ঢাকা , শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫ , ১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
গৃহবধূ থেকে সফল রাজনীতিক চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবারহের উদ্বোধন আজ ‘আমি গৃহবন্দি’, জেডআই খান পান্নার ফেসবুক পোস্ট আজ শুভ জন্মাষ্টমী হঠাৎ আলোচনায় ‘তৃতীয় জোট’ মাইলস্টোন ট্রাজেডি: ২৪ দিন পর আরও এক শিক্ষিকার মৃত্যু চীনা বিনিয়োগে বড় বাধা কোয়াড যুক্তরাষ্ট্রে বাজার বাড়াতে প্রস্তুত হচ্ছে বাংলাদেশ ‘ফ্যাসিবাদী’ হাসিনার অপরাধে বঙ্গবন্ধু হত্যা জায়েজ করা যায় না-বাংলাদেশ জাসদ হাসিনাসহ ২৮৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পরিকল্পিত অস্থিরতা শিক্ষা প্রশাসনে শর্তের লড়াইয়ে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন নির্বাচনের রোডম্যাপ আগামী সপ্তাহে নেত্রকোণায় ছাদ ধসে তিন শ্রমিক নিহত, আহত দুই নতুনরূপে সেজেছে উত্তরার মুগ্ধ মঞ্চ রাজবাড়ীতে বাড়ছে নদ-নদীর পানি, শঙ্কায় নিম্নাঞ্চলের মানুষ তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপরে ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৪১ বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত মুজিবনগরে মহিলাসহ মোট ৪ জনকে বিএসএফর পুশইন গৌরনদী বাস-কোচ কাউন্টার মালিক ও শ্রমিক সমিতি গঠন
মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি

আমি আমার মেয়েকে জীবিত চাই, নইলে ক্ষতিপূরণ চাই : ফারুক হোসেন

  • আপলোড সময় : ১৪-০৮-২০২৫ ১০:৫২:৪০ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৪-০৮-২০২৫ ১০:৫২:৪০ পূর্বাহ্ন
আমি আমার মেয়েকে জীবিত চাই, নইলে ক্ষতিপূরণ চাই : ফারুক হোসেন
তুরাগ থেকে মনির হোসেন জীবন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির মেধাবী একজন শিক্ষার্থীর নাম ওকিয়া ফেরদৌস নিধি। পড়াশোনা করে বড় হয়ে সে একদিন ডাক্তার হবে এই ছিল তার জীবনের স্বপ্ন। কিন্তু বিমান দুর্ঘটনা অকালে তার তাজা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এতে করে নিধি’র এবং তার পরিবারের সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। শোকে কাতর এখন পুরো পরিবারটি। জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরা-তুরাগের ডিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাসে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন তুরাগের চন্ডাল ভোগ গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা মো. ফারুক হোসেনের মেয়ে ওকিয়া ফেরদৌস নিধি। ছোট মেয়েকে হারিয়ে তার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনরা শোকে মর্মাহত। কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহত নিধি’র বাবা ফারুক হোসেন বলেন, আমি এখন কি নিয়ে বাঁচব। আমার আদরের সন্তান নিধি এবং মেয়ের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। আমি এখন কিভাবে বাঁচবো। আমি আমার মেয়েকে জীবিত অবস্থায় দেখতে চাই, ফেরত চাই? নইলে ক্ষতি পূরণ চাই! এ কথা বলে তিনি বার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত শিক্ষার্থীর পিতা ফারুক হোসেন। গতকাল বুধবার তুরাগের চন্ডাল ভোগ গ্রামে দৈনিক জনতার তুরাগ প্রতিনিধি’র সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে আবেগাপ্লুত হয়ে এবং কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফারুক হোসেন (তিনি) এসব কথা বলেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২১ জুলাই, ২০২৫। মাইলস্টোন স্কুলে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয় এবং দুর্ঘটনায় তৃতীয় শ্রেণি বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ওকিয়া ফেরদৌস নিধি মৃত্যু বরণ করেন। তার স্কুল কোড হলো ২০২১। সেকশন- স্কাই। শিক্ষাবর্ষ ২০২৪-২০২৫ ইং। তিন মেয়ে সন্তানের জনক মো. ফারুক হোসেন। পিতা মরহুম মো. আরব আলী। স্ত্রী সালমা আক্তার ও তিন মেয়েকে নিয়ে তুরাগের চন্ডাল ভোগ গ্রাম, বর্তমানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)’র ৫৩ নং ওয়ার্ডে নিজ বাড়িতে সপরিবারে বসবাস করতেন। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। ফারুক হোসেন দৈনিক জনতাকে জানান, আমার তিন মেয়ের মধ্যে নিধি ছিল পরিবারের সবার ছোট। বড় মেয়ে নীরা মণি’র বিয়ে দিয়েছি। মেজো মেয়ে নুসরাত জাহান নওরিণ মাইলস্টোন ডিয়াবাড়ি ক্যাম্পাসে একাদশ শ্রেণির কমার্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বিমান দুর্ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, গত ২১ জুলাই, ২০২৫ ইং সকালে নিধি প্রতিদিনের মতো তার মার সাথে ডিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুলে যায়। সকালের নাস্তা হিসেবে ক্যান্টিন থেকে বার্গার ও স্কুলে লেখার জন্য দু’টি খাতাও তাকে কিনে দেয় মা। এরপর মা নিজ বাসায় চলে আসে। দুপুর আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে বাবা ফারুক হোসেন মেয়ের জন্য বাসা থেকে ভাত, মুরগির মাংস ও সাথে একটা কোকের বোতল কিনে মেয়ের হাতে পৌঁছে দিয়ে দুপুর ১টার দিকে মেয়ের সাথে কথা বলে স্কুল থেকে নিজ বাসায় ফিরেন। এর অল্প সময় পর স্কুলে বিমান দুর্ঘটনার খবর শুনতে পান পরিবারের সদস্যরা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফারুক হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনার খবর পেয়ে স্কুলে পাগলের মতো দৌঁড়ে ছুটে যাই। বহু জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে মেয়েকে দেখতে না পেয়ে এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। অবশেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, বার্ন ইউনিট, উত্তরার কুয়েত মৌত্রি হাসপাতাল, লুবানা জেনারেল হাসপাতাল, বাংলাদেশ আধুনিক মেডিকেল হাসপাতাল, কুর্মিটোলা হাসপাতালসহ অনেক জায়গায় খোঁজখবর নেই। কিন্তু কোথাও মেয়ের সন্ধ্যান না পেয়ে অবশেষে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টসহ সিএমএইচ হাসপাতাল গিয়ে আমার মেয়ের মরদেহ দেখতে পাই। এরপর আমি ডিএমপি’র তুরাগ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করার ৪ দিন পর ডিএনএ টেস্ট পরীক্ষা করা হয়। পরবর্তীতে হাসপাতাল থেকে মরদেহ বাসায় নিয়ে আসি। ওই দিনই রাত ১১টার পর পারিবারিক কবরস্থানে আমার নিহত মেয়ে (নিধি) কে দাফন করা হয়। এক প্রশ্নের জবাবে নিধির বাবা ফারুক হোসেন জানান, আমার মেয়ের পছন্দের খাবারের মধ্যে রয়েছে-মুরগির মাংস, (রোস্ট), বিরিয়ানি, পিৎজা, বার্গার, সেন্টুজ, চটপটি ও ফুঁসকা। তিনি আরো বলেন, বড় হয়ে ওকিয়া ফেরদৌস নিধি চিকিৎসক (ডাক্তার) হতে চেয়েছিল। প্রতিদিন সে বাসায় ও স্কুলে নিয়মিত পড়াশোনা করতো। বাসায় একজন প্রাইভেট শিক্ষক ছিল। এছাড়াও স্কুলে নিয়মিত কোচিং করতো সে। আর ক্লাসে মনোযোগী ছিল। ছবি আঁকা ছিল তার শখ। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে নিধির বাবা আরো জানান, বিমান দুর্ঘটনা পর বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি, স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ মহানগর উত্তর বিএনপি নেতারা শোক ও সমবেদনা জানাতে আমার বাসায় আছেন। এবিষয়ে তারা খোঁজ খবর নেন এবং বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতি পূরণ দেয়া কিংবা পাওয়ার ব্যাপারে আলোচনা সাপেক্ষ প্রতিশ্রুতি (আশ্বাস) প্রদান করেন। তবে, কারও পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো টাকা হাতে পাইনি। কেউ কোনো সাহায্য সহযোগিতা করেনি। বর্তমান সরকার প্রধান ও মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানিয়ে নিহত শিক্ষার্থীর বাবা আরো বলেন, আমার মেয়েকে ফেরত এনে দিন, না হয় ক্ষতিপূরণ দিন। সরকারকারিভাবে নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ৫ কোটি টাকা (ক্ষতিপূরণ) এবং মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষ ২ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য জোর দাবি করছি। উল্লেখ্য যে, গত ২১ জুলাই, ২০২৫ ইং দুপুরে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসের হায়দার আলী ভবনে (এফ-৭ বিজিআই) মডেলের বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধ বিমান বেলা একটার পর বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামসহ নিহতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে এবং প্রায় শতাধিক মানুষ অগ্নিদগ্ধ ও গুরুতর আহত হয়েছেন।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য