ঢাকা , বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫ , ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
‘অ্যাভেঞ্জার্স: ডুমসডে’তে যোগ দিচ্ছেন আনা কেলসের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে যা বললেন টেলর সুইফট এবার হত্যার হুমকি পেলেন কমল হাসান বিচ্ছেদের গুঞ্জন উড়িয়ে দিলো ঐশ্বরিয়া-অভিষেক জুটি এবার ওটিটিতে মুক্তি পাচ্ছে ‘সাইয়ারা’ মার্শাল আর্ট ভিত্তিক সিনেমা নিয়ে আসছেন রুবেল স্ত্রী ও তার প্রেমিকের বিরুদ্ধে মামলা করবেন হিরো আলম ক্ষোভ প্রকাশ করলেন সুনেরাহ এনসিপি নেতার চাঁদাবাজি দেখো আরও পাঁচ লাখ নিতে পারো কি না উত্তরা-তুরাগে হানিট্র্যাপ আতঙ্ক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও অর্থসংকটে ব্যাহত হৃদরোগের চিকিৎসা ১২০ বারের মতো পেছালো সাগর রুনির তদন্ত প্রতিবেদন ২৬২ যাত্রীসহ রোমে আটকা বিমানের ঢাকাগামী ফ্লাইট বিমান এয়ারলাইন্সে একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটি, বাড়ছে শঙ্কা জুলাই ঘোষণাপত্র প্রত্যাখ্যান করে ৬০ ছাত্রনেতার বিবৃতি ভোট কাকে দেবেন সিদ্ধান্ত নেননি ৪৮ শতাংশ মানুষ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও বস্তিবাসীদের প্রতীকী অনশনে পুলিশের বাধা পরিবহন মালিকদের চাপে নতি স্বীকার সরকারের হাসিনা, জয় ও পুতুলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু প্রাইভেটকারে দুই লাশ : সিসিটিভি ফুটেজ দেখে যা বলছে পুলিশ

জুলাই ঘোষণাপত্র প্রত্যাখ্যান করে ৬০ ছাত্রনেতার বিবৃতি

  • আপলোড সময় : ১২-০৮-২০২৫ ০৬:৫০:০০ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১২-০৮-২০২৫ ০৬:৫০:০০ অপরাহ্ন
জুলাই ঘোষণাপত্র প্রত্যাখ্যান করে ৬০ ছাত্রনেতার বিবৃতি
জুলাই ঘোষণাপত্রকে জনগণের সঙ্গে প্রতারণামূলক ও প্রহসনের উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের ৬০ জন ছাত্রনেতা। গত রোববার রাতে এক যৌথ বিবৃতিতে এই ঘোষণাপত্রকে প্রত্যাখ্যান করে নতুন ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করার দাবি জানান তারা। শ্রেণি-পেশা, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জাতিকে প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম গণপরিষদ নির্বাচন আয়োজন ও প্রকৃত ঘোষণাপত্রের সাথে সংগতি রেখে নতুন গণবান্ধব সংবিধান প্রণয়ণ এবং এসব দাবি বাস্তবায়নে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দানকারী সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা তথা পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, নারীসমাজ, কৃষক-শ্রমিক, পেশাজীবীসহ ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সবাইকে সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্রনেতারা। বিবৃতিতে বলা হয়, হাজারো শহীদ এবং আহত ভাই-বোনের রক্তাক্ত আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে সংঘটিত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ এবং শেখ হাসিনার স্বৈরাচার থেকে মুক্ত করেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জনগণ বিদ্যমান শোষণ-নিপীড়নমূলক পুলিশ, আদালত, আইন, সংবিধান তথা পুরানো ব্যবস্থার কর্তৃত্ব চূড়ান্তভাবে অস্বীকার করে নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এই সর্বাত্মক রূপের মধ্য দিয়ে এটি এই অঞ্চলে ঘটা অন্য সকল গণঅভ্যুত্থানকে ছাড়িয়ে সবচেয়ে অগ্রসর হয়েছে। চব্বিশের জুলাই ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মতো সামরিক শাসনকে মেনে নেয়নি, আবার নব্বইয়ের মতো কেবলমাত্র ব্যক্তি স্বৈরাচারীর অপসারণকেই মূল লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করেনি বরং রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষার মধ্য দিয়ে গণবান্ধব রাষ্ট্র গঠনের বৈপ্লবিক চেতনাকে জাগ্রত করেছে। স্বাভাবিকভাবেই জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুসারে নতুন কল্যাণমূলক, গণবান্ধব রাষ্ট্র তৈরির দায়িত্ব পালনে অগ্রসর ভূমিকায় হাজির হয় গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র-নেতৃবৃন্দ যাদের ডাকে বিশ্বাস স্থাপন করে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এতে বলা হয়, ছাত্র-নেতৃবৃন্দ প্রথমেই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সকল দল, সংগঠনকে সাথে নিয়ে নতুন যাত্রা শুরু করার উদ্দেশ্যে জাতীয় সরকারের প্রস্তাব করে। কিন্তু পুরোনো ব্যবস্থার সুবিধাভোগ করতে উৎসুক রাজনৈতিক দলগুলোর একটি বৃহৎ ও শক্তিশালী অংশ এই প্রস্তাবকে অস্বীকার করে এবং নতুন গণবান্ধব রাষ্ট্র গঠনের জনআকাঙ্ক্ষা থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে। এমতাবস্থায় নির্দলীয় এনজিও সমর্থিত অ্যাক্টিভিস্ট, বিশেষজ্ঞ ও সুশীল পরিসরের নেতৃত্বকে নিয়ে ছাত্র নেতৃত্ব অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়াতেই দুটি প্রতিবিপ্লবী ঘটনা ঘটে যায়। প্রথমত, পুরোনো শোষণ-নিপীড়নমূলক সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র গণঅভ্যুত্থানকে সমর্থনের অভিনয় করে আলোচনার টেবিলে নিজেদের জায়গা করে নেয় এবং নিজেদের এজেন্ডা অনুসারে সরকার গঠন প্রভাবিত করে। দ্বিতীয়ত, সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের প্রতারণামূলক ছলনা এবং সুশীল নেতৃবৃন্দের আপোষকামিতা ও সাহসের অভাবে প্রভাবিত হয়ে ছাত্র নেতৃত্ব পুরোনো সংবিধান, পুলিশ, আদালতসহ বিদ্যমান শোষণ-নিপীড়নমূলক কাঠামোকে মেনে নিয়েই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে। ফলশ্রুতিতে প্রথমেই গণঅভ্যুত্থানে প্রকাশিত গণআকাঙ্ক্ষা বাধাগ্রস্ত হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, খুব দ্রুতই এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে পুরোনো আমলাতন্ত্র, লুটেরা অলিগার্ক এবং দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদদের স্যাবোটাজ, এবং আপোষকামী-ভীতু সরকারের দুর্বলতার ফলে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের জীবনে কোনো বাস্তবিক পরিবর্তন আসছে না। তখনই ছাত্র নেতৃত্বের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ এবং নতুন সংবিধানের দাবি জনগণের সামনে হাজির হয় এবং এই দাবি আদায়ে জনগণকে সংগঠিত করার কাজও শুরু হয়। এরই প্রতিক্রিয়ায় পুরোনো ব্যবস্থার অংশীদারেরা (আমলাতন্ত্র, অলিগার্ক ইত্যাদি) জনগণের সামনে ছাত্র নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতা ধ্বংস করে নতুন গণবান্ধব, জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনকে স্থিমিত করে দেওয়ার কৌশল অবলম্বন করে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই কাজে পুরোনো ব্যবস্থার অংশীদারেরা দুটি পদক্ষেপ গ্রহণ করে। প্রথমত, ছাত্র নেতৃত্বকে লোভ দেখিয়ে, আকৃষ্ট করে তারা দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও অপরাধে ছাত্রদের সংশ্লিষ্ট করার চেষ্টা করে বা এসব কাজ করার সকল রাস্তা তারা খোলা রাখে। অসংখ্য ছাত্র এইসব প্রলোভনকে অগ্রাহ্য করে দৃঢ?তার সাথে নিজেদের নৈতিক অবস্থান ধরে রাখলেও কেউ কেউ এই ফাঁদে পা দেয় এবং নিজেদের নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে লুটেরা ব্যবস্থার অংশীদার হয়। দ্বিতীয়ত, সত্য হোক বা না হোক পুরোনো গণবিরোধী মিডিয়াগুলো ব্যবহার করে ছাত্র নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচার ক্রমাগত চালিয়ে যাওয়া হয়। ফলশ্রুতিতে ছাত্র নেতৃত্বের সাথে জনগণের সম্পর্ক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উপরন্তু, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, কৃষক-শ্রমিক, বেকার যুবক ও পেশাজীবীসহ গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া নানা বর্গের মানুষদের ক্ষমতায়িত করতে ব্যর্থ হওয়ায় ছাত্র নেতৃত্ব ক্রমেই সংকুচিত হয়ে ওঠে। এই সকল কারণে নতুন সংবিধান ও গণবান্ধব রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। তবুও পুরোনো ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনগণের ন্যায্য ক্ষোভ নানা উপায়ে প্রকাশিত হতে থাকে। এই ক্ষোভ থেকেই গণআকাঙ্ক্ষার স্বরূপ হিসেবে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ণের দাবি শক্তিশালী হতে থাকে। জুলাই ঘোষণাপত্রে জনগণের সত্যিকার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করা এবং এই ঘোষণা অনুসারেই নতুন রাষ্ট্র নির্মাণ করা নতুন কর্তব্য হিসেবে হাজির হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, পুরোনো আমলাতন্ত্র, লুটেরা অলিগার্ক ও দুর্নীতিবাজ পুরোনো রাজনীতিবিদেরা এই ঘোষণাপত্র এবং জনগণের রাষ্ট্র গঠন ঠেকাতে সক্রিয় হয় এবং তাদের চাপেই গত ৩১ ডিসেম্বর ঘোষণাপত্র পাঠ কর্মসূচি বানচাল হয়ে যায়। পরবর্তীতে জনগণের সাথে প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে পুরোনো ব্যবস্থার এই অংশীদারেরা জুলাই ঘোষণাপত্রের নামে এমন একটি ডকুমেন্ট তৈরির পরিকল্পনা করে যেখানে জনআকাঙ্ক্ষার বদলে লেখা থাকবে ভাসাভাসা কিছু স্বীকৃতি ও প্রতিশ্রুতি এবং যেটা পুরোনো ব্যবস্থার প্রতি কোনো হুমকি তৈরি করবে না। বিবৃতিতে দাবি করা হয়, গত ৫ আগস্ট এই ঘটনাটিই ঘটেছে অর্থাৎ পুরোনো শোষণমূলক আমলাতন্ত্র, লুটেরা শক্তি ও পুরোনো দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের সমর্থনে একটি প্রতারণামূলক ও অর্থহীন ডকুমেন্টকে জুলাই ঘোষণাপত্র নামে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছাত্রনেতারা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, হাজারো শহীদ ও আহত গাজী ভাই-বোনদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে পারে না। তাদের অপরিসীম সাহস ও দেশপ্রেমকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে আমরা সত্যিকার গণবান্ধব ও জনকল্যাণমূলক বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের সংগ্রাম যেকোনো মূল্যে চলমান রাখবো। 
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স