
বিমান ওঠানামায় বাড়ছে ঝুঁকি
- আপলোড সময় : ১৩-০৮-২০২৫ ১০:৫৪:৩০ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৩-০৮-২০২৫ ১০:৫৪:৩০ পূর্বাহ্ন


* যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা
* বহুতল ভবনগুলো অপসারণের নির্দেশনা নোটিশ
তুরাগ থেকে মনির হোসেন জীবন
বিশ্বের মধ্যে নান্দনিক, আধুনিক ও এক আভিজাত্য বিমানবন্দরের নাম হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র ঢাকার কুর্মিটোলায় সুবিশাল জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে বিমানবন্দরটি। এটি উত্তরার আশকোনা হজ ক্যাম্প ও র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সদর দফতর অফিসের পাশেই অবস্থিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানী তুরাগের ১৫নং সেক্টরস্থ প্রিয়াংকা হাউজিং সিটি, পাকুরিয়া, খানটেক, বাউনিয়া, দলিপাড়া, আহালিয়া, উত্তরা ৫, ১৩, ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ নং সেক্টরসহ তুরাগ থানার চন্ডাল ভোগ, ডিয়াবাড়ি ও শুক্রভাঙ্গা এলাকায় অসংখ্য বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে। এছাড়া অনেক নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের কাজ চলমান আছে। বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য বহুতল ভবন। সংশ্লিষ্ট ও সচেতন মহল মনে করছে, গড়ে উঠা বহুতল ভবনগুলো বিমান ওঠানামার ক্ষেত্রে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে গেল ৮/১০ বছরে বেশ কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব এলাকার উপর দিয়ে অধিকতর ঝুঁকি নিয়েই আকাশ পথে ওঠানামা করছে বিমান। যা কি না বিমানের জন্য হুমকি স্বরূপ। গতকাল মঙ্গলবার সকালে সরেজমিন পরিদর্শন ও উত্তরা ও তুরাগের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
জানা গেছে, সম্প্রতি তুরাগের ডিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটে গেল ভয়াবহ এক বিমান দুর্ঘটনা। এতে অসংখ্য শিক্ষার্থী, শিক্ষিকা, অভিভাবকসহ বহু মানুষের প্রাণহানি হয় এবং অসংখ্য লোক আহতের ঘটনা ঘটে। এছাড়াও ইতিপূর্বে উত্তরার দক্ষিণখানের সায়দাবাদ ট্রান্সমিটার ও মাইলস্টোন স্কুল প্রাঙ্গণে ঘটে যাওয়া বিমান ট্র্যাজেডি : আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
সংশ্লিষ্টরা বলছে, দেশে আইন আছে কিন্তু আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই। এসব বিষয়ে বর্তমান সরকার, উপদেষ্টাগণ ও বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। ইতিপূর্বে ও সম্প্রতি ঝুঁকি পূর্ণ এলাকাগুলোতে বহুতল ভবনগুলো অপসারণের নির্দেশনার বিষয়ে প্রিয়াঙ্কা হাউজিং সিটিসহ ভবন মালিকদের বেবিচকের পক্ষ থেকে একাধিক নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।
একাধিক সূত্র বলছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের পাশে ৬টি ‘অধিক উচ্চতার’ ভবন চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ভবনগুলো প্রিয়াংকা হাউজিং সিটির বলে জানা গেছে । অনুমোদনের চেয়েও বেশি উচ্চতার এসব ভবন রানওয়ের পাশে হওয়ায় ফ্লাইট ওঠানামায় ঝুঁকি তৈরি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে ।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব ভবন চিহ্নিত করা বেবিচক। তাদের অবৈধ অংশ অপসারণ বা ভেঙে ফেলার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। ভবনগুলো বিমানবন্দরের রানওয়ে-১৪ এপ্রোচ ফানেলের পাশে (উত্তরা সংলগ্ন) অবস্থিত। সম্প্রতি বিষয়টি নজরে আসে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোহাম্মদ মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়ার। তিনি ভবনগুলো অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন। এ বিষয়টি অবগত করে বেবিচকের পরিচালককে (সিএনএস) পাঠানো এক চিঠিতে বেবিচক চেয়ারম্যান এগুলো অপসারণে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান।
অপরদিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদ উড্ডয়ন ও অবতরণ নিশ্চিত করতে নিয়মবহির্ভূত ভবনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। চিঠিতে বলা হয়, উত্তরায় প্রিয়াংকা সিটি হাউজিংয়ের ১ নম্বর রোডের প্লট নম্বর ৯, ১৩, ২৬, ৩০ এবং ৩৬ এবং রোড নম্বর ৩ এর ৫১ নম্বর প্লটগুলো ওএলএস (অবস্ট্রাকল লিমিটেশন সার্ফেস)-এর অনুযায়ী প্রাপ্য উচ্চতার চেয়ে বেশি উচ্চতায় করা হয়েছে। বেবিচক সূত্র বলছে, ইতোমধ্যে বেবিচক তাদের ভবনগুলো ভেঙে ফেলতে বলেছে। যদি তারা উদ্যোগ না নেয় তবে বিকল্প ব্যবস্থায় ভবন অপসরণ করা হবে।
উল্লেখ্য যে, ওএলএস বলতে প্লেন ওঠানামার আশপাশের স্থাপনা সংক্রান্ত নির্দেশনাকে বুঝায়। ভবনগুলোর মধ্যে ১ নম্বর রোডের ২৬ নম্বর প্লটটি ৩৫ ফুটের (৩ তলা) অনুমোদন পেয়ে ৮০ (৭ তলা), ৯ নম্বর প্লট ৩৬ ফুটের (৩ তলা) অনুমোদন পেয়ে ৮০ ফুট (৭ তলা), ১৩ নম্বর প্লটটি ৪৬ ফুটের (৪ তলা) অনুমোদন পেয়ে ৯০ ফুট (৮ তলা), ১৩ নম্বর প্লট ৪৪ ফুটের অনুমোদন নিয়ে ৯০ ফুট, প্লট নম্বর ৩৬ মাত্র ৫৬ ফুট (৫ তলা)-এর অনুমোদন পেয়ে ৯০ ফুট (৮ তলা) ভবন নির্মাণ করছে। এছাড়াও ৩ নম্বর রোডের ৫১ নম্বর প্লটটি ৭৩ ফুট (৬ তলার) অনুমোদন পেয়ে ১১০ ফুট (১০ তলা) ভবন নির্মাণ করছে। এর মধ্যে ৩০ নম্বর প্লটের ভবন নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ