ্যাপক আমিনা মহসীন বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। মিয়ানমারের ক্ষেত্রে দেশটির মধ্যে থাকা বিভিন্ন ফ্র্যাকশনের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, একই সঙ্গে বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে চলমান ভূরাজনীতিতে নিজেদের দৃঢ় অবস্থান ধরে রাখাও বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। বিশ্লেষকদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন, শুরু থেকেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে মিয়ানমারকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়নি। অথচ বাংলাদেশের সংকটের তালিকায় বেশ ওপরই জায়গা করে নেবে রোহিঙ্গা ইস্যুটি। এখন বড় বিষয় হবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক পারভেজ করিম আব্বাসি বলেন, আরাকান বিদ্রোহীদের সঙ্গে সম্পর্ক অন্যভাবে তৈরি করতে হবে। এখনই তাদের সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে যোগাযোগ স্থাপনের উপযুক্ত সময় নয়। তবে আমাদের সামরিক বিকল্পগুলোও উন্মুক্ত রাখা উচিত। ঢাকা যদি আরাকান আর্মির মতো বিদ্রোহী বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে না পারে, তাহলে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সম্ভাব্য সব অনানুষ্ঠানিক চ্যানেল খুঁজে বের করারও পরামর্শ দেন এ বিশ্লেষক। রাখাইনে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বিদ্রোহের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে বলেও সতর্কতা উচ্চারণ করেন তিনি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বাংলাদেশের সীমানাঘেঁষা মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য বর্তমানে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে, মিয়ানমারের বিপ্লবী গোষ্ঠীর পাশাপাশি জান্তা সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সবসময় মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজখবর রাখছে এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এ অঞ্চলে বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও জান্তা সরকারের মধ্যে চলমান উত্তেজনা বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তবে বাংলাদেশ তা মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স