ঢাকা , সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫ , ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
মশক নিধনের বাজেট বাড়লেও মশা কমছে না রাষ্ট্রপতির ছবি সরানো নিয়ে জল্পনা-কল্পনা সীমান্তে প্রবেশের অপেক্ষায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা শিক্ষা ক্যাডারে বৈষম্য নিরসনে ঢাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শ্রীপুরে পোশাক কারখানার সীমানা প্রাচীর ধসে শ্রমিকের মৃত্যু শ্রীপুরে পোশাক কারখানার সীমানা প্রাচীর ধসে শ্রমিকের মৃত্যু আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস উত্তরা জাতীয় নির্বাচন ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে- দুদু ঢাবিতে ঠিকাদারির টাকা নিতে এসে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আটক কক্সবাজারে চিংড়ির ঘের দখল নিয়ে গোলাগুলি, নিহত ১ পাঁচ দফা দাবিতে উত্তাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবনে তালা বাংলাদেশে নাশকতা চালাতে হাসিনাকে সহযোগিতা করছে ভারত : রিজভী বসুন্ধরা চেয়ারম্যান ও স্ত্রীর সম্পদের হিসাব চেয়েছে দুদক শেরপুরে কোটি টাকার সরকারি জমি উদ্ধার জুলাই ঘোষণা-জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি বাস্তবসম্মত পদ্ধতি-শিশির মনির ফ্যাসিস্ট সরকার এস আলম গ্রুপকে সেতাবগঞ্জ চিনিকল দিতে চেয়েছিল-জোনায়েদ সাকি রমনা লোকাল ট্রেন উদ্ধারে আসা রিলিফ ট্রেনও লাইনচ্যুত সনদের আইনিভিত্তি না থাকলে আরেকটি হাসিনার জন্ম হবে-গোলাম পরওয়ার ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু একজনের, হাসপাতালে ভর্তি ৪৬৬

জুলাই ঘোষণা-জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি বাস্তবসম্মত পদ্ধতি-শিশির মনির

  • আপলোড সময় : ১৮-০৮-২০২৫ ১২:৪১:৪৪ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৮-০৮-২০২৫ ১২:৪১:৪৪ অপরাহ্ন
জুলাই ঘোষণা-জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি বাস্তবসম্মত পদ্ধতি-শিশির মনির
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ এর বর্ণিত বিধানের আলোকে জনগণের অভিপ্রায়ের এই সরকারের বৈধতা স্বীকৃত উৎস এবং আইনি ভিত্তি বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি বলেন, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের অধীন সুপ্রিম কোর্ট যে মতামত দিয়েছেন এর কোনো কার্যকারিতা নেই। বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার সরাসরি প্রতিফলনই জুলাই ঘোষণা ও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি। রাষ্ট্রপতির ঘোষণাপত্র বা গণভোট জুলাই ঘোষণা ও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার স্বীকৃত ও বাস্তবসম্মত পদ্ধতি। তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর ৮ আগস্ট একটি সরকার গঠিত হয়। ৫, ৬, ৭ ও ৮ এর সন্ধ্যা পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো কার্যকর সরকার ব্যবস্থা ছিল না। ৮ আগস্ট যখন প্রথম সরকার গঠিত হয় তখন সুপ্রিম কোর্টের কাছে একটি রেফারেন্স চাওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্ট একটি রেফারেন্স বা মতামত দেন যে, ইমারজেন্সি বেসিসে ডকট্রিন অব নেসেসিটির ভিত্তিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা। আমি মনে করি এটাই হলো বর্তমান সরকার গঠনের ক্ষেত্রে সবচাইতে বড় ভুল হয়েছে। এটা হলো সাংবিধানিকভাবে সবচাইতে বড় মিসটেক। এই মিসটেক করা উচিত হয়নি। এই সরকার হওয়া উচিত ছিল জনগণের অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে গঠিত সরকার। জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে গতকাল রোববার বিকেল ৩টায় রাজধানী ঢাকার রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত ‘জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্র’ এবং ‘জুলাই জাতীয় সনদ’-এর আইনগত স্বীকৃতি প্রদান ও আমাদের করণীয় শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এ বলেন তিনি। সেমিনারে জাতীয় নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, সেমিনারে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা ছাড়াও জাতীয় নেতা ও আইন বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। শিশির মনির বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারসহ ৭৪ জনকে হত্যা করে। গত ১৬ বছরের শাসনামলে পর্যায়ক্রমে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান অকার্যকর করে তোলে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করে, নির্বাচন কমিশনকে একটি আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে। একইসঙ্গে ক্ষমতা সুসংহত করার জন্য আওয়ামী লীগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করায়। এভাবেই বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করে। ফ্যাসিবাদী ও বৈষম্যমূলক শাসনের প্রতিবাদে দেশের ছাত্র জনতা সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তোলে। ২০২৪ সালের ৩৬ জুলাই সার্বজনীন আন্দোলনের মাধ্যমে একটি সফল গণঅভ্যুত্থান হয়। দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করে। সহস্রাধিক মানুষ এই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করে। বিশিষ্ট এ আইনজীবী বলেন, যেখানে দেশের প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রিম কোর্টই কাজ করেনি, যেখানে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদ নেই, পার্লামেন্ট নেই, সেখানে এই ছোট্ট সংবিধান কি করে কাজ করবে? কার মাধ্যমে কাজ করবে এই প্রশ্নের উত্তর পরবর্তীতে আছে। শিশির মনের বলেন, একটা কথায় সবাইকে অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বুঝতে হবে যে, এই সরকারের মূল ভিত্তি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ নয়, এই সরকারের মূল ভিত্তি হচ্ছে জনগণের ইচ্ছার চরম বহিঃপ্রকাশ। এর বাইরে যে যাই ইন্টারপিটেশন দেবেন, যে যাই বলুক না কেন, তা এই ভারতীয় সাবকন্টিনেন্টে সাংবিধানিক জুরিসপ্রুডেন্স দ্বারা তাদের সেই কথা সমর্থনযোগ্য নয়। তিনি বলেন, জনগণের চরম অভিপ্রায় গঠিত সরকার প্রোক্লেমেশন বা ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে জুলাই সনদকে সংবিধানের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল অস্থায়ী সরকারের পঠিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র দ্য প্রোক্লেমেশন অব ইনডিপেনডেন্স ১৯৭১, মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক দলিল যা বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান। গুরুত্বের বিবেচনায় জুলাই সনদ এতেই মর্যাদার অধিকারী। ইতিহাসের যে কয়টি প্রোক্লেমেশন সবচেয়ে আলোচিত তার মধ্যে ১৮৬৩ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের ঘোষিত ইমানসিপেশন প্রোক্লেমেশন ছিল অন্যতম। এটি যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঐতিহাসিক দলিল। যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কনফেডারেশন রাষ্ট্রগুলোকে দাস প্রথা নিষিদ্ধ করা হয়। যা নাগরিক অধিকার মুক্তির সংগ্রামের ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এছাড়াও জুলাই সনদের বাস্তবায়নে আরেকটি কার্যকরী পদক্ষেপ হতে পারে গণভোট। জুলাই সনদের কোনো বিধানের সঙ্গে বিদ্যমান সংবিধানের কোনো অংশ সাংঘর্ষিক হলে জুলাই সনদ প্রাধান্য পাবে, বলেন তিনি। শিশির মনির বলেন, দুটি কনসেপ্ট। একটি হচ্ছে জুলাই প্রোক্লেমেশন, আরেকটি হচ্ছে রেফারেন্ডাম বা গণভোট। প্রোক্লেমেশনের মাধ্যমেও এই বিদ্যমান সাংবিধানিক সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব। রেফারেন্ডাম বা গণভোটের মাধ্যমেও সাংবিধানিক সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব। এর উদাহরণ আমাদের দেশে আছে। তিনি গণভোটের কয়েকটি উদাহরণ উল্লেখ করে বলেন, ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে মুজিবকে যখন হত্যা করা হয় তখন খোন্দকার মোস্তাক আহমেদ এসে মার্শাল ল’ জারি করেন। তিনি এসে বলেন, আই মিস্টার খন্দকার মোস্তাক আহমেদ ইজ হেয়ার বাই ডিক্লেয়ারড মার্শাল ল প্রোক্লেমেশন। দ্য কনস্টিটিউশন উইল বি সাবর্ডিনেট টু দ্য কনস্টিটিউশন। এরপর তিনি ২০ আগস্ট সামরিক আইন জারির মাধ্যমে ১৫ আগস্ট থেকে তার বৈধতা দেন। এরপর ৮ নভেম্বর ১৯৭৫ রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাদত মোহাম্মদ সায়েম প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত হন। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত হন। ১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর বিচারপতি সায়েম প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ থেকে অব্যাহতি নেন। ওইদিন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সি এম এল এ অথবা চিফ মার্শাল ল’ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারপর ৬ মাস পরে ১৯৭৭ সালের ৩১ মে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে ৮৮ শতাংশ ভোট পেয়ে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান জনগণের আস্থা অর্জন করেন এবং রেফারেন্ডামের মাধ্যমে তা অ্যাপ্রুভ করা হয়। একইসঙ্গে ১৯৭৭ সালের ৩০ মে মার্শাল ল অর্ডার নাম্বার-১ ১৯৭৭ জারি করে বাংলাদেশের সংবিধানে আমূল পরিবর্তন আনা হয়। আজকের সংবিধানে যে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপরে পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস যুক্ত করা হয়। আজকে যে গণতন্ত্র, সোশ্যালিজম মিনি ইকোনমির ও সোশ্যাল জাস্টিসের কথা বলা হচ্ছে তা সবকিছু করা হয়েছিল ১৯৭৭ সালের ৩১ মের সামরিক ফরমান বলে। এ আইনজীবী বলেন, আগের শাসকরা সামরিক আইন জারির মাধ্যমে সংবিধানের উল্লেখযোগ্য বিধানাবলি স্থগিত করেছেন। প্রয়োজনীয়তার নীতির ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করেছেন। কিন্তু ২০২৪ এর জুলাই গণঅভ্যুত্থান এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। এটি ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি ও গোত্র নির্বিশেষে দেশের সব মানুষের অংশগ্রহণে স্বতঃস্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থান। পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠন প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে জনগণের পরম অভিব্যক্তির প্রতিফলনরূপে। সুতরাং এ সংক্রান্ত সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের অধীন সুপ্রিম কোর্ট যে মতামত দিয়েছেন এর কোনো কার্যকারিতা নেই। বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার সরাসরি প্রতিফলনই জুলাই ঘোষণা ও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি। রাষ্ট্রপতির ঘোষণাপত্র বা গণভোট জুলাই ঘোষণা ও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদানের স্বীকৃত ও বাস্তবসম্মত পদ্ধতি, বলেন শিশির মনির।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স