ঢাকা , সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫ , ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
বন্দরে বিদেশি অপারেটরের বিরোধিতা নয়, সমর্থন করা উচিত: বিকেএমইএ’র সভাপতি মশক নিধনের বাজেট বাড়লেও মশা কমছে না রাষ্ট্রপতির ছবি সরানো নিয়ে জল্পনা-কল্পনা সীমান্তে প্রবেশের অপেক্ষায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা শিক্ষা ক্যাডারে বৈষম্য নিরসনে ঢাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শ্রীপুরে পোশাক কারখানার সীমানা প্রাচীর ধসে শ্রমিকের মৃত্যু শ্রীপুরে পোশাক কারখানার সীমানা প্রাচীর ধসে শ্রমিকের মৃত্যু আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস উত্তরা জাতীয় নির্বাচন ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে- দুদু ঢাবিতে ঠিকাদারির টাকা নিতে এসে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আটক কক্সবাজারে চিংড়ির ঘের দখল নিয়ে গোলাগুলি, নিহত ১ পাঁচ দফা দাবিতে উত্তাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবনে তালা বাংলাদেশে নাশকতা চালাতে হাসিনাকে সহযোগিতা করছে ভারত : রিজভী বসুন্ধরা চেয়ারম্যান ও স্ত্রীর সম্পদের হিসাব চেয়েছে দুদক শেরপুরে কোটি টাকার সরকারি জমি উদ্ধার জুলাই ঘোষণা-জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি বাস্তবসম্মত পদ্ধতি-শিশির মনির ফ্যাসিস্ট সরকার এস আলম গ্রুপকে সেতাবগঞ্জ চিনিকল দিতে চেয়েছিল-জোনায়েদ সাকি রমনা লোকাল ট্রেন উদ্ধারে আসা রিলিফ ট্রেনও লাইনচ্যুত সনদের আইনিভিত্তি না থাকলে আরেকটি হাসিনার জন্ম হবে-গোলাম পরওয়ার
দালাল ও অপরাধী চক্রে জিম্মি পাসপোর্ট গ্রাহকরা

আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস উত্তরা

  • আপলোড সময় : ১৮-০৮-২০২৫ ০৪:৪৫:৩৩ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৮-০৮-২০২৫ ০৪:৪৫:৩৩ অপরাহ্ন
আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস উত্তরা
তুরাগ থেকে মনির হোসেন জীবন রাজধানীর জনবহুল ও ব্যস্ততম নগরী হলো উত্তরা-তুরাগ থানা এলাকাটি। আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস উত্তরাকে ঘিরে সংঘবদ্ধ একটি শক্তিশালী দালাল ও অপরাধী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পাসপোর্ট অফিসকে পুঁজি করে অপরাধী চক্রের সদস্যরা গোপনে ও প্রকাশ্যে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এবং আইনকে তোয়াক্কা না করে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা অনেকটাই বীরদর্পে এ পেশা দীর্ঘ দিন ধরে চালিয়ে যাচ্ছে। আর এ পেশায় প্রায় শতাধিক দালাল ও প্রতারক চক্র যৌথ ভাবে সক্রিয় রয়েছে। জানা গেছে, উত্তরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সামনে এবং তার আশেপাশে গড়ে ওঠা ফটোকপি, কম্পিউটারের দোকান, খাবার হোটেল ও চা দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে ও ভেতরে শিকারের আশায় দালালরা ওঁৎ পেতে বসে থাকে। কম্পিউটারের টং ও চা পানের দোকান গুলো দালালদের গোপন আড্ডা খানায় পরিণত হয়েছে। ফলে কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছে না পাসপোর্টধারী গ্রাহকরা। ভুয়া ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে পাসপোর্ট তৈরি দেশ বিরোধী অপরাধ মূলক কাজ পরিচালনারও অভিযোগ উঠেছে। পাসপোর্ট অফিসকে ঘিরে রয়েছে দালাল চক্রের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। প্রায় শতাধিক দালাল ও প্রতারক চক্র এ পেশায় সক্রিয় রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল রোববার সকালে সরেজমিনে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস উত্তরা পরিদর্শনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। তথ্য অনুসন্ধান ও খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, অপরিচিত কোন নারী কিংবা পুরুষ মানুষ পাসপোর্ট অফিসের দক্ষিণ ও পূর্ব পাশে গড়ে উঠা দোকানের সামনে রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলেই দালাল সিন্ডিকেটের সদস্যরা সামনে এসে দাঁড়ায়, কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই দালালরা বলে। আপু-ভাইয়া ও অ্যাঙ্কেল আমার দোকানে আসুন, বসুন। আমাদের কাছে সব সেবা পাবেন। আমরা হলাম অলরাউন্ডার, অলসলিউশন নিয়ে মানুষকে সেবা দিতে সরাসরি কাজ করি। এরপর রতন নাম একজন পাসপোর্ট অফিসের দালালকে মূল গেটের সামনে দেখা গেল। তাকে বলতে শোনা গেল-সারা দিন আমাদের কাছে কত মানুষ কাজ করাতে আসে। সবাই কি আর কাক্সিক্ষত সেবা পায়। এখানে যে আগে আসবে এবং কাজের টাকা দিবে তার কাজটাই আগে হবে। পাশেই আরো কয়েকজন দালালকে টং দোকান, চা দোকান ও রাস্তার পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে পাসপোর্ট করতে আসা লোকদের সঙ্গে দরদাম করতে দেখা গেছে। পাসপোর্ট অফিসের সামনে পশ্চিম পাশে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে ওঠা কম্পিউটার কম্পোজ ও ফটো কপির দোকান গুলোতে মানুষের জটলা। একটু সামনে এগিয়ে দেখা মিলল কিছু দালালের। এসব দোকানে পরিচয় গোপন করতে যতো প্রকার ভুয়া কাগজ তথা প্রমাণপত্র দরকার, তার সবই করা হচ্ছে কম্পিউটারে। অভিযোগ উঠেছে, রাস্তার পাশে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা দোকান গুলোতে রয়েছে-মানুষকে আলাদা আলাদা সেবা প্রদানের জন্য প্রতিনিধি। যাদের কাজ হচ্ছে-পাসপোর্ট অফিসে আগত পাসপোর্ট প্রার্থীদের কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়া অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে দ্রুত পাসপোর্ট হাতে তুলে দেয়ার মত মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে গ্রাম থেকে আগত অতি সাধারণ ও সরল মানুষ গুলোর সর্বস্ব কেড়ে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে । তথ্য অনুসন্ধান ও একাধিক সূত্র বলছে, পাসপোর্ট অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে এই ধরনের অপরাধ আরও সহজতর করা হচ্ছে। উত্তরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের এক শ্রেণির কর্মকর্তা গোপনে ও প্রকাশ্যে দালাল চক্রের সিন্ডিকেটের সঙ্গে আঁতাত রয়েছে। কারও কারও সাথে গভীর সখ্যতা দহরম রয়েছে। সকাল-দুপুর কিংবা বিকেলে টং ও চায়ের দোকান গুলোতে দালাল সিন্ডিকেটের লোকজনের সঙ্গে পাসপোর্ট অফিসের কতিপয় স্টাফদের খোশগল্প করতে দেখা গেছে। টাকা লেনদেনের বিষয়টি ছিল ওপেন সিক্রেট। কয়েকজন দালালকে কাগজের ফাইলের ভাঁজে কিংবা হাতের মুঠায়, চিপায়-চাপায় নিয়ে টাকা লেনদেন করতে দেখা যায়। ফলে দালালদের টাকা দিয়েও কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছে না গ্রাহকরা। পাসপোর্ট অফিসে আসা এক পাসপোর্ট প্রত্যাশি ছদ্মনাম (জেরিন চৌধুরী) বলেন, বর্তমান ঠিকানা ও পেশা সংশ্লিষ্ট প্রমাণপত্র হিসেবে বিদ্যুৎ বিলের ফটোকপি আবেদনের সাথে সংযুক্ত করেছি। তবে শিক্ষার্থী প্রমাণের প্রমাণপত্র আনিনি। তাই আমার আবেদন পাসপোর্ট অফিস কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেনি। পরবর্তীতে রাইয়ান কম্পিউটার দোকানের মালিক মো. নূর ওরফে সরু। আর কর্মচারী মো. ইমরান এর নিকট কম্পোজ ও ফটোকপির দোকান থেকে কলেজের ভুয়া আইডি কার্ড তৈরি করে পাসপোর্ট অফিসে জমা দিয়েছি। জেরিন চৌধুরীর কথার সূত্র ধরে রাইয়ান কম্পিউটার কম্পোজ ও ফটোকপির দোকানে কর্মরত প্রতিনিধি মো. ইমরান ও নয়নের সাথে পাসপোর্ট তৈরির বিষয়ে কথা বলে জানা যায়, ১০ বছরের ৪৮ পৃষ্ঠা এমআরপি পাসপোর্টের জন্য বর্তমান ঠিকানার পুলিশ ভেরিফিকেশন সহ খরচ হবে ১৫ হাজার টাকা। আর সময় লাগবে ১৫/ ২১ দিন। এছাড়া পাশেই রাইয়ান কম্পিউটার কম্পোজ ও ফটোকপির দোকানেসহ আশপাশের দোকান গুলোতে এসব অবৈধ কাগজপত্র তৈরি করা হয় বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। এবিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন, পাসপোর্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ নথির ক্ষেত্রে এমন অপরাধ দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই অপরাধ দমনে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একাধিক সূত্রে জানান, ইতিপূর্বে প্রশাসনের হাতে আটক কিংবা গ্রেফতার হওয়া পাসপোর্ট দালাল ও অপরাধী চক্রের সদস্যরা হলো-মো. মোতালেব হোসেন (৩৩), জিয়াদ রহমান আয়স (২৯), ফিরোজ আলম (৩৬), মোহাম্মদ মিনহাজ হোসেন শান্ত (২৩), মোহাম্মদ মাহিনুল ইসলাম স্মরণ (২২) মো. স্বপন হোসেন (২৫), অবৈধ পন্থা অবলম্বনের দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ১৮৮ ধারা মোতাবেক এমআর কম্পিউটারের স্বত্বাধিকারী মাসুদ রানা, মোস্তাফিজুর রহমান, আমান উল্লাহ, ফারুক আহমেদ, এম মহিউদ্দিন মিন্টু, কামরুল ইসলাম, রেজাউল করিম ও হারুন অর রশিদ। র?্যাব-১,উত্তরা অফিস সূত্র বলছে, গত ১৭ জুন ২০২৩ সালে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত উত্তরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস এলাকায় দালাল চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে সাত সক্রিয় সদস্যকে আটকের পর বিভিন্ন মেয়াদে বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং এক জনকে অর্থদণ্ড দিয়েছে র?্যাব-১, উত্তরার ভ্রাম্যমাণ আদালত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯ মার্চ, ২০২৪ দুপুরে উত্তরা পশ্চিম থানার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস উত্তরা এলাকায় র?্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায়। র?্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাজাহারুল ইসলাম এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন। অবৈধ পন্থা অবলম্বনের দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৭ দালালকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। অপরদিকে গত ১৫ জুন, ২০২৫ বিকেলে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস উত্তরাকে ঘিরে সংঘবদ্ধ পাসপোর্ট দালাল চক্রের ৭ সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। র‌্যাব-১ ভ্রাম্যমাণ আদালত আটকদের বিভিন্ন মেয়াদে বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং এক জনকে অর্থদণ্ড প্রদান করে। র‌্যাব-১ সূত্র বলছে, ইতিপূর্বে আটককৃতদের কাছ থেকে ১৬টি পাসপোর্ট এবং ১৮টি ডেলিভারি সিøপ, টাকা ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। জরিমানার মাধ্যমে আদায়কৃত টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৩ আগষ্ট ২০২৫ ইং দুপুর একটার দিকে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস উত্তরায় ঝটিকা অভিযান চালিয়ে পাসপোর্ট দালাল চক্রের সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত ৭ সদস্যকে আটক করেছে উত্তরা দিয়াবাড়ী আর্মি ক্যাম্পের সেনাবাহিনীর সদস্যরা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ তারা এসব ঘটনার সাথে জড়িত বলে স্বীকারও করেছে। পরে তাদেরকে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। ডিএমপি উত্তরা বিভাগের পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা আজ দৈনিক জনতাকে বলেন, এ পাসপোর্ট অপরাধী চক্রের সদস্যরা অত্যন্ত সংগঠিত এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে নথি জাল করে থাকে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতোমধ্যেই এই চক্রের সদস্যদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে। তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষ ও পাসপোর্ট করতে আসা মানুষকে ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহারের বিরুদ্ধে সচেতন থাকতে হবে। এবিষয়ে কাউকে বিন্দু পরিমান ছাড় দেয়া হবে না হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, অপরাধের সাথে জড়িত দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নতুবা এ ধরনের অপরাধ দেশ থেকে নির্মূল করা সহজ হবে না। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, পুলিশ প্রধান(আইজিপি), গোয়েন্দা প্রধান(ডিবি), র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)সব গোয়েন্দা সংস্থা গুলোর জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সংশ্লিষ্ট সচেতন মহল ও স্থানীয় এলাকাবাসী।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স