স্পোর্টস ডেস্ক
এক বছর দুই বছর নয়, বছরের পর বছর ধরে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট থেকে নিজেকে দূরে রেখেছিলেন মিচেল স্টার্ক। তবে এই ৩৪ বছর বয়সে এসে নতুন করে ভাবছেন তিনি। গত ৯ বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে অস্ট্রেলিয়া দলের জন্য নিজেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে তৈরি রেখেছেন বাঁহাতি এই ফাস্ট বোলার। সামনের পথচলায় ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে আরেকটু বেশি নিয়মিত হওয়ার কথা ভাবছেন অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী তারকা। ৯ বছর পর এবার আইপিএলে এসেই সাফল্যের উদ্ভাসিত হাসি ফুটেছে স্টার্কের মুখে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের শিরোপা জয়ে তিনি রেখেছেন উল্লেখযোগ্য অবদান। ঝড় তুলেছিলেন তিনি গত ডিসেম্বরে আইপিএলের নিলামেই। তাকে নিয়ে নিলামে ছিল তুমুল লড়াই। শেষ পর্যন্ত আইপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় হিসেবে ২৪ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে তাকে দলে পায় কলকাতা। এমন পারিশ্রমিকের পর তার কাছে প্রত্যাশা ছিল আকাশচুম্বি। কিন্তু শুরুটা ছিল তার ও দলের জন্য ভীষণ হতাশাজাগানিয়া। প্রথম দুই ম্যাচে আট ওভারে একশ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে লাক্ষ্নৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে তিন উইকেট ও মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের সঙ্গেচার উইকেট নিয়েছেন। যদিও তার সেরা বিধ্বংসী চেহারা দেখা যাচ্ছিল না। ম্যাচের পর ম্যাচে মার খেয়েছেন, ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ১১ করে। তবে বড় ম্যাচের বড় ক্রিকেটার হিসেবে তার যে ভাবমূর্তি, তা আরও উজ্জ্বল করেছেন এই আইপিএলেই। প্রথম কোয়ালিফায়ার ও ফাইনালে দেখা মেলে সেই চেনা ছন্দের। নতুন বলে আগুনে বোলিংয়ে দলের জয়ের ভিত গড় দেন তিনি। মৌসুমের সবচেয়ে বড় দুটি ম্যাচেই তিনি ম্যান অব দা ম্যাচ। এই মৌসুমের পথচলায় তার ভেতরে ভাবনার পরিবর্তনও হয়েছে। সীমিত ওভারের ক্রিকেটের সেরা বোলারদের একজন এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের এই রমরমা বাজারে পরম ক্রিকেটার কাক্সিক্ষত হয়েও নিজেকে তিনি দূরে রেখেছিলেন। ২০১৪ ও ২০১৫ আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে খেলার পর আর আইপিএলে দেখা যায়নি তাকে। দেশের বাইরের লিগে আইপিএল ছাড়া তার অভিজ্ঞতা বলতে কেবল সেই ২০১২ সালে ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে খেলা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, প্রায় ১৫ বছরের ক্যারিয়ারেআন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে তিনি ২০ ওভারের ক্রিকেটে ম্যাচ খেলেছেন কেবল ৭৭টি! ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট না খেলে এই সময়টায় নিজের শরীরকে বিশ্রাম দিয়েছেন তিনি জাতীয় দলের জন্য নিজেকে তৈরি রাখতে। কখনও পরিবারের সঙ্গে একান্তে সময় কাটিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য মানসিকভাবে চনমনে থাকতে। এখন ৩৪ বছর পেরিয়ে তার ভাবনায় যে বদল এসেছে, সেটি তুলে ধরলেন আইপিএল ফাইনাল শেষে সংবাদ সম্মেলনে। “গত ৯ বছরে আমি অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটকে প্রাধান্য দিয়েছি। নিজের শরীরকে বিশ্রাম দেওয়া, ক্রিকেট ছেড়ে একটু দূরে থেকে স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটানো, এসবের সুযোগ নিজেকে দিয়েছি। গত ৯ বছর ধরে আমার ভাবনাজুড়ে এসবই ছিল।” “সামনে তাকিয়েৃ দেখুন, ক্যারিয়ারের শুরুর চেয়ে এখন আমি বরং শেষেরই বেশি কাছাকাছি আছি। একটি সংস্করণ তাই হয়তো বাদ দিতে পারি। পরের ওয়ানডে বিশ্বকাপের এখনও অনেক দিন বাকি। এই সংস্করণ চালিয়ে যাব কি নাৃ এটা হয়তো ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে আরও বেশি খেলার দুয়ার খুলে দেবে আমার জন্য।” ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে খেলতে চাইলে সবার আগে তো আইপিএলের কথাই আসবে। স্টার্ক অবশ্য নিশ্চিত নন, পরের মৌসুমে খেলতে পারবেন কি না। তবে ফিরে আসতে এবং কলকাতার হয়েই খেলতে নিজের আগ্রহ তিনি জানিয়ে রাখলেন। “এই মৌসুম পুরোপুরি উপভোগ করেছি। দারুণ ছিল সবকিছু। এই টুর্নামেন্টে অসাধারণ সব ক্রিকেটারের সঙ্গে লড়ে বিশ্বকাপের দিকে এগিয়ে যাওয়াও একটি বাড়তি প্রাপ্তি। বিশ্বকাপের আগে এটা দুর্দান্ত ব্যাপার বলা যায়।” “পরের বছরৃ জানি না, সূচি কেমনৃ তবে এবার উপভোগ করেছি। পরের বছরও ফিরতে মুখিয়ে থাকব এবং আশা করি বেগুনি-সোনালিতেই (কলকাতার জার্সি রঙ) আবার আমাকে দেখা যাবে।”
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
